পাড় দখল করে স্থাপনা ঝুঁকিতে শতকোটির সেতু

বিশাল সেতু। তারই দুই পাশে পাড় দখল করে স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। কেউ নির্মাণ করছে বাড়ি। কেউ কেউ নির্মাণ করছে দোকানপাট। এ ছাড়া মাটি কেটে নিজেদের ইচ্ছামাফিক সীমানা তৈরি করে সেতুর জমি ভোগদখল করছে। স্থাপনা নির্মাণের জন্য কেউ কেউ সেতুর সিসি ব্লকও কেটে ফেলেছে।

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকা পৌর শহরের পাইলিং ঘাটে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম) সেতুর পাড়ের চিত্র এটি। সেখানে চলছে সেতুর পাড়ের জায়গা দখলের মহোৎসব। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হলেও সেতুর পাড়ের জমি দখলে চলছে যেন মিলেমিশে। এতে হুমকির মধ্যে পড়েছে সেতু ও সেতুটির পাড়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসন নির্বিকার থাকায় অধিগ্রহণ করা জমিতে নির্মিত সেতুর পাড় দখল করে প্রভাবশালীরা বহুতল বাড়িসহ দোকানপাট নির্মাণ করছে। সেতুর পাড় দখল করে স্থাপনা নির্মিত হলেও এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। সেতুর দুই পাশের ফুটপাত দখল হওয়ায় পথচারীদের চলাচলে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জমি অধিগ্রহণ করে ইসলামপুর-শেরপুর-বকশীগঞ্জ বহুমুখী সড়কে ফকিরপাড়া পাইলিং ঘাটে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম) সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে চলাচলের জন্য সেতু উন্মুক্ত করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর দুই পাশের পাড় অনেকটা দখল হয়ে গেছে। কোথাও মাটি কেটে সেতুর সিসি ব্লক ঢেকে দখল করা হয়েছে জায়গায়। কোথাও ভারী যন্ত্রে সিসি ব্লক কেটে সেতুর পাড় দখল করা হয়েছে। অনেকে ব্রহ্মপুত্র নদ খননে ব্যবহৃত ভারী যন্ত্রে মাটি কেটে সেতুর পাড় ভরাট করে নিয়েছে। সেতুর পশ্চিম অংশে দক্ষিণ পাশে মাটি কেটে বাড়ি ও দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে। অনেকে নতুন বাড়ি নির্মাণের পাশাপাশি নির্মাণ করে যাচ্ছে দোকানপাটও। ইতিমধ্যে অর্ধশত দোকানঘর তুলে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এই কাজ করা হচ্ছে দিনদুপুরে।

এ দিকে জানতে চাইলে সেতুর পাড়ে স্থাপনা নির্মাণকারী মোরাদ, বেলাল ও দিপু বলেন, ‘নিজস্ব জমিতেই বাড়িঘর তুলেছি। তবে সেতুর পাড় ঘেঁষে ঘর তোলা হয়েছে। প্রয়োজনে ঘর সরিয়ে দেওয়া হবে।’ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গাইবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমান আনছারী বলেন, ‘সেতুসংলগ্ন আমার ক্রয় করা জমিতে বাড়ি নির্মাণ করেছি।’

এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সেতুর অধিগ্রহণ করা জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি অবগত হয়েছি। সেতুর জমি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইউএনও মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘সেতুর জায়গা দখল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি। এলজিইডি থেকে সেতুর পাড়ের সরকারি জমি দখলদারদের উচ্ছেদে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে বিষয়টি আইনানুগভাবে দেখা হবে।’