Ajker Patrika

মণিপুরের কাছে ভারত যেন এক বিশ্বাসঘাতক

আপডেট : ২২ জুলাই ২০২৩, ২০: ৫৫
মণিপুরের কাছে ভারত যেন এক বিশ্বাসঘাতক

মণিপুরের সাম্প্রতিক ইস্যুতে ভারত সরকারের ঘুম ভেঙেছে ৭৮ দিন পর। ঘুম ভাঙার কারণটিও স্পষ্ট। র‍াজ্যের সংখ্যালঘু কুকি সম্প্রদায়ের দুই নারীকে ধর্ষণের পর বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানোর একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার জের ধরেই আড়মোড়া ভেঙেছে ভারত সরকার। ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় ঘটনাটি সমগ্র ভারতবাসীকেই নাড়া দিয়েছে। ফলে এ বিষয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। 

তবে দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যটিতে চলমান সংঘাত নিরসনে সরকারের ভূমিকা এখন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। কোনো কোনো দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিতে বিশ্বাসঘাতকতার সঙ্গে তুলনা করা চলে। 

রাজ্যটি এখন মূলত দুটি শিবিরে বিভক্ত। এর এক পক্ষে আছে রাজ্যের ৫৩ শতাংশ জনসংখ্যা নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই গোষ্ঠী। অন্য পক্ষটিতে আছে কুকি ও অন্যান্য উপজাতি সম্প্রদায়গুলো; যারা রাজ্যটির প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকায় বর্তমানে দুই পক্ষই নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে দাবি করছে। 

দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যটিতে সাম্প্রতিক সংঘাতের শুরুটা হয়েছিল গত ৩ মে ভারতীয় হাইকোর্ট থেকে জারি করা একটি নির্দেশনার সূত্র ধরে। এই নির্দেশনায় রাজ্যের মেইতেই গোষ্ঠীকে তপশিলি উপজাতি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি সরকারকে বিবেচনা করতে বলা হয়েছিল। সাংবিধানিক সুবিধা ভোগ করতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও মেইতেইরা দীর্ঘদিন ধরে তপশিলি উপজাতি বা এসটি তালিকাভুক্ত হওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। 

এ অবস্থায় মেইতেইরা তপশিলি উপজাতির স্বীকৃতি পেয়ে গেলে পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষেরা বঞ্চিত হবেন, এমন আশঙ্কা ছিল। তাই হাইকোর্টের নির্দেশনার বিরুদ্ধে কুকিসহ পাহাড়ি উপজাতি সম্প্রদায়গুলো বিক্ষোভ মিছিল করে। সহিংসতার শুরু সেখান থেকেই, যা খুব দ্রুত পুরো রাজ্যেই ছড়িয়ে পড়ে। 

ধর্ষিত ও বিবস্ত্র দুই কুকি নারীর ভিডিও ভাইরাল হওয়ার আগের ৭৮ দিনে দুই পক্ষের সংঘাতে অন্তত ১৪৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, এই সময়ের মধ্যে মেইতেইদের আগ্রাসনে কুকি ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে মিজোরাম, মেঘালয়, আসাম এবং ত্রিপুরায় আশ্রয় নিয়েছেন। 

আল-জাজিরার এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, দুই পক্ষের সংঘাতের মধ্যে নারীদের ধর্ষণ এবং নির্যাতনের মতো ঘটনা এখন মণিপুরে অহরহই ঘটছে। 

এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বন্দুক আর বোমা মণিপুরবাসীর কাছে অপরিচিত কোনো বিষয় নয়। এই রাজ্যের অসংখ্য নারী অতীতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দ্বারাও ধর্ষিত হয়েছেন। রাষ্ট্রীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে ১৯৮০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত মণিপুরে সংঘটিত বিদ্রোহ দমন করতে ধর্ষণকে একটি হাতিয়ার হিসেবেই মনে করত ভারতীয় সেনারা। 

সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষেরা মূলত রাজ্যটির ইম্ফল উপত্যকায় বসবাস করে। এই হিসেবে সংখ্যায় বেশি হয়েও রাজ্যের মাত্র ১০ শতাংশ এলাকা হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী মেইতেইরা দখল করে আছে। আর বিস্তীর্ণ বাকি পাহাড়ি এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে খ্রিষ্ট ধর্মে বিশ্বাসী কুকি-জো সম্প্রদায়গুলো। মাত্র ১০ শতাংশ এলাকায় বসবাস করেও বিধানসভার ৬০টি আসনের মধ্যে ৪০টি আসনই বর্তমানে মেইতেইদের দখলে। এই সম্প্রদায় মূলত ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সমর্থক। বিজেপি থেকে নির্বাচিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিরেন সিংও মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ। 

সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিরেন সিং মেইতেই গোষ্ঠীর হওয়ায় তাঁকে নিজ সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে দেখা যাচ্ছে। ফলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে পুলিশ নাগরিকদের জানমাল রক্ষার বদলে ক্ষমতাসীন দলের পুলিশ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি সর্বশেষ দুই নারীকে উলঙ্গ করার ঘটনায়ও পুলিশ কাছে থেকেও নীরব ভূমিকা পালন করেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। 

রাজ্যটিতে এভাবে যেসব অন্যায়-অবিচার, খুন ও ধর্ষণের মতো ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে তা নিয়ে দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাইভিত্তিক তথা ভারতীয় মূল ধারার গণমাধ্যমগুলোকেও নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। তবে উলঙ্গ নারীর ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর চক্ষু লজ্জা এড়াতেই যেন বিষয়টি মূলধারার গণমাধ্যমগুলো কাভার করছে। বলা যায়—মণিপুর ইস্যুতে দীর্ঘদিন নীরব থাকার পর প্রধানমন্ত্রী মোদিও হঠাৎ আওয়াজ দিয়েছেন। মে মাসের শুরু থেকে যে সংঘাত সেখানে চলছে তা নিয়ে ইতিপূর্বে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি তিনি। 

অতীত থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সংঘাতের প্রশ্নে মণিপুর নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এমন বিতর্কিত আচরণ মণিপুর তো বটেই অন্যান্য মহলেও নিন্দিত হচ্ছে। তা ছাড়া রাষ্ট্রের নাগরিকের নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকারের এক চোখ বন্ধ করে রাখার নীতিটি বিশ্বাসঘাতকতারই শামিল। বিষয়টি ভারতের অখণ্ডতার প্রশ্নে হুমকিও হয়ে উঠতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে এনসিপির শীর্ষ ৫ নেতা হঠাৎ কক্সবাজারে কেন

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে চূড়ান্ত বৈঠক করল শশী থারুরের নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটি

ছাত্র-জনতার মিছিলের মুখে পড়েন এক মন্ত্রী

কক্সবাজারে পিটার হাসের সঙ্গে এনসিপি নেতাদের বৈঠকের খবর, ‘গুজব’ বললেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

নির্বাচন রোজার আগেই, ঘোষণা আসতে পারে আজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত