Ajker Patrika

উত্তরায় থানায় হামলার ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি

 উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি 
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১: ৫২
উত্তরা পূর্ব থানা ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
উত্তরা পূর্ব থানা ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন ছাত্রকে আটককে কেন্দ্র করে উত্তরা পূর্ব ও পশ্চিম থানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি। ডিএমপির উত্তরা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) সাদ্দাম হোসেন আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আজ বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এসি সাদ্দাম হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘থানায় হামলা ও পুলিশকে মারধরের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা বা কোনো কিছুই হয়নি। এ ঘটনায় কেউ আটক বা গ্রেপ্তারও নেই।’

এদিকে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের মুগ্ধ মঞ্চে আজ বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ৫টার দিকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সময় অভিযোগ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তরা পশ্চিম থানার একটি মিটিংয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই আবু সাঈদসহ তাঁর সঙ্গীয় ফোর্সরা ঢুকেই বাজে ব্যবহার শুরু করেন। তারপর তিনজন ছেলে সহযোদ্ধা ও একজন মেয়ে সহযোদ্ধাকে তুলে নিয়ে যায়। মেয়ে সহযোদ্ধাকে নিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন বাজে মন্তব্য করা হয়। থানা নিয়ে গাড়ি থেকে নামানোর পর পুলিশ বলে, ‘আপনাকে মজা করে নিয়ে এসেছি, আপনি চলে যেতে পারেন।’

সংবাদ সম্মেলনে সংবাদ সম্মেলনে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সোয়াত মাহমুদ শাইখ, নাগরিক কমিটির রাফিদ ভূঁইয়া, উত্তরা রেসিডেন্সিয়াল কলেজের সাগর হাওলাদার, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফোরকান আল হোসাইন।

সংবাদ সম্মেলনে সোয়াত মাহমুদ শাইখ বলেন, ‘আটকের খবর পেয়ে থানায় জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। তখন এসআই আবু সাঈদ এমনটাও বলেছেন, ওসি হাফিজ নাকি শিক্ষার্থীদের দড়ি বেঁধে হাতকড়া পড়িয়ে আনার জন্য আদেশ দিয়েছিল। অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো ধরনের ওয়ারেন্ট ছাড়া এভাবে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি গ্রেপ্তার আমাদের কাছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হয় এবং এর পেছনে কোনো স্বার্থান্বেষী গ্রুপের সম্পৃক্ততা আছে বলে মনে করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বারবার অভিযোগের কপি পুলিশের কাছে চাওয়ার পরও পাইনি, সন্ধ্যা নাগাদ অনেক শিক্ষার্থীদের জনসমাগম হলে শেষ পর্যন্ত তারা অভিযোগের কপি আমাদের হাতে হস্তান্তর করে। আমরা দেখতে পাই, সামিউল হক, কাজি যুবায়ের, বাঁধন ও আজাদ নামের চারজন স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র। উত্তরায় আন্দোলনের প্ল্যানিং থেকে শুরু করে আন্দোলন পরবর্তী এক্টিভিটিতে যারা সক্রিয় ছিল তাদের নামে বিভিন্ন অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’

সোয়াত মাহমুদ বলেন, ‘৫ আগস্ট পরবর্তী সময় দেশের বৃহৎ ইস্যুতে সব সময় সোচ্চার ছিল উত্তরার সাধারণ ছাত্রজনতা, বিশেষ করে ভারতবিরোধী, লীগবিরোধী সব ইস্যুতে একতাবদ্ধ অবস্থানে ছিল উত্তরা। প্রথম থেকেই এই গ্রুপটি উত্তরাকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু দিন শেষে উত্তরার অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাঁদের প্রত্যাখ্যান করলে তারা নিজেরা আলাদা কোরাম করার চেষ্টা করে, বারবার সেন্ট্রালে দেন দরবার করে নিজেদের কোরামকে উত্তরায় এস্টাবলিশড করতে চায় এবং তাদের সঙ্গে সকল অছাত্রদের সংযুক্তি থাকায় বারবার তারা প্রত্যাখ্যাত হয়ে আসে এবং দিন শেষে উপায়ন্তর না দেখে তারা বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে থানায়।’

তিনি বলেন, ‘যখন আমরা সকলে মিলে আমাদের কমন শত্রু খুনি লীগ ও তাঁর দোসরদের মোকাবিলায় ব্যস্ত। তখন বিভিন্ন দল এবং ব্যক্তি আমাদের একতাবদ্ধ অবস্থানকে ভেঙে ফায়দা লুটতে চাচ্ছে। আর এতে করে সুবিধা পাবে আওয়ামী লীগ। আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ বা ছাত্রবিরোধী কোনো শক্তির সঙ্গে আঁতাত করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভেদ তৈরির চেষ্টা চালিয়েছে এই চক্রটি। তাই আমরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সাধারণ শিক্ষার্থী জনতাকে আহ্বান করব।’

সংবাদ সম্মেলনে তিন দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হল—প্রথমত, মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করার জন্য অভিযোগ দায়েরকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় আমরা আলোচনা মোতাবেক মানহানির মামলা করার পরিকল্পনা করব। দ্বিতীয়ত, প্রশাসনের বাজে ব্যবহারের দায় স্বীকার করে ক্ষমা প্রকাশ করতে হবে। তৃতীয়, যেকোনো শিক্ষার্থী বা সাধারণ নাগরিক গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।

এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের গাউসুল আজম অ্যাভিনিউ সড়কে একটি মিটিংয়ের আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। মিটিং চলাকালে উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু সাঈদের নেতৃত্বে একটি টিম সেখানে থাকা আকাশ, রবিন ও বাপ্পি নামের তিন ছাত্রকে আটক করে। পরে তাঁদের উত্তরা পূর্ব থানায় নিয়ে যায়।

ছাত্রদের আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তরায় বসবাসরত অন্য ছাত্ররা এসে তাদের ছাড়িয়ে নিতে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। একপর্যায়ে তারা মহাসড়ক অবরোধ এবং উত্তরা পশ্চিম থানায় হামলা চালিয়ে পুলিশকে মারধর করে। এতে উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মহাদেব আহত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত