Ajker Patrika

বট-পাকুড়ের বিস্তৃত সংসার

নাঈম ইসলাম, ধামরাই (ঢাকা)
বট-পাকুড়ের বিস্তৃত সংসার

ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে হাজার বছর কাটিয়ে দিতে কে না চায়! কিন্তু সময়ের স্বাভাবিক নিয়মে তা আর হয়ে ওঠে না। তাই অনেকেই মৃত্যুর পরও থাকতে চায় একসঙ্গে। গাছেরও কি এমন কোনো চাওয়া থাকতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তর তর্কসাপেক্ষ। তবে হাজার বছর কাটাতে না পারলেও বেঁচে থেকেই ৫০০ বছর কাটিয়ে দিয়েছে এক বট-পাকুড় দম্পতি। তাঁদের সেই সংসার দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন শত শত পর্যটক।

ঢাকার ধামরাইয়ের যাদবপুর ইউনিয়নের সাইট্টা গ্রামে পাঁচ বিঘা জমিতে ছড়িয়ে আছে এই বট ও পাকুড়গাছ। প্রায় ৫০০ বছর আগে দেবী দাস বংশের পূর্বপুরুষেরা তাঁদের এ জমির ওপর গাছ দুটি রোপণ করেছিলেন বলে জানা যায়। তৎকালীন সনাতন ধর্মানুসারে বটগাছকে নারী আর পাকুড়গাছকে পুরুষ ধরা হতো। তখন ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ দিয়ে অন্যান্য উপকরণসহ ব্রাহ্মণ দ্বারা বৈদিক মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে বট ও পাকুড়গাছের বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। এ বিয়েতে বহু মানুষের খাবারের আয়োজনও করা হয়েছিল। তাই স্থানীয়রা বৃক্ষ দ্বয়কে স্বামী-স্ত্রী বলে অভিহিত করেন।

প্রথমে এই গ্রামে ৬০টি পরিবারের বাস ছিল। তাই নাম ছিল ষাটটি। পরে ষাটটি থেকে লোকমুখে পরিবর্তন হয়ে নাম হয় ‘সাইট্টা’। বর্তমানে এখানে চার শতাধিক পরিবারের বাস। ৯৯ শতাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ের। গাছ দুটিকে গ্রামের নামের সঙ্গে মিল রেখে অনেকে ‘সাইট্টা বটগাছ’ও বলে থাকেন। বটগাছটির পাশেই রয়েছে পাকুড়গাছ। দুটি গাছ সময়ের আবর্তনে একটির সঙ্গে অপরটির ডালপালা জড়িয়ে বিশালাকার রূপ ধারণ করে পাঁচ বিঘা জমি দখল করে আছে। 

বিস্তৃত বিশালাকৃতির এ জুটি গাছের কাণ্ড, শাখা-প্রশাখায় তৈরি হয়েছে অন্য রকম সৌন্দর্য। যা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন দর্শনার্থীরা। বৈবাহিক সম্পর্ক সুদৃঢ় ও বন্ধন অটুট রাখার আশায় স্থানীয় সনাতন ধর্মের নবদম্পতিরা বিয়েপরবর্তী আচারাদির পর্ব হিসেবে আজও এখানে আসেন। এ ছাড়া অনেক প্রেমিক যুগল এসে গাছের গায়ে তাঁদের নামের প্রথম অক্ষর লিখে রাখেন। তাঁরা মনে করেন এই দম্পতি গাছের গায়ে দুজনের নাম লিখলে তাঁদেরও নিশ্চিত বিয়ে হবে।

লোকমুখে প্রচলিত আছে, বহু আগে একবার এই বট-পাকুড়গাছের নিচ দিয়ে ইটভর্তি একটি ট্রাক যাওয়ার সময় এই গাছের ডালের সঙ্গে আটকে যায়। ওই ট্রাকচালক বটগাছের ডালটি কেটে ট্রাক নিয়ে চলে যান। পরে তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পর স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের পরামর্শে বটগাছের নিচে কয়েক কেজি বাতাসা আর মোমবাতি দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করার পর তিনি সুস্থ হন। এ রকম অনেক অলৌকিক ঘটনা জানা যায় এই বট-পাকুড়গাছ নিয়ে। এরপর থেকে ভয়ে এলাকার আর কেউ ডালপালা কাটেননি। প্রতিবছরই বট ও পাকুড়গাছের নিচে থাকা মন্দিরে পূজা করেন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।

গাছের নিচে বসে থাকা ৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধ নীল কমল জানান, আমরা মুরুব্বিদের কাছ থেকে শুনে আসছি গাছ দুটি স্বামী-স্ত্রী। এদের একেকটি শিকড় এখন একটি গাছের থেকেও মোটা হয়ে গেছে। ধামরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এখানে অবকাঠামোগত উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বঙ্গবন্ধু ও মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বহাল থাকছে

‘তুমি ঘুমাও কীভাবে’, সৌদি যুবরাজকে নিয়ে ট্রাম্পের বিস্ময়

বিদায় বিশ্বের দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট

বিদ্যালয়ে সময় দেন না শিক্ষক, ইউএনওর কাছে অভিযোগ করায় সহকর্মীকে মারধর

কুয়েটে ক্লাস বর্জন নিয়ে শিক্ষক সমিতিতে মতবিরোধ, এক শিক্ষকের পদত্যাগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত