Ajker Patrika

সেতু নির্মাণে অবহেলা

৩ বছরের কাজ হয়নি ৭ বছরে

  • প্রকল্পের ৮১ দশমিক ২৭ শতাংশ টাকা তুলে দেশের বাইরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক।
  • আশা করছিলাম, গ্রীষ্মের আগে কাজ শেষ হবে। এখন দেখি কাজই বন্ধ: স্থানীয় বাসিন্দা
  • কাজ শেষ হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
  • এক মাসের মধ্যে সেতু চলাচলের জন্য খুলে দিতে পারব: এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা
আপডেট : ১৭ মে ২০২৫, ০৮: ০৩
পর্যটনে গতি আনতে পাটলাই নদের ওপর ২০১৮ সালে এই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। তবে সাত বছরে শেষ হয়নি সেতুর কাজ। সম্প্রতি তাহিরপুরের  ডাম্পের বাজার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
পর্যটনে গতি আনতে পাটলাই নদের ওপর ২০১৮ সালে এই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। তবে সাত বছরে শেষ হয়নি সেতুর কাজ। সম্প্রতি তাহিরপুরের ডাম্পের বাজার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, শহীদ সিরাজ লেক, শিমুলবাগানসহ পর্যটন এলাকায় গতি আনতে ২০১৮ সালে তাহিরপুরের ডাম্পের বাজার এলাকায় পাটলাই নদের ওপর সেতু নির্মাণ শুরু হয়। তিন বছরের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। উল্টো গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সেতু চালু নিয়েই দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী এক মাসের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করে চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হবে। সূত্র বলেছে, কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে ৮১ দশমিক ২৭ শতাংশ টাকা তুলে নিয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সুনামগঞ্জ অফিস সূত্র বলেছে, এলজিইডির আওতাধীন এই সেতুর কাজ পেয়েছিল তমা কনস্ট্রাকশন। চুক্তি অনুযায়ী ৪৩ কোটি ৭৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫৭৯ টাকার ৪৫০ মিটার সেতুর কাজ শেষ করার কথা ২০২১ সালের মধ্যে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে প্রায় চার বছর অতিরিক্ত সময় পার হলেও এখনো শেষ হয়নি কাজ। অবশ্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে ৩৫ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার ৮৯৯ টাকা তুলে নিয়েছে। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে তমা কনস্ট্রাকশনের মালিকপক্ষেরও খোঁজ নেই।

সরেজমিন দেখা গেছে, এক বছর ধরে সেতুর মূল অংশে কাজ শেষ হয়েছে। এখন সেতুর দুই পাশে অ্যাপ্রোচ সড়ক, কার্পেটিং, লাইটিংয়ের কাজ আটকে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে স্থানীয়দের ভোগান্তি বাড়ছে।

গোলকপুরের বাসিন্দা মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘অনেক আগেই সেতুর কাজ করার সময়সীমা শেষ হয়েছে। এখনো পুরোপুরি কাজ শেষ করেনি। সেতুর মূল কাজ শেষ। এখন অ্যাপ্রোচ সড়ক হলেই হয়ে যায়। কিছুদিন আগে মানুষ পারাপার শুরু করেছিল। আবারও অ্যাপ্রোচ সড়ক একদিকে খুঁড়ে রেখে দিয়েছে। অন্যদিকে লোহার আবরণ তৈরি করে বন্ধ করে রেখেছে। এতে কয়েক দিন মানুষ ও পরিবহন চলাচল করলেও এখন বন্ধ রয়েছে।’

লাকমা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল গণি বলেন, ‘কিছুদিন সেতু ব্যবহার করে মানুষ চলাচল করেছে। এতে খেয়া বন্ধ হয়ে যায়। এখন আবারও বন্ধ করে দিয়েছে। খেয়া দিয়ে পার হতে হচ্ছে। এই ভোগান্তি কবে শেষ হবে আমাদের, উপরওয়ালাই জানেন।’

পুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আলিম বলেন, ‘নদীতে পানি এসেছে। খেয়া পেতেও সময় নষ্ট হয়। আমরা আশা করেছিলাম, গ্রীষ্মের আগে কাজ শেষ হবে। এখন দেখি কাজই বন্ধ। বর্ষা মৌসুমের অজুহাত দেখিয়ে এ বছরও কাজ শেষ করবে না তারা।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা থাকলে আরও আগেই কাজ শেষ করা যেত। সেতুর মূল কাজ শেষ। এখন যে কাজ রয়েছে, তা বেশি দিন লাগার কথা নয়। তবু কাজ বন্ধ রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কেন কাজ আটকে রেখেছে, তা জানি না।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের সাইট ম্যানেজার মিয়া মো. নাসির বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ বিদেশে চলে গেছে। এ জন্য কাজ শেষ করতে সময় লাগছে। আশা করি, কয়েক মাসের মধ্যে পুরোপুরি কাজ শেষ করতে পারব।’

সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘৪৫০ মিটার এই সেতুর মূল কাজ শেষ। এখন সেতুর দুই পাশে অ্যাপ্রোচ সড়কসহ কিছু ছোট ছোট কাজ বাকি রয়েছে। আশা করি, আগামী এক মাসের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করে চলাচলের জন্য খুলে দিতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত