Ajker Patrika

সার নিয়ে উভয়সংকটে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সার নিয়ে উভয়সংকটে সরকার

সার নিয়ে উভয়সংকটে পড়েছে সরকার। কৃষকের কথা মাথায় রেখে সরকার সারের দাম বাড়াতে চায় না। তবে আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ করে বড় অঙ্কের ভর্তুকি অব্যাহত রাখাও কঠিন। এ জন্য ভর্তুকির পরিমাণ কমানো বা সারের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। 

আজ সোমবার সচিবালয়ে সারের মজুত, দাম, ভর্তুকিসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন কৃষিমন্ত্রী। 

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘সারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সরকার উভয়সংকটে রয়েছে। একদিকে এত ভর্তুকি দিলে অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে, অন্যদিকে সারের দাম বাড়ালে কৃষকের কষ্ট বাড়বে, ফসলের উৎপাদন খরচ বাড়বে, খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। সবদিক বিবেচনা করে আমরা নীতিগতভাবে এখনো সারের দাম না বাড়ানোর পক্ষে। আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ করছি, তবে দাম না কমলে এই বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি অব্যাহত রাখা কঠিন হবে।’ 

প্রয়োজনে সারে ভর্তুকির পরিমাণ কমানো বা সারের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বুদ্ধিজীবী, অর্থনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, মিডিয়া কর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হতে পারে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। 

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সারের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমরা যেকোনোভাবে ভর্তুকি দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা উদারভাবে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের উদ্দেশ্য দাম বাড়ানো না, কমিয়ে আনা। কিন্তু পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে চিন্তা করতে হচ্ছে।’ 

করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় জাহাজ ভাড়া দুই গুণের বেশি বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রতি কেজি সারের আমদানি ব্যয় ছিল ইউরিয়া ৩২ টাকা, টিএসপি ৩৩ টাকা, এমওপি ২৩ টাকা, ডিএপি ৩৭ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই ব্যয় বেড়ে ইউরিয়ায় ৯৬ টাকা, টিএসপিতে ৭০ টাকা, এমওপিতে ৫৪ টাকা এবং ডিএপিতে ৯৩ টাকা হয়েছে। কৃষকদের প্রতি কেজি ইউরিয়া ১৬ টাকায়, টিএসপি ২২ টাকায়, এমওপি ১৫ টাকায় এবং ডিএপি ১৬ টাকায় দেওয়া হচ্ছে।’ 

কৃষিমন্ত্রী জানান, সরকার প্রতি কেজি ইউরিয়ায় ৮২ টাকা, টিএসপিতে ৫০ টাকা, এমওপিতে ৪১ টাকা এবং ডিএপিতে ৭৯ টাকা করে ভর্তুকি দিচ্ছে। এ বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি দিতে চলতি অর্থবছরে ২৮ হাজার কোটি টাকা লাগবে। ২০২০-২১ অর্থবছরে সারে ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল। 

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও এত ভর্তুকি দেওয়ার উদাহরণ নেই। বছরে ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে আরেকটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। ভর্তুকি কমাতে বিশ্ব ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার চাপও রয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক সংস্থার আপত্তি উপেক্ষা করে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সারের দাম তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেলেও সরকার সারের দাম বাড়ায়নি। অব্যাহতভাবে ভর্তুকি দিয়ে সুলভমূল্যে সার সরবরাহের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনের ধারা বজায় রেখেছে।’ 

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সাল থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত সার, সেচসহ কৃষি উপকরণে মোট ৮৮ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। 

সারের চাহিদা ও মজুত পরিস্থিতি তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১-২২ অর্থ বছরে ৫৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন রাসায়নিক সারের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া ২৬ লাখ টন, টিএসপি সাড়ে ৭ লাখ টন, এমওপি সাড়ে ৭ লাখ টন এবং ডিএপি সাড়ে ১৬ লাখ টন। চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে দেশে সব ধরনের সারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রামে নারীকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া ‘শিবিরের লোক’ আকাশ চৌধুরীকে ধরছে না পুলিশ

প্রফেসর আনোয়ারা আ.লীগের লোক হলে এত অপমান নিয়ে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হত না: ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময়

আলিপুরদুয়ার থেকে মোদির ‘মিশন বেঙ্গল’, নজর বাংলাদেশে

বৈষম্যবিরোধীদের মিছিল থেকে জি এম কাদেরের বাড়ি ভাঙচুর, মোটরসাইকেলে আগুন

পরিচালক পদ বাতিল, বিসিবি সভাপতির পদ থেকে ফারুককে অপসারণ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত