Ajker Patrika

নোয়াখালীর পোলট্রি ব্যবসা

লোডশেডিং, গরমে মরছে মুরগি

  • জেলার ৯ উপজেলায় ৬ জুন থেকে শুরু হয় অসহনীয় লোডশেডিং।
  • প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে।
  • গরমে মুরগিগুলো হিট স্ট্রোক করে মারা যায়।
মিজানুর রহমান রিয়াদ, নোয়াখালী
নোয়াখালীতে হিট স্ট্রোকে মারা যাওয়া মুরগি পুঁতে ফেলা হচ্ছে। সম্প্রতি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নে। ছবি: আজকের পত্রিকা
নোয়াখালীতে হিট স্ট্রোকে মারা যাওয়া মুরগি পুঁতে ফেলা হচ্ছে। সম্প্রতি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীতে প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে চলছে অসহনীয় লোডশেডিং। এতে করে বিপাকে পড়েছেন জেলার মুরগি খামারিরা। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন খামারে কয়েক হাজার মুরগি মারা গেছে। এ ছাড়া ডিম উৎপাদনেও গরমের প্রভাব পড়েছে। ফলে খামারিদের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি মুরগির মাংস ও ডিমের সরবরাহ কমে গিয়ে দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাপপ্রবাহের কারণে নোয়াখালীতে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। এর মধ্যে জেলার ৯ উপজেলায় ৬ জুন থেকে শুরু হয় অসহনীয় লোডশেডিং। প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। কখনো কখনো টানা ৬-৭ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এর মধ্যে বৃষ্টি বা ঝোড়ো বাতাস হলে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের নিহা পোলট্রি খামারের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ নূর উদ্দিন জানান, ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে তাঁর মুরগির ১০টি শেড রয়েছে। ৬ জুন থেকে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে প্রচণ্ড গরমে তাঁর শেডে থাকা বিক্রয় উপযোগী ২ হাজার ৫৩০টি ব্রয়লার মুরগি ও ২ হাজার ১২টি ডিম দেওয়া লেয়ার মুরগি মারা গেছে। মরা মুরগিগুলো তাঁরা মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন।

নূর উদ্দিন বলেন, ‘ঈদের আগের দিন থেকে পরের তিন-চার দিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিন-চার ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ ছিল না। গত কয়েক দিন লোডশেডিং একটু কমলেও আজ (গতকাল শুক্রবার) আবারও লোডশেডিং অতিমাত্রায় বেড়েছে। সকাল ৭টা দিকে বিদ্যুৎ যাওয়ার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আসে। ২০-২৫ মিনিট থাকার পর পুনরায় চলে গিয়ে বেলা ৩টা পর্যন্তও আসেনি। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার কথা বললেও লোডশেডিং কমেনি। গত এক সপ্তাহে আমার খাবারে অন্তত ১০ লাখ টাকার মুরগি মারা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি সহযোগিতা তো দূরের কথা, কোনো প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা খবরও নেননি।’

আলমগীর হোসেন নামের আরেক খামারি বলেন, ‘বিদ্যুতের এমন ভয়াবহ অবস্থায় আমরা কখনো পড়িনি। মুরগির খামারগুলোয় গরমের সময় ফ্যান চালিয়ে রাখতে হয়, কিছুক্ষণ পরপর শেড পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হয়, যাতে করে পরিবেশ ঠান্ডা থাকে। শেড ঠান্ডা না হলে গরমে মুরগিগুলো হাঁসফাঁস করে এবং হিট স্ট্রোক করে মারা যায়। বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্যান চালু ও মোটর দিয়ে পানি দিতে না পারায় গত কয়েক দিনে আমার ১ হাজার ৬০০ ব্রয়লার মুরগি মারা যায়। এতে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত গরমের ফলে মুরগির ডিমের আকার ছোট হয়ে গেছে; যার ফলে বাজারে ভালো মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমাদের পক্ষে খামার চালিয়ে মুরগি বা ডিম উৎপাদন করা সম্ভব হবে না; যা দেশের অর্থনীতির জন্য হুমকি হয়ে যাবে।’

বাবুল পোলট্রির পরিচালক মো. বাবুল বলেন, ‘কয়েক মাস আগে রোগে আমার কিছু মুরগির ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ না থাকায় অতিরিক্ত গরমে প্রায় ১ হাজার ২০০ মুরগি মারা গেছে। প্রতিদিন ১৫-২০টি মুরগি হিট স্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। বালতিতে করে পানি দিয়ে শেডগুলো কিছুক্ষণ পরপর ভিজিয়ে তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি, কিন্তু এটা সারা দিন করা সম্ভব না। এসব বিষয়ে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কোনো পরামর্শ পাচ্ছি না। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক

হবে, তা-ও কারও জানা নেই। এমন চলতে থাকলে খামারগুলো মুরগিশূন্য হয়ে যাবে।’

এ নিয়ে কথা হলে নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মোহাম্মদ সরওয়ার জাহান লোডশেডিংয়ের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, জেলায় বর্তমানে তাঁদের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৮ লাখ। তবে লোডশেডিং কবে নাগাদ কমবে বা সরবরাহ স্বাভাবিক হবে, সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দোহাই দিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে জেলার খামারগুলোতে মুরগির ক্ষতি হচ্ছে। তবে খামারিদের পক্ষ থেকে আমাদের বিষয়টি অবগত করা হয়নি; যার ফলে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা বলা যাচ্ছে না। উপজেলা কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে খবর নিতে বলা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত