Ajker Patrika

বাল্যবিবাহ: মা হওয়ায় এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হলো না শান্তার

ফিরোজ আহম্মেদ, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)
আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২১, ১৪: ৩৪
বাল্যবিবাহ: মা হওয়ায় এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হলো না শান্তার

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের নুরু মণ্ডলের পাড়ার হোমিও চিকিৎসক শহিদুল ইসলামের মেয়ে শান্তা খাতুন (১৬)। তার স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। কিন্তু বাল্যবিবাহের শিকার হয় সে। তবে প্রবল ইচ্ছাশক্তির কারণে বিয়ের পরেও পড়াশোনা করে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। 

তবে শান্তার সেই ইচ্ছে পূরণ হলো না। গোয়ালন্দ আইডিয়াল হাইস্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দুটি পরীক্ষায় অংশ নিলেও গত সোমবার সে এক সন্তানের জন্ম দেওয়ায় মঙ্গলবারের (২৪ নভেম্বর) পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। 

বৃহস্পতিবার সকালে শান্তার বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, কিছু বখাটে ছেলের উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে এবং আমার মৃত্যুপথযাত্রী মায়ের ইচ্ছে পূরণ করতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় অসময়ে আমরা শান্তাকে বিয়ে দিই। বিয়ের পরও প্রচণ্ড ইচ্ছেশক্তির জোরে সে পড়ালেখা চালিয়ে যায়। 

এরই মধ্যে শান্তার গর্ভে সন্তান আসে। অনেক কষ্ট করে সে গত ১৫ ও ২১ নভেম্বরের ইতিহাস ও ভূগোল  পরীক্ষায় অংশ নেয়। এরপর ২২ নভেম্বর সোমবার বিকেলে শান্তা একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেয়। এতে প্রচণ্ড শারীরিক দুর্বলতার কারণে ২৩ নভেম্বর মঙ্গলবার শেষ পরীক্ষা 'পৌরনীতি ও নাগরিকতা' বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। 

এ সময় শান্তা খাতুন বলে, `আমার খুব ইচ্ছে ছিল পড়ালেখা করার। এসএসসি পাস করে কলেজে পড়ার। কিন্তু তা আর হলো না। খুব ইচ্ছে ছিল শেষ পরীক্ষায়ও অংশ নেওয়ার। কিন্তু শারীরিক দুর্বলতা ও পরিবারের লোকজনের বাধায় তা আর হলো না। তবে চেষ্টা করব আগামীবার আবারও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার। কিন্তু পারব কি না, জানি না। আপাতত আমার মেয়েই আমার সব। ওকে ঘিরেই আমার সব স্বপ্ন।' 

গোয়ালন্দ উপজেলার এসএসসির কেন্দ্রসচিব মুহম্মদ সহিদুল ইসলাম বলেন, 'এ বছর গোয়ালন্দ উপজেলা থেকে ১ হাজার ১৪৫ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এ ছাড়া ফরম পূরণ করার পরেও ১৮ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। আমার ধারণা, এদের প্রায় সবাই শান্তার মতো বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে যা খুবই দুঃখজনক বিষয়।' 

গোয়ালন্দ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'কক্ষ  পরিদর্শন করতে গিয়ে জানতে পারি বাচ্চা জন্ম নেওয়ায় শান্তা নামের ওই পরীক্ষার্থী শেষ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা চেষ্টা করছি বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে। কিন্তু নানা কারণে তা পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।' 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত