Ajker Patrika

এএসপি পলাশ সাহার জন্য কাঁদছেন ভাই-বোন-স্বজনেরা

কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি  
আপডেট : ০৮ মে ২০২৫, ২০: ৪৬
র‍্যাব কর্মকর্তা (এএসপি) পলাশ সাহার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌছালে স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা
র‍্যাব কর্মকর্তা (এএসপি) পলাশ সাহার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌছালে স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামে নিজ কার্যালয় থেকে গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার হওয়া র‍্যাব কর্মকর্তা (এএসপি) পলাশ সাহার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় র‍্যাব-৬-এর কমান্ডিং কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে লাশবাহী ফ্রিজারে করে পলাশ সাহার মরদেহ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তাড়াশীতে পৌঁছায়। শেষবারের মতো তাঁকে দেখতে সহপাঠী, প্রতিবেশী ও স্বজনেরা ওই বাড়িতে ভিড় করেন। স্বজনদের কান্না ও আহাজারিতে শোকাবহ হয়ে ওঠে সাহা বাড়ির পরিবেশ।

গোপালগঞ্জ-পয়সারহাট সড়কে কোটালীপাড়ার তাড়াশী বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ পাশে পলাশ সাহাদের বাড়ি। আধা পাকা ঘরের সামনে বসে আর্তনাদের সঙ্গে স্মৃতিচারণ করছিলেন বড় বোন রমা সাহা। পাশে মেজ ভাই নন্দলাল সাহা ও বড় ভাই লিটন সাহার স্ত্রী বসে আর্তনাদ করছিলেন।

সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পর শেষকৃত্যের জন্য পলাশ সাহার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পৌরসভার পাড়কোনা মহাশ্মশানে। সেখানে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান এবং ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে দুপুরে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

পলাশের মেজ ভাই নন্দলাল সাহা বলেন, তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে পলাশ ছিলেন সবার ছোট ও আদরের। কোটালীপাড়া থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। সাবরেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দিয়ে চাকরিজীবন শুরু করেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক, ৩৬তম বিসিএস (শিক্ষা ক্যাডার) ও ৩৭তম বিসিএসে (পুলিশ ক্যাডার) সুপারিশপ্রাপ্ত হন। চাকরিজীবনে তিনি পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশে দায়িত্ব পালন করেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর তিনি র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র‍্যাব-৭) দায়িত্ব পালন করেন।

নন্দলাল সাহা জানান, দুই বছর আগে ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন চৌধুরীপাড়ায় সুস্মিতা সাহার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন পলাশ। বিয়ের ৬-৭ মাস পর থেকেই শুরু হয় সংসারের অশান্তি। পলাশ চেয়েছিলেন মা ও স্ত্রীকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে। কিন্তু তাঁর স্ত্রী এটিকে মেনে নিতে পারছিলেন না। মা বাসায় না থাকতে চাইলে পলাশ কষ্ট পেতেন। বাসায় থাকলে স্ত্রী সহ্য করতে পারতেন না। এ নিয়ে ঝামেলা লেগে থাকত।

নন্দলাল বলেন, ‘ভাই চলে গেল, আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেল।’ স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আমি নিজে ৩৬তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলাম। যখন পলাশের একের পর এক চাকরি হচ্ছিল, তখন সিদ্ধান্ত নিলাম আমি চাকরি করব না, উদ্যোক্তা হব। তাই ঢাকা ছেড়ে বাড়িতে চলে আসি। কিন্তু আদরের ছোট ভাই চলে গেল আর সংসারের সবাইকে সাগরে ভাসিয়ে গেল।’

পলাশ সাহার বাল্যবন্ধু ইকবাল হাসান বলেন, ‘পলাশ সাহা আমার বাল্যবন্ধু ছিল। অত্যন্ত মেধাবী ছিল সে। বন্ধুদের সঙ্গে আন্তরিকতা নিয়ে মিশত। তার অকাল মৃত্যু আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, অসহনীয় বাস্তবতা।’

প্রসঙ্গত, গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও র‍্যাব-৭ ক্যাম্পে অভিযানের প্রস্তুতি চলছিল। এ জন্য নিজের কক্ষে যান পলাশ সাহা। এ সময় সহকর্মীরা গুলির শব্দ শুনে ছুটে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান তাঁকে। নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে পলাশ আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করছে র‍্যাব কর্তৃপক্ষ। তাঁর রক্তাক্ত মরদেহের পাশেই পড়ে ছিল একটি চিরকুট। মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করেননি তিনি।

তবে চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের উপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে গেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

‘ফের ধর্ষণচেষ্টার ক্ষোভে’ বাবাকে খুন, ৯৯৯-এ কল দিয়ে আটকের অনুরোধ মেয়ের

আ. লীগের ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের বিএনপির সদস্য হতে বাধা নেই: রিজভী

১৫ স্থাপনায় পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আকাশেই ধ্বংসের দাবি ভারতের

আদালতের বিচারকাজে বাধা দেওয়ায় আইনজীবীর দণ্ড, ক্ষমা চেয়ে পার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত