অনলাইন ডেস্ক
চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের পণ্যের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করছে। এই অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ ক্রমশ বাড়ছে। তবে চীন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর শুল্ক চাপিয়েই চীনের প্রতিশোধ নেওয়ায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। বেইজিং এখন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিরল মৃত্তিকা খনিজ ও চুম্বক রপ্তানির রাশ টেনেছে। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র বড় ধাক্কা খেয়েছে।
চীনের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, আমেরিকা এই খনিজগুলির ওপর কতটা নির্ভরশীল। এ সপ্তাহে ট্রাম্প তাঁর বাণিজ্য বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তারা গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলির উৎপাদন বাড়াতে এবং আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে উপায় খুঁজে বের করে। ওয়াশিংটন এই গুরুত্বপূর্ণ শিল্প পুনরুদ্ধার করতে চাইছে। কিন্তু বিরল মৃত্তিকা ঠিক কী কারণে এত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি কীভাবে বাণিজ্য যুদ্ধের মোড় ঘোরাতে পারে?
বিরল মৃত্তিকা খনিজ বা ধাতু হলো—১৭টি রাসায়নিকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ মৌল উপাদান। এগুলো অনেক হাই-টেক পণ্য উৎপাদনের অপরিহার্য উপাদান। এগুলোর বেশির ভাগই প্রকৃতিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। তবে এগুলোকে ‘বিরল’ বলার কারণ হলো—প্রকৃতিতে এগুলোকে বিশুদ্ধ আকারে পাওয়া খুব কঠিন। নিষ্কাশনও বেশ বিপজ্জনক।
আপনি হয়তো এসব বিরল মৃত্তিকা ধাতুগুলোর নাম, যেমন—নিওডিমিয়াম, ইট্রিয়াম এবং ইউরোপিয়ামের সঙ্গে পরিচিত নন, তবে যেসব পণ্যে এগুলো ব্যবহৃত হয় সেগুলোর সঙ্গে অবশ্যই পরিচিত। উদাহরণস্বরূপ, নিওডিমিয়াম শক্তিশালী চুম্বক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই চুম্বক লাউডস্পিকার, কম্পিউটার হার্ডড্রাইভ, ইলেকট্রিক গাড়ির মোটর এবং জেট ইঞ্জিনে ব্যবহার করা হয়। এর ফলে এগুলো ছোট এবং আরও কার্যকর হয়ে উঠে। ইট্রিয়াম ও ইউরোপিয়াম টেলিভিশন ও কম্পিউটারের স্ক্রিন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। কারণ এইগুলো ডিসপ্লের রঙের গুণমান উন্নত করে।
জিঞ্জার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ডিরেক্টর থমাস ক্রুমার ব্যাখ্যা করেছেন, ‘আপনি যা কিছু চালু বা বন্ধ করতে পারেন—সম্ভবত তার সবকিছুই বিরল মৃত্তিকা দিয়ে চলে।’ লেজার সার্জারি ও এমআরআই স্ক্যানের মতো চিকিৎসা প্রযুক্তির উৎপাদনেও বিরল মৃত্তিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া, এগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতেও ব্যবহৃত হয়।
বিরল মৃত্তিকা নিষ্কাশন এবং পরিশোধন অর্থাৎ অন্যান্য খনিজ থেকে সেগুলোকে আলাদা করার প্রক্রিয়ার ওপর চীনের প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে। আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার (আইইএ) অনুমান, বিরল মৃত্তিকা উৎপাদনে চীনের অবদান প্রায় ৬১ শতাংশ এবং পরিশোধন প্রক্রিয়ায় ৯২ শতাংশ।
এর অর্থ হলো—বর্তমানে বিরল মৃত্তিকা ধাতুর সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর চীনের একক আধিপত্য রয়েছে। কোন কোম্পানি বিরল মৃত্তিকা সরবরাহ পাবে আর কারা পাবে না, তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা তাদের হাতেই। এই বিরল মৃত্তিকা ধাতুগুলো নিষ্কাশন এবং পরিশোধন উভয়ই ব্যয়বহুল এবং পরিবেশ দূষণকারী।
বিরল মৃত্তিকা ধাতুর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো—তেজস্ক্রিয়তা। এ কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) অন্যান্য অনেক দেশ এগুলো উৎপাদনে অনিচ্ছুক। ক্রুমার বলেছেন, ‘উৎপাদন থেকে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য অবশ্যই নিরাপদ, নিয়ম মেনে এবং স্থায়ীভাবে নিষ্পত্তি করতে হবে। বর্তমানে ইইউতে সমস্ত নিষ্পত্তি কেন্দ্র অস্থায়ী।’
বিরল মৃত্তিকা ধাতুর সরবরাহ শৃঙ্খলে চীনের আধিপত্য রাতারাতি তৈরি হয়নি। বরং, এটি কয়েক দশকের কৌশলগত সরকারি নীতি এবং বিনিয়োগের ফল। ১৯৯২ সালে ইনার মঙ্গোলিয়া সফরের সময় চীনের অর্থনৈতিক সংস্কারের রূপকার প্রয়াত নেতা দেং জিয়াওপিং বলেছিলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের তেল আছে এবং চীনের আছে বিরল মৃত্তিকা।’
যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিটিক্যাল ম্যাটেরিয়ালস রিসার্চ ফেলো গ্যাভিন হার্পার বলেছেন, ‘বিংশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে চীন বিরল মৃত্তিকা খনন ও প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। প্রায়শই অন্যান্য দেশের তুলনায় কম পরিবেশগত মান এবং শ্রমিকের মজুরির বিনিময়ে এটি করা হয়েছে।’
গ্যাভিন হার্পার বলেন, ‘এর ফলে তারা বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগীদের তুলনায় কম দামে বিক্রি করতে পেরেছে এবং খনন ও পরিশোধন থেকে শুরু করে চুম্বকের মতো তৈরি পণ্য উৎপাদন পর্যন্ত পুরো সরবরাহ শৃঙ্খলে প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি করেছে।’
ওয়াশিংটন আরোপিত শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় চীন এ মাসের শুরুতে সাতটি বিরল মৃত্তিকা খনিজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর বেশির ভাগই ‘ভারী’ বিরল মৃত্তিকা ধাতু নামে পরিচিত, যা প্রতিরক্ষা খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এইগুলো ‘হালকা’ বিরল মৃত্তিকা ধাতুর তুলনায় কম পাওয়া যায় এবং প্রক্রিয়াকরণও কঠিন। তাই এগুলোর দামও বেশি।
চীন সরকার নির্দেশ দিয়েছে, গত ৪ এপ্রিল থেকে সব কোম্পানিকে দেশ থেকে বিরল মৃত্তিকা এবং চুম্বক রপ্তানি করতে হলে বিশেষ রপ্তানি লাইসেন্স নিতে হবে। চীন পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির স্বাক্ষরকারী দেশ হওয়ায় ‘দ্বৈত ব্যবহারযোগ্য পণ্যের’ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তাদের রয়েছে।
থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) মতে, চীনের এই পদক্ষেপ আমেরিকাকে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। কারণ, চীনের বাইরে ভারী বিরল মৃত্তিকা প্রক্রিয়াকরণের কোনো সক্ষমতা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার হিসাব অনুসারে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা বিরল মৃত্তিকা যৌগ এবং ধাতুর ৭০ শতাংশই ছিল চীনের।
এর সরল মানে হলো, নতুন নিষেধাজ্ঞা আমেরিকাকে কঠিন আঘাত হানতে সক্ষম। ভারী বিরল মৃত্তিকা ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার এবং স্থায়ী চুম্বকের মতো অনেক সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। সিএসআইএস—এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এফ-৩৫ জেট, টোম্যাহক ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রিডেটর আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকলের মতো প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি এই খনিজগুলির ওপর নির্ভরশীল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে চীন ‘তাদের গোলাবারুদ উৎপাদন বাড়াচ্ছে এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় পাঁচ থেকে ছয় গুণ দ্রুত গতিতে উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থা ও সরঞ্জাম সংগ্রহ করছে।’ এই বিষয়ে ক্রুমার বলেন, ‘মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পের ওপর এর বড় প্রভাব পড়বে।’
ট্রাম্প তাঁর আরোপিত শুল্কের মাধ্যমে মার্কিন উৎপাদনকে পুনরুজ্জীবিত করার আশা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এই পদক্ষেপ সেই উৎপাদনকেও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। গ্যাভিন হার্পার বলেছেন, ‘প্রতিরক্ষা ও হাই-টেকসহ বিভিন্ন খাতের উৎপাদনকারীরা চালান বন্ধ এবং সীমিত মজুতের কারণে সম্ভাব্য ঘাটতি এবং উৎপাদন বিলম্বের সম্মুখীন হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ বিরল মৃত্তিকা উপাদানের দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর ফলে স্মার্টফোন থেকে শুরু করে সামরিক সরঞ্জাম পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের তাৎক্ষণিক খরচ বাড়বে।’ ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন কোম্পানিগুলোর উৎপাদন গতি কমে যেতে পারে।
যদি চীন থেকে বিরল মৃত্তিকা ধাতুর আমদানি ঘাটতি দীর্ঘমেয়াদি হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত সরবরাহ শৃঙ্খলকে বৈচিত্র্যময় করতে এবং দেশীয় উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা বাড়াতে শুরু করতে পারে। তবে এর জন্য ‘উল্লেখযোগ্য এবং টেকসই বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং চীনের ওপর পূর্বের নির্ভরতার তুলনায় সম্ভবত বেশি সামগ্রিক খরচ’ প্রয়োজন হবে।
এটি স্পষ্ট যে, ট্রাম্পের মনে এরই মধ্যে এই বিষয়টি রয়েছে। এ সপ্তাহে, তিনি গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলোর ওপর আমেরিকার নির্ভরতার কারণে সৃষ্ট জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আদেশে বলা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেন, বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং সেগুলোর উপজাত পণ্যের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা মার্কিন প্রতিরক্ষা সক্ষমতা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। বিরল মৃত্তিকা উপাদানসহ গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলি জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।’
যুক্তরাষ্ট্রে একটি কার্যকর বিরল মৃত্তিকা খনি রয়েছে। তবে ভারী বিরল মৃত্তিকা পৃথক করার সক্ষমতা তাদের নেই এবং প্রক্রিয়াকরণের জন্য তাদের আকরিক চীনে পাঠাতে হয়। এক সময় যুক্তরাষ্ট্রে বিরল মৃত্তিকার চুম্বক উৎপাদনকারী কোম্পানি ছিল। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত আমেরিকা আসলে বিরল মৃত্তিকার বৃহত্তম উৎপাদক ছিল।
কিন্তু চীন যখন উৎপাদন এবং খরচের দিক থেকে আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে, তখন এই কোম্পানিগুলি বাজার থেকে সরে যায়। অনেকের ধারণা, এ কারণেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের সঙ্গে একটি খনিজ চুক্তি স্বাক্ষর করতে এত আগ্রহী। তারা চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে চায়।
ট্রাম্পের নজর অন্য যে জায়গার ওপর রয়েছে তা হলো—গ্রিনল্যান্ড। এখানে বিরল মৃত্তিকা উপাদানের অষ্টম বৃহত্তম মজুত রয়েছে। ট্রাম্প বারবার ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং এর নিয়ন্ত্রণ নিতে অর্থনৈতিক বা সামরিক শক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি।
এগুলো এমন কিছু জায়গা হতে পারত যেখান থেকে আমেরিকা কিছু বিরল মৃত্তিকা আমদানি করতে পারত। তবে ট্রাম্প তাদের সঙ্গে যে বৈরী আচরণ করেছেন, তাতে আমেরিকার খুব কম বিকল্প সরবরাহকারী অবশিষ্ট থাকতে পারে।
গ্যাভিন হার্পার বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দুটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। একদিকে বিরল মৃত্তিকার একচেটিয়া সরবরাহকারী চীনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করেছে। অন্যদিকে, তারা শুল্ক এবং অন্যান্য বৈরী পদক্ষেপের মাধ্যমে অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ দেশকেও শত্রু করে তুলেছে।’ তিনি বলেন, ‘এই নতুন প্রশাসনের অস্থির নীতি পরিবেশে তারা (বন্ধুরা) আমেরিকার সঙ্গে সহযোগিতা করতে এখনো অগ্রাধিকার দেবে কিনা, তা দেখার বিষয়।’
চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের পণ্যের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করছে। এই অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ ক্রমশ বাড়ছে। তবে চীন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর শুল্ক চাপিয়েই চীনের প্রতিশোধ নেওয়ায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। বেইজিং এখন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিরল মৃত্তিকা খনিজ ও চুম্বক রপ্তানির রাশ টেনেছে। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র বড় ধাক্কা খেয়েছে।
চীনের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, আমেরিকা এই খনিজগুলির ওপর কতটা নির্ভরশীল। এ সপ্তাহে ট্রাম্প তাঁর বাণিজ্য বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তারা গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলির উৎপাদন বাড়াতে এবং আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে উপায় খুঁজে বের করে। ওয়াশিংটন এই গুরুত্বপূর্ণ শিল্প পুনরুদ্ধার করতে চাইছে। কিন্তু বিরল মৃত্তিকা ঠিক কী কারণে এত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি কীভাবে বাণিজ্য যুদ্ধের মোড় ঘোরাতে পারে?
বিরল মৃত্তিকা খনিজ বা ধাতু হলো—১৭টি রাসায়নিকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ মৌল উপাদান। এগুলো অনেক হাই-টেক পণ্য উৎপাদনের অপরিহার্য উপাদান। এগুলোর বেশির ভাগই প্রকৃতিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। তবে এগুলোকে ‘বিরল’ বলার কারণ হলো—প্রকৃতিতে এগুলোকে বিশুদ্ধ আকারে পাওয়া খুব কঠিন। নিষ্কাশনও বেশ বিপজ্জনক।
আপনি হয়তো এসব বিরল মৃত্তিকা ধাতুগুলোর নাম, যেমন—নিওডিমিয়াম, ইট্রিয়াম এবং ইউরোপিয়ামের সঙ্গে পরিচিত নন, তবে যেসব পণ্যে এগুলো ব্যবহৃত হয় সেগুলোর সঙ্গে অবশ্যই পরিচিত। উদাহরণস্বরূপ, নিওডিমিয়াম শক্তিশালী চুম্বক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই চুম্বক লাউডস্পিকার, কম্পিউটার হার্ডড্রাইভ, ইলেকট্রিক গাড়ির মোটর এবং জেট ইঞ্জিনে ব্যবহার করা হয়। এর ফলে এগুলো ছোট এবং আরও কার্যকর হয়ে উঠে। ইট্রিয়াম ও ইউরোপিয়াম টেলিভিশন ও কম্পিউটারের স্ক্রিন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। কারণ এইগুলো ডিসপ্লের রঙের গুণমান উন্নত করে।
জিঞ্জার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ডিরেক্টর থমাস ক্রুমার ব্যাখ্যা করেছেন, ‘আপনি যা কিছু চালু বা বন্ধ করতে পারেন—সম্ভবত তার সবকিছুই বিরল মৃত্তিকা দিয়ে চলে।’ লেজার সার্জারি ও এমআরআই স্ক্যানের মতো চিকিৎসা প্রযুক্তির উৎপাদনেও বিরল মৃত্তিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া, এগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতেও ব্যবহৃত হয়।
বিরল মৃত্তিকা নিষ্কাশন এবং পরিশোধন অর্থাৎ অন্যান্য খনিজ থেকে সেগুলোকে আলাদা করার প্রক্রিয়ার ওপর চীনের প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে। আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার (আইইএ) অনুমান, বিরল মৃত্তিকা উৎপাদনে চীনের অবদান প্রায় ৬১ শতাংশ এবং পরিশোধন প্রক্রিয়ায় ৯২ শতাংশ।
এর অর্থ হলো—বর্তমানে বিরল মৃত্তিকা ধাতুর সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর চীনের একক আধিপত্য রয়েছে। কোন কোম্পানি বিরল মৃত্তিকা সরবরাহ পাবে আর কারা পাবে না, তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা তাদের হাতেই। এই বিরল মৃত্তিকা ধাতুগুলো নিষ্কাশন এবং পরিশোধন উভয়ই ব্যয়বহুল এবং পরিবেশ দূষণকারী।
বিরল মৃত্তিকা ধাতুর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো—তেজস্ক্রিয়তা। এ কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) অন্যান্য অনেক দেশ এগুলো উৎপাদনে অনিচ্ছুক। ক্রুমার বলেছেন, ‘উৎপাদন থেকে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য অবশ্যই নিরাপদ, নিয়ম মেনে এবং স্থায়ীভাবে নিষ্পত্তি করতে হবে। বর্তমানে ইইউতে সমস্ত নিষ্পত্তি কেন্দ্র অস্থায়ী।’
বিরল মৃত্তিকা ধাতুর সরবরাহ শৃঙ্খলে চীনের আধিপত্য রাতারাতি তৈরি হয়নি। বরং, এটি কয়েক দশকের কৌশলগত সরকারি নীতি এবং বিনিয়োগের ফল। ১৯৯২ সালে ইনার মঙ্গোলিয়া সফরের সময় চীনের অর্থনৈতিক সংস্কারের রূপকার প্রয়াত নেতা দেং জিয়াওপিং বলেছিলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের তেল আছে এবং চীনের আছে বিরল মৃত্তিকা।’
যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিটিক্যাল ম্যাটেরিয়ালস রিসার্চ ফেলো গ্যাভিন হার্পার বলেছেন, ‘বিংশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে চীন বিরল মৃত্তিকা খনন ও প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। প্রায়শই অন্যান্য দেশের তুলনায় কম পরিবেশগত মান এবং শ্রমিকের মজুরির বিনিময়ে এটি করা হয়েছে।’
গ্যাভিন হার্পার বলেন, ‘এর ফলে তারা বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগীদের তুলনায় কম দামে বিক্রি করতে পেরেছে এবং খনন ও পরিশোধন থেকে শুরু করে চুম্বকের মতো তৈরি পণ্য উৎপাদন পর্যন্ত পুরো সরবরাহ শৃঙ্খলে প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি করেছে।’
ওয়াশিংটন আরোপিত শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় চীন এ মাসের শুরুতে সাতটি বিরল মৃত্তিকা খনিজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর বেশির ভাগই ‘ভারী’ বিরল মৃত্তিকা ধাতু নামে পরিচিত, যা প্রতিরক্ষা খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এইগুলো ‘হালকা’ বিরল মৃত্তিকা ধাতুর তুলনায় কম পাওয়া যায় এবং প্রক্রিয়াকরণও কঠিন। তাই এগুলোর দামও বেশি।
চীন সরকার নির্দেশ দিয়েছে, গত ৪ এপ্রিল থেকে সব কোম্পানিকে দেশ থেকে বিরল মৃত্তিকা এবং চুম্বক রপ্তানি করতে হলে বিশেষ রপ্তানি লাইসেন্স নিতে হবে। চীন পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির স্বাক্ষরকারী দেশ হওয়ায় ‘দ্বৈত ব্যবহারযোগ্য পণ্যের’ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তাদের রয়েছে।
থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) মতে, চীনের এই পদক্ষেপ আমেরিকাকে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। কারণ, চীনের বাইরে ভারী বিরল মৃত্তিকা প্রক্রিয়াকরণের কোনো সক্ষমতা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার হিসাব অনুসারে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা বিরল মৃত্তিকা যৌগ এবং ধাতুর ৭০ শতাংশই ছিল চীনের।
এর সরল মানে হলো, নতুন নিষেধাজ্ঞা আমেরিকাকে কঠিন আঘাত হানতে সক্ষম। ভারী বিরল মৃত্তিকা ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার এবং স্থায়ী চুম্বকের মতো অনেক সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। সিএসআইএস—এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এফ-৩৫ জেট, টোম্যাহক ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রিডেটর আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকলের মতো প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি এই খনিজগুলির ওপর নির্ভরশীল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে চীন ‘তাদের গোলাবারুদ উৎপাদন বাড়াচ্ছে এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় পাঁচ থেকে ছয় গুণ দ্রুত গতিতে উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থা ও সরঞ্জাম সংগ্রহ করছে।’ এই বিষয়ে ক্রুমার বলেন, ‘মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পের ওপর এর বড় প্রভাব পড়বে।’
ট্রাম্প তাঁর আরোপিত শুল্কের মাধ্যমে মার্কিন উৎপাদনকে পুনরুজ্জীবিত করার আশা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এই পদক্ষেপ সেই উৎপাদনকেও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। গ্যাভিন হার্পার বলেছেন, ‘প্রতিরক্ষা ও হাই-টেকসহ বিভিন্ন খাতের উৎপাদনকারীরা চালান বন্ধ এবং সীমিত মজুতের কারণে সম্ভাব্য ঘাটতি এবং উৎপাদন বিলম্বের সম্মুখীন হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ বিরল মৃত্তিকা উপাদানের দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর ফলে স্মার্টফোন থেকে শুরু করে সামরিক সরঞ্জাম পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের তাৎক্ষণিক খরচ বাড়বে।’ ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন কোম্পানিগুলোর উৎপাদন গতি কমে যেতে পারে।
যদি চীন থেকে বিরল মৃত্তিকা ধাতুর আমদানি ঘাটতি দীর্ঘমেয়াদি হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত সরবরাহ শৃঙ্খলকে বৈচিত্র্যময় করতে এবং দেশীয় উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা বাড়াতে শুরু করতে পারে। তবে এর জন্য ‘উল্লেখযোগ্য এবং টেকসই বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং চীনের ওপর পূর্বের নির্ভরতার তুলনায় সম্ভবত বেশি সামগ্রিক খরচ’ প্রয়োজন হবে।
এটি স্পষ্ট যে, ট্রাম্পের মনে এরই মধ্যে এই বিষয়টি রয়েছে। এ সপ্তাহে, তিনি গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলোর ওপর আমেরিকার নির্ভরতার কারণে সৃষ্ট জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আদেশে বলা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেন, বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং সেগুলোর উপজাত পণ্যের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা মার্কিন প্রতিরক্ষা সক্ষমতা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। বিরল মৃত্তিকা উপাদানসহ গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলি জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।’
যুক্তরাষ্ট্রে একটি কার্যকর বিরল মৃত্তিকা খনি রয়েছে। তবে ভারী বিরল মৃত্তিকা পৃথক করার সক্ষমতা তাদের নেই এবং প্রক্রিয়াকরণের জন্য তাদের আকরিক চীনে পাঠাতে হয়। এক সময় যুক্তরাষ্ট্রে বিরল মৃত্তিকার চুম্বক উৎপাদনকারী কোম্পানি ছিল। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত আমেরিকা আসলে বিরল মৃত্তিকার বৃহত্তম উৎপাদক ছিল।
কিন্তু চীন যখন উৎপাদন এবং খরচের দিক থেকে আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে, তখন এই কোম্পানিগুলি বাজার থেকে সরে যায়। অনেকের ধারণা, এ কারণেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের সঙ্গে একটি খনিজ চুক্তি স্বাক্ষর করতে এত আগ্রহী। তারা চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে চায়।
ট্রাম্পের নজর অন্য যে জায়গার ওপর রয়েছে তা হলো—গ্রিনল্যান্ড। এখানে বিরল মৃত্তিকা উপাদানের অষ্টম বৃহত্তম মজুত রয়েছে। ট্রাম্প বারবার ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং এর নিয়ন্ত্রণ নিতে অর্থনৈতিক বা সামরিক শক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি।
এগুলো এমন কিছু জায়গা হতে পারত যেখান থেকে আমেরিকা কিছু বিরল মৃত্তিকা আমদানি করতে পারত। তবে ট্রাম্প তাদের সঙ্গে যে বৈরী আচরণ করেছেন, তাতে আমেরিকার খুব কম বিকল্প সরবরাহকারী অবশিষ্ট থাকতে পারে।
গ্যাভিন হার্পার বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দুটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। একদিকে বিরল মৃত্তিকার একচেটিয়া সরবরাহকারী চীনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করেছে। অন্যদিকে, তারা শুল্ক এবং অন্যান্য বৈরী পদক্ষেপের মাধ্যমে অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ দেশকেও শত্রু করে তুলেছে।’ তিনি বলেন, ‘এই নতুন প্রশাসনের অস্থির নীতি পরিবেশে তারা (বন্ধুরা) আমেরিকার সঙ্গে সহযোগিতা করতে এখনো অগ্রাধিকার দেবে কিনা, তা দেখার বিষয়।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি দ্রুত অগ্রগতির কোনো ইঙ্গিত না পান, তাহলে কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়াবেন। ট্রাম্পের এমন মনোভাব নিয়ে এখন চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
১৬ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের শুল্ক ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বিশাল ধাক্কা। এই দেশগুলো চিপস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে জড়িত। তারা এখন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মাঝে আটকা পড়েছে। যেখানে চীন তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার।
১ দিন আগেআজ ১৭ এপ্রিল। প্রতি বছর এই দিনটিতে পালিত হয় ‘ফিলিস্তিনি বন্দী দিবস’। এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনিদের মুক্তির সংগ্রাম ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ১৯৭৪ সালে বন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া প্রথম ফিলিস্তিনি মাহমুদ বাকর হিজ
২ দিন আগেদিন কয়েক আগে, ইসরায়েলি হামলায় ১৫ ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও সিভিল ডিফেন্স কর্মী নিহত হন। তাঁরা যোদ্ধা ছিলেন না, জঙ্গি ছিলেন না। রকেট বা অস্ত্র লুকিয়ে রাখা কেউও ছিলেন না। তাঁরা ছিলেন সাহায্যকর্মী, মানবতাবাদী। তাঁরা বোমার আঘাতে হতাহতদের দিকে ছুটে যাওয়া সেবক ছিলেন। অন্যের জীবন বাঁচাতে নিজেদের
৩ দিন আগে