Ajker Patrika

ঢাকায় রূপালী ব্যাংকে ডাকাতির চেষ্টা: রুদ্ধশ্বাস অভিযানে মিলল খেলনা পিস্তল ও চাকু

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি
রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় ডাকাতির ঘটনার খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ব্যাংকটি ঘিরে ফেলেন। গতকাল রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার চুনকুটিয়া পাকাপুল এলাকায়। ছবি: মেহেদী হাসান
রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় ডাকাতির ঘটনার খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ব্যাংকটি ঘিরে ফেলেন। গতকাল রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার চুনকুটিয়া পাকাপুল এলাকায়। ছবি: মেহেদী হাসান

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া পাকাপুল এলাকায় রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢুকে পড়া তিন ডাকাত সন্ধ্যায় আত্মসমর্পণ করেছে। রুদ্ধশ্বাস চার ঘণ্টা পর মুক্তি পেয়েছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাধারণ গ্রাহকসহ ১৫ জন। তাঁরা সবাই নিরাপদে রয়েছেন। ডাকাতদের কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা, চারটি খেলনা পিস্তল ও দুটি চাকু উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গ্রেপ্তার ডাকাতেরা বয়সে কিশোর ও তরুণ। তাদের আত্মসমর্পণের পর ব্যাংকটির কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভেতরে প্রবেশ করেন। ব্যাংকের সব আমানত নিরাপদ রয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আগামী রোববার থেকে ব্যাংকটির স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে।

রূপালী ব্যাংক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় সূত্র বলেছে, গতকাল বেলা দুইটার দিকে ডাকাত দল গ্রাহক সেজে ব্যাংকটিতে ঢুকে পড়ে। খবর পেয়ে স্থানীয়রা মসজিদের মাইকে ব্যাংকে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা দেন। আশপাশের মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে ব্যাংকটি ঘিরে ফেলেন। এরপর সেখানে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও অবস্থান নেন। মাইকে বারবার ডাকাতদের আত্মসমর্পণের অনুরোধ জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাড়ে ৫টার দিকে তিনজন আত্মসমর্পণ করে। এরপর র‍্যাবের গাড়িতে করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একটি মামলা করেছে। ওই মামলায় আত্মসমর্পণ করা তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

ডাকাতদের গ্রেপ্তারের পর ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আহম্মদ মুঈদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চুনকুটিয়া এলাকায় রূপালী ব্যাংকে ডাকাত ঢুকলে স্থানীয়রা জড়ো হয়ে ব্যাংকের বাইরে তালা ঝুলিয়ে দেন। খবর পেয়ে পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যান। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তিনজন আত্মসমর্পণ করে। তাদের মধ্যে দুজনের বয়স ১৬ বছর করে। তৃতীয়জনের নাম নীরব, তাঁর বয়স ২২ বছর। তাদের কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা, চারটি খেলনা পিস্তল ও দুটি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এসপি বলেন, তারা জানিয়েছে, কিডনি রোগে আক্রান্ত এক স্বজনের টাকার জন্য ডাকাতির চেষ্টা করেছে।

গ্রাহক সেজে ব্যাংকে ঢোকে ডাকাতেরা

গতকাল সন্ধ্যায় ব্যাংকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের জিএম মো. ইসমাইল হোসেন শেখ বলেন, ব্যাংকটিতে গ্রাহক সেজে ডাকাতেরা ঢুকেছিল। এরপর খেলনা পিস্তল ঠেকিয়ে ম্যানেজারকে জিম্মি করে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে তারা। ব্যাংকের টাকাপয়সা এবং জনগণের কোনো আমানতও খোয়া যায়নি। আগামী রোববার থেকে ব্যাংকের এই শাখায় আগের মতো লেনদেন হবে।

রূপালী ব্যাংকের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরও বলেন, ডাকাতেরা হানা দেওয়ার সময় ব্যাংকে ছয়জন গ্রাহক ছিলেন। তাঁরা নিরাপদে আছেন। সে সময় ব্যাংকে ছিলেন সাতজন কর্মকর্তা, একজন অফিস সহকারী ও দুজন ফায়ার গার্ড। ব্যাংকের ভেতরে থাকা সবাই সুস্থ আছেন। ব্যাংকের সব টাকা গুনে দেখা হয়েছে, এক টাকাও খোয়া যায়নি।

রুদ্ধশ্বাস চার ঘণ্টায় যা ঘটল

ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র বলেছে, গতকাল বেলা দুইটার একটু আগে ওই তিনজন রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় ঢোকে। তাদের মুখে মাস্ক ছিল। তারা ঢুকেই অস্ত্র উঁচিয়ে সবাইকে জিম্মি করে। অস্ত্র ঠেকিয়ে ম্যানেজারকেও জিম্মি করা হয়। সবাইকে এক পাশে নিয়ে যাওয়া হয়। ব্যাংকে ঢুকে তারা ভল্টের চাবি চায়। তবে ভল্ট খুলতে পারেনি। কাউন্টারে থাকা টাকা সব নিয়ে নেয় ডাকাত দল। এদিকে ব্যাংকে ডাকাত পড়েছে টের পেয়ে আশপাশের মানুষ দ্রুত জড়ো হয়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়। এরপর শত শত মানুষ মুহূর্তেই ব্যাংকের চারপাশে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেয়। ব্যাংকের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে আসে সেনাবাহিনী, র‍্যাবা ও পুলিশ। র‍্যাব ও পুলিশ দফায় দফায় ডাকাতদের প্রতি মাইকে আত্মসমর্পণের অনুরোধ জানায়। তবে ডাকাতেরা উল্টো টাকা নিয়ে নিরাপদে চলে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাতে থাকে। এভাবে প্রায় চলে কয়েক ঘণ্টা। অবশেষে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তারা আত্মসমর্পণে রাজি হয়। তবে তাদের জনরোষ থেকে বাঁচাতে গিয়ে চ্যালেঞ্জে পড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। র‍্যাবের একটি দল ব্যাংকের প্রধান ফটকে অবস্থান নেয়। ডাকাতদের হাত উঁচিয়ে বেরিয়ে আসতে বলা হয়। এ সময় যৌথ বাহিনী সশস্ত্র অবস্থায় অস্ত্র তাক করে থাকে তাদের দিকে। তারা হাত উঁচিয়ে, মাথা নিচু করে বের হয়। এরপর র‍্যাবের একটি গাড়িতে তাদের দ্রুত তুলে নেওয়া হলে সেটি ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এরপরই যৌথ বাহিনী ব্যাংকের ভেতরে ঢোকে। উদ্ধার করা হয় তিনটি ব্যাগ, চারটি খেলনা পিস্তল ও দুটি চাকু।

সিনেমা দেখে উদ্বুদ্ধ হয় তিনজন

ঢাকা জেলার এসপি আহম্মদ মুঈদ বলেন, গ্রেপ্তার তিনজন দাবি করেছে, তারা কিডনি রোগে আক্রান্ত মৃত্যুপথযাত্রী এক স্বজনকে বাঁচাতে ব্যাংকে ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল। তিনি বলেন, ‘তাদের অপরাধী বলা যায় না। তারা হয়তো মিস গাউডেড। তারা মুভি দেখে অ্যাডভেঞ্চার হিসেবে ডাকাতি করতে আসে বলে মনে হয়েছে। যদিও তারা আমাদের বলেছে, মৃত্যুপথযাত্রী একজন কিডনি রোগীকে বাঁচাতে ব্যাংকে ডাকাতি করতে আসে তারা। তারা যে রোগীর ঠিকানা দিয়েছে, সেটি যাচাই-বাছাই চলছে। আদৌ সত্য কি না, তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।’

তাদের সঙ্গে বাইরে আরও কেউ ছিল কি না জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, তাদের তিনজন ছাড়া বাইরে কেউ ছিল না। তবে তারা পুলিশকে ভয় দেখানোর জন্য বলেছিল, তাদের সঙ্গে আরও লোক আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত