Ajker Patrika

দ্বন্দ্ব-সংঘাতেই খারাপ ফল

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১: ৫৩
দ্বন্দ্ব-সংঘাতেই খারাপ ফল

কক্সবাজারের চার উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। এমনকি তিন প্রার্থীর জামানতই বাজেয়াপ্ত হতে বসেছে।

ক্ষমতাসীন দলটি বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাঁদের পক্ষ নেওয়া নেতাকর্মীদের নানাভাবে সতর্ক করেছিল। এমনকি দল থেকে বহিষ্কার করেও কোনো ফল পায়নি। নানা চাপের মধ্যেও অধিকাংশ ইউনিয়নে বিদ্রোহীরা দলীয় প্রার্থীর তুলনায় ভালো করেছেন।

আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতারা ইউনিয়ন পরিষদের ফলাফল বিশ্লেষণ করে বলছেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে দলে সুবিধা পাওয়া ও না পাওয়া নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত বেড়েছে। দলের নেতৃত্বের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্যও অনেকে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। অনেক ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়নে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন তাঁরা।

জেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয়তা যাচাই না করে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এতে নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

গত সোমবার জেলায় ১৪ ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ছয়জন জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া এই দলের দুজন বিদ্রোহী জিতেছেন নির্বাচনে। এ ছাড়া নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। ফলাফল স্থগিত থাকা কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নে জাতীয় পার্টির নেতা ও টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন।

ফলাফলে দেখা যায়, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের রাশেদ মোহাম্মদ আলী ও পেকুয়ার টইটং ইউনিয়নে জাহেদুল ইসলাম ছাড়া কোথাও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভালো ব্যবধানে জিততে পারেননি।

এদিকে কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইয়াহিয়া খান প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ই আসেননি। ভোটের ফলাফলে তাঁর অবস্থান ৪ নম্বরে। তিনি পেয়েছেন ৪৯২ ভোট। সে হিসাবে তিনি জামানতই হারাতে বসেছেন। পাশের ইউনিয়ন দক্ষিণ ধুরুংয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজম সিকদারও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকতে পারেননি। তিনি ৪৭৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। জামানত হারাতে বসেছেন এই আওয়ামী লীগ নেতাও। অবশ্য এ উপজেলার দুটি ইউনিয়ন পরিষদে সামান্য ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী কোনোমতে জিতে এসেছেন।

কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর ওই দুই ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবির কারণ হিসেবে বলেন, ‘তাঁরা মাঠের রাজনীতি ও জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।’

একইভাবে মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তফা কামাল হয়েছেন তৃতীয়। এ ইউনিয়নে দলটির মনোনয়ন না পাওয়া দুই বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যেই হয়েছে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। জয়ী হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর কাশেম চৌধুরী।

টেকনাফ সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু ছৈয়দেরও চরম ভরাডুবি হয়েছে। ভোটে তাঁর অবস্থানও তৃতীয়। এ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বিএনপি নেতা ও আত্মস্বীকৃত ইয়াবা কারবারি জিয়াউর রহমান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ জাহান মিয়া দলের মনোনয়ন না পেয়ে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু ছৈয়দ অভিযোগ করেছেন, দলের নেতাকর্মীরা তাঁর পক্ষে কাজ করেননি। এমনকি নেতাদের মোবাইল ফোনে কল দিলে তাও ধরেননি।

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম মনে করেন, অনেক নেতাকর্মী ব্যক্তিস্বার্থে দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেননি। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিষয়টি অনুধাবন করে ভবিষ্যতে দলকে আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত