Ajker Patrika

ববিতে ছাত্রলীগ পরিচয়ে পিটিয়ে ভেঙে দিল শিক্ষার্থীর হাত, ৩ দিন পর তদন্ত কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ২১: ২৭
ববিতে ছাত্রলীগ পরিচয়ে পিটিয়ে ভেঙে দিল শিক্ষার্থীর হাত, ৩ দিন পর তদন্ত কমিটি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) বঙ্গবন্ধু হলে মুকুল আহমেদ নামে এক ছাত্রকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ছাত্র। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার তিন দিন পর আজ রোববার সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ববি প্রশাসন। তিন সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ইংরেজি বিভাগের দশম ব্যাচের ছাত্র মুকুল শেবাচিম হাসপাতালে অসহায়ভাবে পড়ে আছেন। চিকিৎসক তাঁকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন। ভয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সাহসও পাচ্ছেন না তিনি। হামলায় জড়িত ইংরেজি বিভাগের অষ্টম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগ পরিচয়ধারী মঞ্জু ও সিহাব ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। 

এর আগে গত ৫ আগস্ট ববির শেরেবাংলা হলে হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা আয়াতুল্লাহ নামে মার্কেটিং বিভাগের এক শিক্ষার্থীর রগ কেটে পঙ্গু করে দিলেও এখন পর্যন্ত বিচার হয়নি। এসব ঘটনায় ববি ক্যাম্পাসে একদিকে ক্ষোভ অপর দিকে আতঙ্ক বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. খোরশেদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্যাতনের শিকার ছাত্র মুকুল লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগে মঞ্জু ও সিহাব নামে দুই ছাত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. ছাদেকুল আরেফিনের নির্দেশে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. নাজমুল কায়েসকে। অপর দুই সদস্য হচ্ছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের  ড. মো. মাহফুজ আলম এবং অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রিফাত ফেরদৌস। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত দুই ছাত্রকে কারণ দর্শানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘মুকুলের সঙ্গে দেখা করে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য নগদ সহায়তা দিয়েছি। সব ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’
 
তবে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি আহত মুকুল আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিনি মেসেঞ্জারে জুনিয়রদের প্রভাবিত করেছেন যে অষ্টম ব্যাচের ছাত্ররা বাড়াবাড়ি করছেন, তাদের ডাকে সাড়া দেওয়া উচিত হবে না কারও। এই ঘটনায় ইংরেজি বিভাগের অষ্টম ব্যাচের তাঞ্জিদ মঞ্জু এবং সিহাব উদ্দিন তাকে তাদের ৪০১৮ নম্বর কক্ষে ডেকে নেয়। সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত আটকে রেখে পাইপ দিয়ে পিটিয়ে বাম হাত ভেঙে ফেলেছে। পিটুনিতে শরীরের বিভিন্ন স্থানেও আঘাত পেয়েছেন।

মুকুল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে, কিন্তু এখন পঙ্গু হতে চলছেন। ডাক্তার তাঁকে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তির কথা বলেছেন। মুকুল বলেন, ‘মামলা করে এখানে কোনো বিচার পাওয়া যাবে না।’ 

সিহাব উদ্দিন ও মঞ্জুকে মোবাইলে ফোন দিলেও তাঁরা রিসিভ করেননি। সম্প্রতি শেরেবাংলা হলে রাতের আঁধারে হামলা করে আয়াত নামে এক ছাত্রের রগ কেটে দেওয়ার নেতৃত্ব দিয়েছেন এই মঞ্জু ও সিহাব। তাঁরা ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু বর্তমানে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই।  

ববি ছাত্র আয়াতের পর মুকুলের ওপর এমন নৃশংস হামলায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, এর আগের ঘটনাগুলোয় প্রশাসন বিচার করলে আজ মুকুল, আয়াতকে পঙ্গু হতে হতো না। এসব ঘটনায় আতঙ্কিত ছাত্ররা। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরব ভূমিকাকেই দায়ী করেছেন। 

এ ব্যাপারে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট আরিফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, যে কক্ষে মুকুলকে নির্যাতন করা হয়েছে, সেটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। তবে আয়াতের ঘটনায় সে মারামারির মধ্যে পড়ে হামলার শিকার হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত