Ajker Patrika

হাতিয়ায় জোয়ারে মরেছে মাছ, দুর্গন্ধে জনজীবন অতিষ্ঠ

প্রতিনিধি
হাতিয়ায় জোয়ারে মরেছে মাছ, দুর্গন্ধে জনজীবন অতিষ্ঠ

হাতিয়া (নোয়াখালী): রাস্তার পাশের খালের মধ্যে, পরিত্যক্ত ডোবায়, বাড়ির পুকুরে, চাষিদের খামারে ভাসছে মৃত মাছ। এর মধ্যে প্রখর রোদ আর গরমে দ্রুত পচে যাচ্ছে এই মরা মাছ। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপের নয়টি ওয়ার্ডের প্রতিটি গ্রামে এখন এই পরিস্থিতি। পচা মাছের তীব্র কটূগন্ধে অতিষ্ঠ জনজীবন।

দ্বীপটিতে বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারে পানি সহজেই লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে গত বুধ ও বৃহস্পতিবারের অস্বাভাবিক জোয়ারে ভেসে যায় নিঝুমদ্বীপের বহু পুকুর ও খামারের মাছ। জোয়ারের নোনা পানিতে মরে যায় মিঠা পানির সব মাছ।

আজ শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলা ঘাট থেকে নামারবাজার পর্যন্ত প্রধান সড়কের দুপাশে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা অসংখ্য মৃত মাছ পড়ে আছে। পচতে শুরু করেছে এসব মাছ। ওই এলাকার বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। নাকে কাপড় চেপে চলাফেরা করছেন স্থানীয়রা।

বন্দরটিলা বাজারের উত্তর পাশে নিঝুম ড্রিমল্যান্ড রিসোর্টের ম্যানেজার আব্দুল জলিল বলেন, সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রিসোর্টের সামনে একটি পুকুর খনন করা হয়। অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে পুকুরটি। জোয়ারের পানি লবণাক্ত হওয়ায় সব মাছ মরে ভেসে উঠেছে। এখন পচা মাছের দুর্গন্ধে রিসোর্টে থাকা যাচ্ছে না।

একই চিত্র নিঝুম দ্বীপের প্রতিটি গ্রামে। নিঝুম দ্বীপের ২নং ওয়ার্ডে মুক্তিযোদ্ধা বাজারের পাশে চৌধুরী মৎস্য খামারটি এই দ্বীপের সবচেয়ে বড় মৎস্য খামার। আলাপ হয় এই খামারের মালিক এমরান চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি জানান, প্রায় ১৬ একর জায়গায় তাঁর এই খামারটি তৈরি করা হয়েছে। বুধবারের অস্বাভাবিক জোয়ারে ভেসে গেছে পুরো খামারটি। এতে তার প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এখন পচা মাছের দুর্গন্ধ দুর করতে তাকে শ্রমিক নিয়োগ করে মৃত মাছ মাটিতে পুতে ফেলতে হচ্ছে। এই কাজে গত দুদিনে তাকে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। একদিকে ভেসে গেছে খামারের মাছ। অন্যদিকে সেই মাছ পুকুর থেকে শ্রমিক দিয়ে তুলে মাটিতে পুতে ফেলতে হচ্ছে। দুভাবেই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি।

 নিঝুম দ্বীপে ছোট বড় প্রায় ৫০টি মৎস্য খামার রয়েছে। এসব খামারে কেউ মাছের পোনা তৈরি করে বিক্রি করেন। কেউ পোনা চাষ করে বড় মাছ বিক্রি করে থাকেন। অস্বাভাবিক জোয়ারে সব কটি খামার ভেসে গেছে বলে জানান ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দিন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গত বুধবারের অস্বাভাবিক জোয়ারের পর থেকে আজ শনিবার পর্যন্ত সরকারি ভাবে এসব খামারিদের দেখার জন্য কেউ আসেনি। নিঝুম দ্বীপে এই মৎস্য খামারিদের সরকারি ভাবে আর্থিক সহযোগিতা না করা হলে কেউ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। 

এ ব্যাপারে হাতিয়া উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা অনিল চন্দ্র দাস বলেন, নিঝুম দ্বীপে মরা মাছের দুর্গন্ধ ছড়ানোর কথা আমি শুনেছি। মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে জোয়ারে পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য খামারিদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। আগামী দুই–একদিনের মধ্যে একটি তালিকা জেলা অফিসে পাঠানো হবে।

উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে উপজেলার হরনী, চানন্দী, তমরদ্দি, সোনাদিয়া, চরকিং, চরঈশ্বর ও নিঝুম দ্বীপসহ সাতটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এতে হাতিয়ার বেড়িবাঁধের অন্তত ১৩টি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় নিঝুম দ্বীপে। এই ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ড চার থেকে পাঁচ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত