Ajker Patrika

টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, চাঁদপুরের হাইমচরে ১০০ হেক্টর জমির বরজ ক্ষতিগ্রস্ত

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, চাঁদপুর
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১১: ৪৭
Thumbnail image

টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার প্রায় ১০০ হেক্টর জমির বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দিন-রাত পানি নিষ্কাশন করেও জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই মিলছে না। বরজের পেছনে অনেক টাকা বিনিয়োগ করে ফেলায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পানচাষিরা। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে বরজে জলাবদ্ধতা চোখে পড়ে। সেচ প্রকল্প হওয়ার কারণে খুব দ্রুত সময়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। বৃষ্টি এলে পানি আবার বেড়ে যায়। 

উপজেলার উত্তর আলগী ইউনিয়নের মহজমপুর গ্রামের পানচাষি আবু তাহের জানান, তিনি এ বছর ৪০ শতাংশ জমিতে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করে পানের চাষ করেছেন। গত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় দুটি বরজ। এখন শ্রমিক নিয়ে পানি নিষ্কাশন করেও লাভ হচ্ছে না। বরজের ভবিষ্যৎ কী হবে তাও বলতে পারছেন না। 

একই গ্রামের হেনা আক্তার বলেন, ছয় মাস আগে আড়াই লাখ টাকা ঋণ করে ১০ শতাংশের মধ্যে বরজ করেছেন। পুরো বরজ পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন কী করবেন তাও জানেন না। 

দিন-রাত পানি নিষ্কাশন করেও জলাবদ্ধতার থেকে রেহাই মিলছে না পানচাষিদের। ছবি: আজকের পত্রিকাপানচাষি সফিকুর রহমান বলেন, ‘পান ও সুপারির আবাদ আমাদের উপজেলার ঐতিহ্য। আমার একটা জমিতে পানের বরজ আছে। ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন আমি কী করব জানি না। উপজেলার প্রায় ৭০০ কৃষকের এমন পরিস্থিতি হয়েছে।’

উত্তর আলগী ইউনিয়নের পানচাষি শাহজাহান ও শহীদুল্লাহ ঠাহরদার বলেন, ‘আমরা কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বরজ করেছি। বৃষ্টিতে আমাদের বরজ শেষ। পানের গোড়া পচে গেছে। পানি গেলেও আর পান গাছ বাঁচবে না। কীভাবে ঋণ পরিশোধ করব, বলতে পারছি না। উপজেলা কৃষি অফিস থেকেও কেউ আমাদের খোঁজ নিচ্ছে না।’ 

এদিকে বরজগুলোতে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় অপরিপক্ব পান কেটে ফেলতে হচ্ছে। এসব পান বিক্রির জন্য সাজানো হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও দোকানের সামনে। 

অপরিপক্ব পান কেটে বিক্রির জন্য সাজানো হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও দোকানের সামনে। ছবি: আজকের পত্রিকাআলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের পান ব্যাপারী কাদের গাজী বলেন, ‘পান নির্দিষ্ট সময়ে বড় হলে বিক্রি করেন চাষিরা। কিন্তু দুর্যোগ মুহূর্তে এখন কিছুই করার নেই। বরজ থেকে কেটে কোনো রকম বিক্রির জন্য বিড়া সাজানো হচ্ছে। আর না হয় জমিতে পচবে এসব পান। পান বড় হলে প্রতি বিড়া বিক্রি হতো ৮০ থেকে ১০০ টাকা। সাইজে ছোট হওয়ায় এখন প্রতি বিড়া ৩০ থেকে ৫০ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।’ 

হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাকিল খন্দকার বলেন, ‘উপজেলার ১১৯ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ আছে। অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে প্রায় ১০০ হেক্টর জমির পান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পান চাষের সঙ্গে জড়িত আছেন ১ হাজার ৭২ জন কৃষক। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি এবং ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব। কৃষকদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগ সঠিক নয়। প্রণোদনা এলে এসব কৃষককে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত