Ajker Patrika

মুড়ি তৈরি করে সংসার চলে সাতক্ষীরার গাভা গ্রামের শতাধিক পরিবারের

আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯: ৫২
মুড়ি তৈরি করে সংসার চলে সাতক্ষীরার গাভা গ্রামের শতাধিক পরিবারের

সাতক্ষীরা সদরের উত্তর গাভা গ্রামের শতাধিক পরিবার নিজেদের হাতে তৈরি মুড়ি বিক্রি করে সংসার চালায়। যুগ যুগ ধরে এ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও বর্তমানে তাঁদের কেউ কেউ অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। মুড়ির উপকরণ চালসহ অন্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায়, সেই অনুপাতে মুড়ির দাম না পাওয়ায় তাঁদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। এ খাত টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সাতক্ষীরা সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণে গাভা গ্রামটি ফিংড়ি ইউনিয়নে পড়েছে। গ্রামটির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ভোর থেকে শুরু হয় মুড়ি ভাজার কাজ। চলে সকাল ১০টা পর্যন্ত। মুড়ি ভাজার কাজে নারীদের সহযোগিতা করেন পুরুষেরা।

মুড়ি ভাজার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, শুরুতে চুলার আগুনে মাটির পাত্রে বালু গরম করা হয়। তারপর মুড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের চালের সঙ্গে লবণের পানির মিশিয়ে গরম বালুর পাত্রে ঢেলে নাড়াচাড়া করতে হয়। কিছু সময়ের মধ্যে তৈরি হয়ে যায় মুড়ি। এসব মুড়ি প্যাকেট করে সাতক্ষীরার বড় বড় মোকামে পাইকারি বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়া হয়। মুড়ি তৈরি করতে সাধারণত ব্রি-২৮ ও মোটা ধান ব্যবহৃত হয়। তবে ভারত থেকে আনা বিশেষ ধরনের চালের মুড়ি বেশি সুস্বাদু হয়।

মুড়ি তৈরির পর তা বস্তায় ভরছেন দুই ব্যক্তি। ছবি: আজকের পত্রিকাতাঁরা বলেন, চালসহ প্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম বেশি হওয়ায় হাতে ভাজা মুড়িতে লাভ হচ্ছে কম। এ ছাড়া মেশিনে তৈরি মুড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তাঁরা পেরে উঠছেন না। যে কারণে কেউ কেউ অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।

গাভা গ্রামের রঘুনাথ দাশ বলেন, ‘আমরা জেলা শহরসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতি কেজি ৮২ টাকা পাইকারি দরে মুড়ি বিক্রি করি। খরচ ও শ্রম বাদ দিলে কেজিপ্রতি চার-পাঁচ টাকা লাভ করতে পারি। কিন্তু এতটুকু লাভ আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়।’

ভারতী রানী দাস বলেন, ‘এক বস্তা চালের মুড়ি ভাজতে পুরো দিন লেগে যায়। সেখান থেকে লাভ পাই ২০০ টাকা। তা-ও আবার বাজারে নিয়ে বিক্রির পর। এই ২০০ টাকা লাভ দিয়ে একটি পরিবারের কিছুই হয় না।’

বিভু দাস বলেন, ‘মেশিনে ভাজা মুড়ির উৎপাদন খরচ কম। সে কারণে তারা বেশ কম দামে মুড়ি বিক্রি করতে পারে। কিন্তু আমাদের কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই।’

মুড়ি তৈরিতে ব্যস্ত গাভা গ্রামের দুই নারী। ছবি: আজকের পত্রিকানিমাই দাস বলেন, ‘একসময় গ্রামের সবাই মুড়ি ব্যবসায় জড়িত ছিল। বাবা-দাদাদের আমল থেকে এভাবে চলে আসছে। কিন্তু এখন অনেকে অন্য পেশায় জড়িয়ে গেছে। কারণ, এ ব্যবসায় আর আগের মতো লাভ হচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে মেশিনে মুড়ি চকচকে করা হয়। তাতে মানুষের স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে। তাই প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাই, যাতে তারা মেশিনে ভাজা মুড়ি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।’

গাভা গ্রামের সুখরঞ্জন দাস বলেন, ‘মুড়ি ব্যবসা করতে গিয়ে বহু ঋণ হয়ে গেছে। কম সুদে ঋণ পেলে খুবই উপকৃত হতাম।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিকের উপব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, গাভা গ্রামে শতাধিক পরিবার হাতে ভাজা মুড়িশিল্পের সঙ্গে জড়িত। তারা মুড়িতে কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করে না, তাদের মুড়ি স্বাস্থ্যসম্মত। চালের দাম যেহেতু বেশি, তাই অনেকে এই ব্যবসা থেকে সরে যাচ্ছে। তবে বিসিক তাদের সহযোগিতা করবে, যাতে তারা টিকে থাকতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত