অনলাইন ডেস্ক
ভারতের উত্তরাঞ্চলের একটি গ্রাম আকালিয়া কালান। কাছাকাছি একটি বিমানঘাঁটি থাকায় এই গ্রামের বাসিন্দাদের যুদ্ধবিমানের শব্দ শোনা কোনো নতুন ব্যাপার ছিল না। কিন্তু ৭ মে ভোরের শব্দ ছিল অনেক বেশি তীব্র এবং অপরিচিত। যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিনের গর্জনের সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যাচ্ছিল। সেই শব্দ যখন আরও কাছাকাছি আসতে থাকলে গ্রামবাসী ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ান। বাইরে গিয়ে দেখতে পান, আগুনের একটি গোলা মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গিয়ে কাছাকাছি একটি মাঠে পড়েছে।
ভেঙে পড়া বস্তুটি যে একটি যুদ্ধবিমান, তা সহজেই বোঝা যাচ্ছিল। গ্রামবাসীরা জানান, এ ঘটনায় দুই পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর ২ পাইলট দুর্ঘটনার আগে প্যারাসুট নিয়ে লাফিয়ে পড়েন। পরে তাদের আহত অবস্থায় আশপাশের মাঠে পাওয়া যায়।
ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো নিশ্চিত না করলেও, মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে ৪ দিনের সংঘাতে তাদের বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান হারানোর খবর পাওয়া গেছে। পাকিস্তান তিনটি অত্যাধুনিক রাফালসহ ছয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করলেও, ভারত সরকার তা অস্বীকার করেছে। তবে বিদেশি সামরিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, অন্তত একটি রাফালসহ ভারতের পাঁচটি বিমান ধ্বংস হয়েছে। ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তারা সংখ্যা নিশ্চিত করতে না চাইলেও, কিছু বিমান হারানোর কথা স্বীকার করেছেন। এমনকি তারা এখন ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে, এই ক্ষতির কারণ প্রযুক্তিগত দুর্বলতা নয়, বরং কৌশলগত ভুল ছিল।
এই স্বীকারোক্তি তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, চীন পাকিস্তানের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। ইতিহাসে এই সংঘাত ছিল প্রথম, যেখানে অত্যাধুনিক চীনা যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র পশ্চিমা ও রুশ অস্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে। তাইওয়ান নিয়ে সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে চীন—এ কারণে আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলো বিশেষভাবে আগ্রহী।
প্রাথমিক প্রতিবেদনে পাকিস্তানের চীনা জে-১০ যুদ্ধবিমান এবং পিএল-১৫ আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের শ্রেষ্ঠত্বকে নির্ধারক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। ভারত সম্ভবত সেগুলোকে কম করে দেখিয়েছে। এমনও হতে পারে যে, চীন পাকিস্তানকে আগাম সতর্কবার্তা এবং রিয়েল-টাইম লক্ষ্যবস্তুর তথ্য সরবরাহ করে যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
তবে, পরবর্তী সময়ে ভারতের সাফল্যের প্রেক্ষিতে, প্রথম রাতের লড়াইয়ে ভারত নিজস্ব যুদ্ধবিমান কীভাবে ব্যবহার করেছিল সেটাই সম্ভবত বড় সমস্যা ছিল। এই ঘটনার সবচেয়ে সাম্প্রতিক এবং বিতর্কিত মোড়টি আসে জুনে। সে সময় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জাকার্তায় ভারতের প্রতিরক্ষা অ্যাটাশে ক্যাপ্টেন শিবকুমারের একটি সেমিনারে দেওয়া বক্তব্য সম্প্রচার করে। তিনি বলেছিলেন, ভারত কিছু বিমান হারিয়েছে কারণ তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিমানবাহিনীকে পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আঘাত না করার নির্দেশ দিয়েছিল। পরিবর্তে, তারা প্রথম দিন শুধু ‘জঙ্গি’ ঘাঁটিতে হামলা করেছে। ক্যাপ্টেন কুমার বলেন, ‘ক্ষতির পর আমরা কৌশল পরিবর্তন করি এবং তাদের সামরিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করি।’
এর আগে, মে মাসের শেষের দিকে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান স্বীকার করেন যে, সংঘাতের প্রথম রাতে ‘কৌশলগত ভুলের’ কারণে ভারত কিছু বিমান হারিয়েছে। তিনি আরও বলেন, দুদিন পর ভারত ভুলগুলো সংশোধন করে। যার ফলে ভারতের সব যুদ্ধবিমান দূর থেকেই পাকিস্তানের অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়। পরে ভারত আরও বেশি সাফল্য পায় যখন তাদের ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে বেশ কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে।
বিদেশি বিশ্লেষকদের মধ্যে একটি তত্ত্ব হলো—প্রথম দিন ভারত রাফাল বিমানগুলোতে দূরপাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য মিটিওর ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করেনি (সম্ভবত এই ভেবে যে, সেগুলো পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানের নাগালের বাইরে থাকবে অথবা পাকিস্তানের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ততটা তীব্র হবে না)।
আরেকটি তত্ত্ব হলো—ভারতের যুদ্ধবিমানগুলোতে পাকিস্তানের নতুন অস্ত্রের বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য সঠিক ইলেকট্রনিক জ্যামিং সরঞ্জাম, আপ-টু-ডেট সফটওয়্যার বা প্রাসঙ্গিক ডেটা ছিল না। তৃতীয় এবং আরও ব্যাপক আরেকটি তত্ত্ব হলো—পাকিস্তানের পক্ষে ভারতীয় পরিকল্পনা চিহ্নিত করা, তাদের নিজস্ব যুদ্ধবিমানের কাছে ডেটা পাঠানো এবং ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে গাইড করার পদ্ধতি সম্পর্কে ভারতের প্রয়োজনীয় ‘মিশন ডেটার’ অভাব ছিল।
তবে ক্যাপ্টেন শিবকুমারের বক্তব্য অনুযায়ী, রাজনৈতিক নেতাদের জঙ্গি ঘাঁটিতে আঘাত করার নির্দেশের কারণে যদি যুদ্ধবিমানগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে থাকে, তাহলে এর দায়ভার নরেন্দ্র মোদীর সরকারের ওপরই বর্তাবে। পাকিস্তানের সঙ্গে অন্যান্য সাম্প্রতিক সংঘর্ষে ভারত সাধারণত উত্তেজনা এড়িয়ে চলার যে নীতি অনুসরণ করে, এই নির্দেশ তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হলেও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সক্ষমতার উন্নতিকে তা বিবেচনায় নেয়নি। এই ধারণা এখন বিরোধী দলের পক্ষ থেকে ‘ধামাচাপা’ দেওয়ার অভিযোগকে আরও উসকে দিয়েছে। বিরোধী দল কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কেন প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করতে এবং বিরোধীদের আত্মবিশ্বাসে নিতে অস্বীকার করছেন? কেন সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে?’
ভারতের বৃহত্তম প্রতিরক্ষা চুক্তির ক্ষেত্রেও এর প্রভাব রয়েছে। এ বছর ১১৪টি যুদ্ধবিমানের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষিত দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি চলছে। ফ্রান্সের রাফাল যুদ্ধবিমান প্রস্তুতকারক সংস্থা ড্যাসল্ট সুইডেনের সাব এবং আমেরিকার বোয়িং ও লকহিড মার্টিনের সঙ্গে এই দৌড়ে অন্যতম প্রধান প্রতিযোগী। তবে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর কিছু কর্মকর্তা মনে করেন, সাম্প্রতিক সংঘাতে রাফাল প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি। অন্যদের অভিযোগ, ড্যাসল্ট রাফালের সফটওয়্যারের সোর্স কোড শেয়ার করতে অনিচ্ছুক, যা ভারতকে তাদের নিজস্ব প্রয়োজন অনুযায়ী বিমানটিকে পরিবর্তন করতে বাধা দিচ্ছে। সংঘাতের পর থেকে চীনা কূটনীতিকরাও নাকি অন্যান্য সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে রাফালের সমালোচনা করছে এবং পরিবর্তে চীনা যুদ্ধবিমান কেনার জন্য উৎসাহিত করছে।
ড্যাসল্টের কর্মকর্তারা মিশর, ইন্দোনেশিয়া, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো ক্রেতা দেশগুলোকে এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যতের গ্রাহকদের আশ্বস্ত করতে আগ্রহী। তবে ভারত সরকারকে ক্ষুব্ধ করার ভয়ে কোম্পানিটি প্রকাশ্যে কিছু বলা থেকে বিরত আছে। ড্যাসল্টকে এই ঘটনার তদন্তে কতটা অংশ নিতে দেওয়া হয়েছে তাও স্পষ্ট নয়। ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান এরিক ত্রাপিয়ের পাকিস্তানের তিনটি রাফায়েল ভূপাতিত করার দাবিকে ‘একেবারেই অসত্য’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। ১১ জুন প্রকাশিত এক ফরাসি ম্যাগাজিনের সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ বিবরণ জানা গেলে, বাস্তবতা অনেককে অবাক করে দিতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, রাফাল ‘বর্তমানে চীনের দেওয়া যেকোনো অস্ত্রের চেয়ে অনেক ভালো।’
ফ্রান্স সরকারকেও ভারতের একটি রাফাল হারানোর ঘটনা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে। ফ্রান্সের পার্লামেন্ট সদস্য মার্ক শাভেন্ত মে মাসের শেষের দিকে সরকারের কাছে একটি লিখিত প্রশ্ন জমা দেন। যেখানে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন, ভারতের রাফালের স্পেকট্রা ইলেকট্রনিক-ওয়ারফেয়ার সিস্টেম পাকিস্তানের চীনা তৈরি পিএল-১৫ আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত বা জ্যাম করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি জানতে চান, নতুন রাফালগুলোতে স্পেকট্রার উন্নত সংস্করণ থাকবে কিনা এবং ফ্রান্স বিশেষভাবে ইলেকট্রনিক যুদ্ধের জন্য ডিজাইন করা যুদ্ধবিমান তৈরির কথা বিবেচনা করছে কিনা। স্পেকট্রার কার্যকারিতা রাফায়েল ব্যবহারকারী বা অর্ডারকারী দেশগুলোর জন্যও আগ্রহের বিষয়।
অন্যদিকে, আকালিয়া কালান এবং এর নিকটবর্তী গ্রামগুলোতে মৃত ও আহতদের আত্মীয়-স্বজনেরা আরও তাৎক্ষণিক উদ্বেগে ভুগছেন। বোমার আঘাতে মাথায় আঘাত পেয়ে মারা যাওয়া রাজ কুমার সিং স্ত্রী, দুই সন্তান এবং সহায় সম্বলহীন ৭০ বছর বয়সী মাকে রেখে গেছেন। তারা এখনো পর্যন্ত কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি বা স্থানীয় কর্মকর্তা বা রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি। বরং, এক গ্রামবাসীর মতে, কর্তৃপক্ষ ‘এই দুর্ঘটনার খবর চাপা দিতে চায়।’
ভারতের উত্তরাঞ্চলের একটি গ্রাম আকালিয়া কালান। কাছাকাছি একটি বিমানঘাঁটি থাকায় এই গ্রামের বাসিন্দাদের যুদ্ধবিমানের শব্দ শোনা কোনো নতুন ব্যাপার ছিল না। কিন্তু ৭ মে ভোরের শব্দ ছিল অনেক বেশি তীব্র এবং অপরিচিত। যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিনের গর্জনের সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যাচ্ছিল। সেই শব্দ যখন আরও কাছাকাছি আসতে থাকলে গ্রামবাসী ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ান। বাইরে গিয়ে দেখতে পান, আগুনের একটি গোলা মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গিয়ে কাছাকাছি একটি মাঠে পড়েছে।
ভেঙে পড়া বস্তুটি যে একটি যুদ্ধবিমান, তা সহজেই বোঝা যাচ্ছিল। গ্রামবাসীরা জানান, এ ঘটনায় দুই পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর ২ পাইলট দুর্ঘটনার আগে প্যারাসুট নিয়ে লাফিয়ে পড়েন। পরে তাদের আহত অবস্থায় আশপাশের মাঠে পাওয়া যায়।
ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো নিশ্চিত না করলেও, মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে ৪ দিনের সংঘাতে তাদের বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান হারানোর খবর পাওয়া গেছে। পাকিস্তান তিনটি অত্যাধুনিক রাফালসহ ছয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করলেও, ভারত সরকার তা অস্বীকার করেছে। তবে বিদেশি সামরিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, অন্তত একটি রাফালসহ ভারতের পাঁচটি বিমান ধ্বংস হয়েছে। ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তারা সংখ্যা নিশ্চিত করতে না চাইলেও, কিছু বিমান হারানোর কথা স্বীকার করেছেন। এমনকি তারা এখন ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে, এই ক্ষতির কারণ প্রযুক্তিগত দুর্বলতা নয়, বরং কৌশলগত ভুল ছিল।
এই স্বীকারোক্তি তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, চীন পাকিস্তানের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। ইতিহাসে এই সংঘাত ছিল প্রথম, যেখানে অত্যাধুনিক চীনা যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র পশ্চিমা ও রুশ অস্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে। তাইওয়ান নিয়ে সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে চীন—এ কারণে আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলো বিশেষভাবে আগ্রহী।
প্রাথমিক প্রতিবেদনে পাকিস্তানের চীনা জে-১০ যুদ্ধবিমান এবং পিএল-১৫ আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের শ্রেষ্ঠত্বকে নির্ধারক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। ভারত সম্ভবত সেগুলোকে কম করে দেখিয়েছে। এমনও হতে পারে যে, চীন পাকিস্তানকে আগাম সতর্কবার্তা এবং রিয়েল-টাইম লক্ষ্যবস্তুর তথ্য সরবরাহ করে যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
তবে, পরবর্তী সময়ে ভারতের সাফল্যের প্রেক্ষিতে, প্রথম রাতের লড়াইয়ে ভারত নিজস্ব যুদ্ধবিমান কীভাবে ব্যবহার করেছিল সেটাই সম্ভবত বড় সমস্যা ছিল। এই ঘটনার সবচেয়ে সাম্প্রতিক এবং বিতর্কিত মোড়টি আসে জুনে। সে সময় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জাকার্তায় ভারতের প্রতিরক্ষা অ্যাটাশে ক্যাপ্টেন শিবকুমারের একটি সেমিনারে দেওয়া বক্তব্য সম্প্রচার করে। তিনি বলেছিলেন, ভারত কিছু বিমান হারিয়েছে কারণ তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিমানবাহিনীকে পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আঘাত না করার নির্দেশ দিয়েছিল। পরিবর্তে, তারা প্রথম দিন শুধু ‘জঙ্গি’ ঘাঁটিতে হামলা করেছে। ক্যাপ্টেন কুমার বলেন, ‘ক্ষতির পর আমরা কৌশল পরিবর্তন করি এবং তাদের সামরিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করি।’
এর আগে, মে মাসের শেষের দিকে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান স্বীকার করেন যে, সংঘাতের প্রথম রাতে ‘কৌশলগত ভুলের’ কারণে ভারত কিছু বিমান হারিয়েছে। তিনি আরও বলেন, দুদিন পর ভারত ভুলগুলো সংশোধন করে। যার ফলে ভারতের সব যুদ্ধবিমান দূর থেকেই পাকিস্তানের অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়। পরে ভারত আরও বেশি সাফল্য পায় যখন তাদের ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে বেশ কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে।
বিদেশি বিশ্লেষকদের মধ্যে একটি তত্ত্ব হলো—প্রথম দিন ভারত রাফাল বিমানগুলোতে দূরপাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য মিটিওর ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করেনি (সম্ভবত এই ভেবে যে, সেগুলো পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানের নাগালের বাইরে থাকবে অথবা পাকিস্তানের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ততটা তীব্র হবে না)।
আরেকটি তত্ত্ব হলো—ভারতের যুদ্ধবিমানগুলোতে পাকিস্তানের নতুন অস্ত্রের বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য সঠিক ইলেকট্রনিক জ্যামিং সরঞ্জাম, আপ-টু-ডেট সফটওয়্যার বা প্রাসঙ্গিক ডেটা ছিল না। তৃতীয় এবং আরও ব্যাপক আরেকটি তত্ত্ব হলো—পাকিস্তানের পক্ষে ভারতীয় পরিকল্পনা চিহ্নিত করা, তাদের নিজস্ব যুদ্ধবিমানের কাছে ডেটা পাঠানো এবং ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে গাইড করার পদ্ধতি সম্পর্কে ভারতের প্রয়োজনীয় ‘মিশন ডেটার’ অভাব ছিল।
তবে ক্যাপ্টেন শিবকুমারের বক্তব্য অনুযায়ী, রাজনৈতিক নেতাদের জঙ্গি ঘাঁটিতে আঘাত করার নির্দেশের কারণে যদি যুদ্ধবিমানগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে থাকে, তাহলে এর দায়ভার নরেন্দ্র মোদীর সরকারের ওপরই বর্তাবে। পাকিস্তানের সঙ্গে অন্যান্য সাম্প্রতিক সংঘর্ষে ভারত সাধারণত উত্তেজনা এড়িয়ে চলার যে নীতি অনুসরণ করে, এই নির্দেশ তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হলেও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সক্ষমতার উন্নতিকে তা বিবেচনায় নেয়নি। এই ধারণা এখন বিরোধী দলের পক্ষ থেকে ‘ধামাচাপা’ দেওয়ার অভিযোগকে আরও উসকে দিয়েছে। বিরোধী দল কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কেন প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করতে এবং বিরোধীদের আত্মবিশ্বাসে নিতে অস্বীকার করছেন? কেন সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে?’
ভারতের বৃহত্তম প্রতিরক্ষা চুক্তির ক্ষেত্রেও এর প্রভাব রয়েছে। এ বছর ১১৪টি যুদ্ধবিমানের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষিত দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি চলছে। ফ্রান্সের রাফাল যুদ্ধবিমান প্রস্তুতকারক সংস্থা ড্যাসল্ট সুইডেনের সাব এবং আমেরিকার বোয়িং ও লকহিড মার্টিনের সঙ্গে এই দৌড়ে অন্যতম প্রধান প্রতিযোগী। তবে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর কিছু কর্মকর্তা মনে করেন, সাম্প্রতিক সংঘাতে রাফাল প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি। অন্যদের অভিযোগ, ড্যাসল্ট রাফালের সফটওয়্যারের সোর্স কোড শেয়ার করতে অনিচ্ছুক, যা ভারতকে তাদের নিজস্ব প্রয়োজন অনুযায়ী বিমানটিকে পরিবর্তন করতে বাধা দিচ্ছে। সংঘাতের পর থেকে চীনা কূটনীতিকরাও নাকি অন্যান্য সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে রাফালের সমালোচনা করছে এবং পরিবর্তে চীনা যুদ্ধবিমান কেনার জন্য উৎসাহিত করছে।
ড্যাসল্টের কর্মকর্তারা মিশর, ইন্দোনেশিয়া, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো ক্রেতা দেশগুলোকে এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যতের গ্রাহকদের আশ্বস্ত করতে আগ্রহী। তবে ভারত সরকারকে ক্ষুব্ধ করার ভয়ে কোম্পানিটি প্রকাশ্যে কিছু বলা থেকে বিরত আছে। ড্যাসল্টকে এই ঘটনার তদন্তে কতটা অংশ নিতে দেওয়া হয়েছে তাও স্পষ্ট নয়। ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান এরিক ত্রাপিয়ের পাকিস্তানের তিনটি রাফায়েল ভূপাতিত করার দাবিকে ‘একেবারেই অসত্য’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। ১১ জুন প্রকাশিত এক ফরাসি ম্যাগাজিনের সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ বিবরণ জানা গেলে, বাস্তবতা অনেককে অবাক করে দিতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, রাফাল ‘বর্তমানে চীনের দেওয়া যেকোনো অস্ত্রের চেয়ে অনেক ভালো।’
ফ্রান্স সরকারকেও ভারতের একটি রাফাল হারানোর ঘটনা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে। ফ্রান্সের পার্লামেন্ট সদস্য মার্ক শাভেন্ত মে মাসের শেষের দিকে সরকারের কাছে একটি লিখিত প্রশ্ন জমা দেন। যেখানে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন, ভারতের রাফালের স্পেকট্রা ইলেকট্রনিক-ওয়ারফেয়ার সিস্টেম পাকিস্তানের চীনা তৈরি পিএল-১৫ আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত বা জ্যাম করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি জানতে চান, নতুন রাফালগুলোতে স্পেকট্রার উন্নত সংস্করণ থাকবে কিনা এবং ফ্রান্স বিশেষভাবে ইলেকট্রনিক যুদ্ধের জন্য ডিজাইন করা যুদ্ধবিমান তৈরির কথা বিবেচনা করছে কিনা। স্পেকট্রার কার্যকারিতা রাফায়েল ব্যবহারকারী বা অর্ডারকারী দেশগুলোর জন্যও আগ্রহের বিষয়।
অন্যদিকে, আকালিয়া কালান এবং এর নিকটবর্তী গ্রামগুলোতে মৃত ও আহতদের আত্মীয়-স্বজনেরা আরও তাৎক্ষণিক উদ্বেগে ভুগছেন। বোমার আঘাতে মাথায় আঘাত পেয়ে মারা যাওয়া রাজ কুমার সিং স্ত্রী, দুই সন্তান এবং সহায় সম্বলহীন ৭০ বছর বয়সী মাকে রেখে গেছেন। তারা এখনো পর্যন্ত কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি বা স্থানীয় কর্মকর্তা বা রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি। বরং, এক গ্রামবাসীর মতে, কর্তৃপক্ষ ‘এই দুর্ঘটনার খবর চাপা দিতে চায়।’
তুরস্কে গণতন্ত্র আজ ভয়াবহ হুমকির মুখে। চলতি মাসের (জুলাই) শুরুতেই বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) অন্তত ১৭ জন মেয়রকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তাঁদের সবাই দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
২ দিন আগেউপমহাদেশের চিরবৈরী দুই পক্ষ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়টি যখন অনিষ্পন্ন, তখন সেখানে নীরবে ঢুকেছে তৃতীয় আরেক পক্ষ চীন। ৬৫ বছর ধরে এই সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু ও এর শাখা নদীগুলোর পানি ভাগাভাগির ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে কাজ করেছে। এই চুক্তি সিন্ধু নদ অববাহিকা
৩ দিন আগেযেকোনো পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিমাত্রই জানেন মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ লেখার চেষ্টা করা মানে হচ্ছে, প্রচুর মানসিক শক্তি খরচ করা। কিন্তু, নিবন্ধ লেখার ক্ষেত্রে যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের পূর্ণ সহায়তা পাওয়া যায়, তাহলে এই মানসিক চাপ অনেকটাই কমে আসে।
৩ দিন আগেরাতের আকাশে যখন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্যাট্রিয়ট সক্রিয় হয়, তখন সারা শহর কেঁপে ওঠে গর্জনে। সেই শব্দ অনেকটা দ্রুতগতির হিপ-হপ মিউজিকের মতো। আকাশে বিস্ফোরণের আলোর ঝলকানি, তারপর মুহূর্তের মধ্যে ভয়ংকর বিস্ফোরণ। বিষয়টি ভাবতে ভালো লাগে। ব্যয়বহুল এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা রুশ
৫ দিন আগে