Ajker Patrika

পানি সরবরাহ প্রকল্প

উদ্বোধনের তিন বছরেও মেলেনি একফোঁটা পানি

মো. সায়দুল আলম, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
আপডেট : ১৭ মে ২০২৫, ০৭: ৩২
পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় বসানো পাম্প। ছবি: আজকের পত্রিকা
পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় বসানো পাম্প। ছবি: আজকের পত্রিকা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌরসভায় ৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত একটি পানি সরবরাহ প্রকল্পে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পটি তিন বছর আগে উদ্বোধন করা হলেও আজ পর্যন্ত পৌরবাসীর ঘরে পৌঁছায়নি একফোঁটা পানি। প্রকল্পের কাজ কাগজ-কলমে সম্পন্ন দেখানো হলেও বাস্তবে এর অগ্রগতি ‘শূন্য’। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিল উত্তোলনের পর এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছে।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর তৎকালীন পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট শিবশংকর দাস নবীনগর পৌর পানি সরবরাহ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। বাস্তবায়নকারী সংস্থা ছিল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। ঠিকাদারি কাজ পায় ‘এনপিআইএল-কম্বাইন্ড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন’ ও ‘মেসার্স তানভীর আহমেদ জেভি’ নামের দুটি প্রতিষ্ঠান।

প্রকল্পের আওতায় ১৮ দশমিক ৯ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো, ৩ হাজার ৮৫৫টি হাউস কানেকশন এবং ১২টি স্ট্রিট হাইড্রেন্ট স্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, বসানো হয়েছে মাত্র দুটি নলকূপ—একটি পশ্চিমপাড়া এলাকায়, অন্যটি ভোলাচং বাজারে। অধিকাংশ এলাকায় কোনো পাইপলাইন বসানো হয়নি। যেসব এলাকায় বসানো হয়েছিল, সেগুলোরও বড় অংশ চুরি হয়ে গেছে বা অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পরীক্ষামূলকভাবে কোথাও কোথাও পানি সরবরাহের চেষ্টা করা হলে পাইপ ফেটে যায়, লিক হয় এবং পুরো সিস্টেম ভেঙে পড়ে। এরপর থেকেই প্রকল্পটি নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকায় রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই বিল উত্তোলন করে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। দীর্ঘদিনেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পৌর কর্মচারী জানান, ‘কাজ কাগজে হয়েছে, বাস্তবে নয়। টাকা ভাগ হয়ে গেছে, ওপরে-নিচে সবাই পেয়েছে।’ সাবেক এক কাউন্সিলর বলেন, ‘এটা ছিল

সবচেয়ে বড় কমিশনের প্রজেক্ট। শিবশংকর দাসের ছত্রচ্ছায়ায় সবাই লাভবান হয়েছে।’

প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় রাস্তাঘাট খুঁড়ে পাইপ বসানোর নাম করে বহু এলাকায় রাস্তা ভেঙে ফেলা হয়। পরবর্তী সময়ে সেগুলো আর সংস্কার করা হয়নি। বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী নিজেরা চাঁদা তুলে রাস্তা মেরামত করেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব কাজের বিলও পৌরসভা তুলেছে।

পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তাজুল ইসলাম ও শাহ আলম বলেন, ‘এটা শুধু পানি প্রকল্প নয়, বরং উন্নয়ন বাজেটের ভয়াবহ লুটপাট। আমরা তিন বছর ধরে শুধু নাটক দেখে যাচ্ছি; কিন্তু পানি পাচ্ছি না। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি চাই।’

এদিকে এনপিআইএল-কম্বাইন্ড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের ঠিকাদার নজরুল ইসলাম ও সাবেক মেয়র শিবশংকর দাস এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স তানভীর আহমেদ জেভি’র মালিক সামিম আহমেদ দাবি করে বলেন, ‘তৎকালীন মেয়র আমাদের ১ কোটি ২০ লাখ টাকা আটকে রাখায় কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে পানি মিটার ও সরঞ্জামের ঘাটতি কাটিয়ে আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে।’

জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা এ বিষয়ে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন। তবে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ সারোয়ার বাতেন বলেন, ‘এ কাজটি সম্পূর্ণরূপে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করেছে, পৌরসভা এতে জড়িত নয়। দুর্নীতির অভিযোগও সত্য নয়।’

এ বিষয়ে নবীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক রাজীব চৌধুরী বলেন, ‘এ প্রকল্পটি আমার দায়িত্ব গ্রহণের অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে। আপনাদের মাধ্যমে অবগত হয়েছি। এ বিষয়ে গভীরে ঢুকে অচিরেই এ সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব। কোনো অনিয়ম খুঁজে পেলে ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত