Ajker Patrika

সমন্বিত খামারে ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

  • অ্যান্টিবায়োটিক বর্জ্য মাছের শরীরে মিশে পরোক্ষভাবে প্রবেশ করছে মানুষের শরীরে।
  • সরাসরি মল-বর্জ্য মিশে দূষিত হচ্ছে পুকুরের পানি।
  • মারা যাচ্ছে ছোট ছোট জীব ও জলজ প্রাণী।
  • পুকুরে বাড়ছে অ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ।
মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, সুবর্ণচর (নোয়াখালী) 
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরআমানুল্লাহ ইউনিয়নের কাটাবুনিয়া গ্রামে সমন্বিত মৎস্য খামার। ছবি: আজকের পত্রিকা
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরআমানুল্লাহ ইউনিয়নের কাটাবুনিয়া গ্রামে সমন্বিত মৎস্য খামার। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সমন্বিত মৎস্য খামার। মাছ চাষের পাশাপাশি একই স্থানে হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু পালন করে বেশ ভালো লাভ করছেন খামারিরা। তবে অর্থনৈতিক সুবিধার আড়ালে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য এক অদৃশ্য হুমকি হয়ে উঠেছে সমন্বিত এ খামারপদ্ধতি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পুকুরে সরাসরি পোলট্রি খামার, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির মল-বর্জ্য মিশে পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। এসব পানিতে ছোট ছোট জীব ও জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। পোলট্রি বর্জ্য পানির গুণগত মান ও জলজ প্রাণীর খাদ্য শৃঙ্খল নষ্ট হচ্ছে। পুকুরে বাড়ছে অ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ। বিশেষ করে পোলট্রিতে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক বর্জ্যের মাধ্যমে মাছের শরীরে মিশে পরোক্ষভাবে তা মানুষের শরীরেও ঢুকছে। এতে ঝুঁকি বাড়ছে খাদ্য নিরাপত্তায় ও মানবদেহের।

সুবর্ণচরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, লেয়ার ও ব্রয়লার মিলে ৮টি ইউনিয়নে ৭২টি ওয়ার্ডে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মোট খামারের সংখ্যা ৬১টি। কিন্তু প্রাণিসম্পদের পরিসংখ্যানের সঙ্গে বাস্তবতা অনেক ভিন্ন। তথ্যানুযায়ী, উপজেলায় ছোট-বড় ৫ শতাধিক সমন্বিত খামার রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মাত্র ৫ ভাগ পোলট্রি খামার সমন্বিত পদ্ধতির বাইরে আছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান জানান, সমন্বিত খামারের ফলে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ, প্রজনন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি মাছের স্বাদ নষ্ট হচ্ছে। এ ধরনের সমন্বিত পোলট্রি খামারে সব প্রজাতির মাছ চাষ করা সম্ভব নয়। ফলে বেশি উৎপাদনশীল মাছ উৎপাদন করা প্রায় ক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না।

জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘খাবারের সঙ্গে আমরা অজান্তেই বিষ খাচ্ছি। প্রোটিন, আমিষ ও ভিটামিন “এ”-এর জন্য মাছ খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য। সমন্বিত পোলট্রি অথবা গবাদিপশুর খামারে যদি দ্রুত বৃদ্ধিকারক রাসায়নিক ফিড ব্যবহার করে অথবা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে, তাহলে এটা মাছের মাধ্যম হয়ে মানবদেহে আসতে পারে। ফলে ক্যানসার, লিভার সিরোসিস, কিডনি রোগ, গর্ভবতী মায়ের নানা জটিলতা ও শিশু বিকলাঙ্গ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।’

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসটিইউ) পরিবেশ, বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. মুহিনউজ্জামান। তিনি বলেন, ‘সমন্বিত পোলট্রি খামারে পানি স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এতে দূষিত হচ্ছে মাটি ও আশপাশ। দূষিত পানির ফলে ছোট-বড় প্রাণী অসুস্থ হয়ে পড়ছে এবং মারা যাচ্ছে। এ ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে মাছের স্বাভাবিক খাদ্য শৃঙ্খল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে মাছ উৎপাদনে একটা ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া দূষিত পানি কৃষিজমিতে মিশ্রিত হলে কৃষির পরিবেশও বিঘ্নিত হবে।’

সমন্বিত পোলট্রি খামারের সরকারি অনুমোদন রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সুবর্ণচরের ইউএনও রাবেয়া আসফার সায়মা জানান, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে অনিবন্ধিত ও পরিবেশ-প্রকৃতি এবং জনস্বাস্থ্য বিঘ্নিতকারী সমন্বিত পোলট্রি খামারে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত