Ajker Patrika

এ বছর ভোট দেবে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ, বোকা বানাতে ওত পেতে আছে এআই

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯: ৩৭
Thumbnail image

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। চলতি বছরই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এসব নির্বাচনে ভোট দেবে; সংখ্যার হিসাবে যা প্রায় ২০০ কোটি ভোটার। 

সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে নির্বাচনে ভোটারদের সিদ্ধান্ত নির্ধারণে ভূমিকা রেখে আসছে অনলাইনে ছড়ানো গুজব, বিভ্রান্তি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) দ্রুত অগ্রগতি এবং এর সহজলভ্যতা গুজব, বিভ্রান্তির এই পরিসরকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। 

শুধু অনলাইন পরিসরই না, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি অডিও, ভিডিও বা লিখিত কনটেন্টের মাধ্যমে গুজব, বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে মূলধারার সংবাদমাধ্যমও। গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য হুমকিস্বরূপ এসব গুজব, বিভ্রান্তি শনাক্ত করা সংবাদমাধ্যমের জন্য দিন দিন চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে। 

গত বছরের সেপ্টেম্বরে স্লোভাকিয়ার নির্বাচনের দুই দিন আগে দেশটির বিরোধী দলের প্রার্থী মাইকেল সিমেকার একটি ভয়েস রেকর্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে তাঁকে দৃশ্যত একজন সাংবাদিকের সঙ্গে ভোট কেনা এবং ফলাফলে কারচুপি করার ষড়যন্ত্র করতে শোনা যায়। ভয়েস রেকর্ডটিতে সিমেকা সাংবাদিককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ভোট কেনা ও ফলাফল কারচুপির বিষয়গুলো এমনভাবে ঘটাতে হবে, যেন কেউ ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলতে না পারে। উত্তরে সাংবাদিক বলেন, সাবধান! চারদিকে নানা মানুষ আছে। বি (ব্রাইব) শব্দ ব্যবহার করবেন না।’ 

ফ্যাক্টচেকাররা জানান, মাইকেল সিমেকা ও সাংবাদিকের এই কথোপকথনটি ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি। কারণ, কথোপকথনটিতে ছিল অস্বাভাবিক শব্দচয়ন এবং কথার বিরতিতেও ছিল অস্বাভাবিকতা। 

কিন্তু বিষয়টি ধরা পড়া আগেই ভয়েস রেকর্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় হাজার হাজার ভোটার শেয়ার করেন। আবার ওই সময়ই সংবাদমাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। ফলে সিমেকার দল বা সংবাদমাধ্যমের পক্ষে ভয়েস রেকর্ডটি সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য ভোটারদের জানানো কঠিন হয়ে উঠেছিল। অবশ্য স্লোভাকিয়ার পুলিশ ভোটারদের অনলাইনে গুজব সম্পর্কে বারবার সতর্ক করে গেছে। 

বুথফেরত জরিপে এগিয়ে থাকলেও ওই বিতর্কিত ভয়েস রেকর্ডের কারণে সমালোচনার মুখে পড়েন মাইকেল সিমেকা। শেষ পর্যন্ত রুশপন্থী প্রার্থী রবার্ট ফিকোর কাছে হেরে যান।

শুধু স্লোভাকিয়ার এই ঘটনাই না, বিশ্বজুড়েই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট তৈরির করতে পারে। এতে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। 

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জরিপে দেখা যায়, ২০২৪ সালে বিশ্ববাসীকে যেসব ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে, সেসবের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি ভুল তথ্য। এই ঝুঁকি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার চেয়েও বেশি। 

গত বছরের অক্টোবরে যুক্তরাজ্যের বিরোধী লেবার পার্টির সম্মেলন চলাকালীন বিরোধীদলীয় নেতা কেয়ার স্টারমারের ডিপফেক অডিও প্রচারিত হয়েছিল। ডিপফেক প্রতিরোধে বেশ কিছু ইউটিউব অ্যাকাউন্ট স্থগিত করে ভেনেজুয়েলা সরকার। অ্যাকাউন্টগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, এরা ভুয়া সংবাদ প্রচারের পাশাপাশি এমন ডিপফেক ভিডিও প্রচার করেছিল, যা দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর শাসনের ইতিবাচক দিক তুলে ধরতে ভুল তথ্য প্রচার করছিল। 

যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিপফেক বিশেষজ্ঞ হেনরি আজডার বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে, নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা ডিপফেকের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগকে বাড়াবাড়ি মনে হলেও, এসব প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের ফলে বিষয়টি এখন আর অতিরঞ্জিত নেই।’ 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারও নড়েচড়ে বসেছে। যুক্তরাজ্যের গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশন হেডকোয়ার্টার্স দেশটির নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটররা রাজনৈতিক প্রচারণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে। নিরপেক্ষতা বজায় রেখে মেটা, ইউটিউব, টিকটক এবং এক্সের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো যেন ডিপফেক ও এর নির্মাতাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করে, সে জন্য চাপও বাড়ছে। 

বিশেষজ্ঞরাও এ ব্যাপারে তাগিদ দিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, বিগত নির্বাচনগুলোর মতো এবারও অনেক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়। যেমন, ২০২৩ সালে প্রযুক্তি খাত পতনের পর ফেসবুক নির্বাচনী নিরাপত্তা খাতে বিনিয়োগ কমিয়ে ফেলেছে। বাক্‌স্বাধীনতার নামে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন এক্স প্ল্যাটফর্ম কনটেন্টে নজরদারি কমিয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ফ্যাক্টচেকিং উদ্যোগ রাজনীতিকরণের শিকার হচ্ছে।

জার্মান মার্শাল ফান্ড থিংকট্যাংকের অংশ অ্যালায়েন্স ফর সিকিউরিং ডেমোক্রেসির অপপ্রচার (প্রপাগান্ডা) বিশেষজ্ঞ ব্রেট শ্যাফার বলেন, ‘ইন্টারনেটে ডিপফেকের ছড়াছড়ি কোনো কিছুকেই আর বিশ্বাসযোগ্য রাখছে না। ফলে মানুষ এখন অনেক সত্য তথ্যও সহজে বিশ্বাস করছে না। সর্বোপরি, মানুষের মনোভাবের এ পরিবর্তন নির্বাচনী আচরণকে প্রভাবিত করছে।’ 

ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস থেকে অনুবাদ করেছেন রিদওয়ানুল ইসলাম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত