Ajker Patrika

আল জাজিরার বিশ্লেষণ

ইসরায়েল-সিরিয়ার সম্পর্ক কি স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে

অনলাইন ডেস্ক
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধ শেষে সিরিয়া এখন আঞ্চলিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের পথে। আর সেই প্রক্রিয়ায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি আলোচনা হয়েছে। আলোচনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যারা একটি ‘ব্যাক চ্যানেল’ তৈরি করে যোগাযোগ চালু রেখেছে। সম্ভাব্য সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ চুক্তিকে ‘আব্রাহাম চুক্তি’-এর সম্প্রসারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আব্রাহাম চুক্তি কী

আব্রাহাম চুক্তি ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কয়েকটি আরব দেশ ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটি কৌশল। ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান ও মরক্কো এতে স্বাক্ষর করে। সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে সৌদি আরব সফরের সময় ট্রাম্প সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পরামর্শ দেন।

কিন্তু সিরিয়া-ইসরায়েল স্বাভাবিক সম্পর্ক কি সম্ভব? বিশ্লেষকদের মতে, ভবিষ্যতে এই সম্ভাবনা থাকলেও এখনই তা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে বৈরিতা অনেক পুরোনো। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ ও গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলি দখলদারির সময় এই বৈরিতা আরও তীব্র হয়।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গিডিয়ন সাআর স্পষ্ট করে বলেছেন, সিরিয়ার সঙ্গে যেকোনো চুক্তিতেও গোলান মালভূমি ইসরায়েলের অধীনে থাকবে। আবার আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ হলেও ইসরায়েল এরই মধ্যে সেখানে আরও ভূমি দখল ও বসতি সম্প্রসারণ করেছে।

সিরিয়ান লেখক রবিন ইয়াসিন-কাসাব বলেন, ‘সিরিয়াবাসী ক্লান্ত। তারা জানে, সিরিয়া এখন ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারবে না। তাই প্রেসিডেন্ট আল-শারা যদি আলোচনায় বসেন, তাতে জনগণের একাংশ সমর্থন দিতে পারে।’

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদ দেশ ছাড়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট গোলান মালভূমিতে নতুন বসতি নির্মাণের পরিকল্পনা পাস করে। বর্তমানে সেখানে ৩১ হাজারের বেশি ইসরায়েলি বসবাস করছে।

আল-শারা সরকার বলেছে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলতে রাজি। কিন্তু ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলছেন, আসাদের পতনের দিনই তিনি সেই চুক্তিকে বাতিল বলে ঘোষণা করেছেন।

সম্প্রতি টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান যাচি হানেগবি যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতিতে সিরিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা তদারক করছেন। এই আলোচনার মধ্যেই সিরিয়ার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, আল-শারা সরকার ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের বিনিময়ে যেকোনো চুক্তির পক্ষে।

সিরিয়া কী চাইছে

সিরিয়ার মূল দাবি—ইসরায়েল যেন তাদের ভূখণ্ডে হামলা বন্ধ করে। গত এক বছরে ইসরায়েল সীমান্তবর্তী বেশ কিছু অঞ্চল দখল করেছে, সেগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহারও চায় দামেস্ক। তবে পুরো গোলান ফেরত চাওয়া হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ইসরায়েল দক্ষিণ দামেস্কে সিরিয়ার সেনা মোতায়েনের বিরোধিতা করছে এবং সেখানে সংখ্যালঘু দ্রুজ সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার অজুহাতে হস্তক্ষেপের হুমকি দিচ্ছে। এদিকে সিরিয়ার দ্রুজদের একাংশ সরকারের প্রতি অনাস্থা জানালেও ইসরায়েলের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেছে।

ইসরায়েল কী চাইছে

ইসরায়েল চাইছে ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তির একটি হালনাগাদ রূপ, যেখানে একটি নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় সিরিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তির ভিত্তি স্থাপন করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত টম ব্যারাক বলেছেন, সিরিয়া-ইসরায়েল বিরোধ ‘সমাধানযোগ্য’ এবং আলোচনার সূচনা হতে পারে একটি ‘অনাক্রমণ চুক্তি’ দিয়ে। তবে সিরিয়ান লেখক ইয়াসিন-কাসাব বলেন, ‘এটা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত কঠিন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও ইসরায়েলের সহিংসতার হুমকির মধ্যেও।’

ইসরায়েলের আরও কিছু শর্ত রয়েছে; যেমন সিরিয়ায় তুর্কি সামরিক ঘাঁটি থাকবে না, ইরান বা হিজবুল্লাহর কোনো উপস্থিতি থাকবে না এবং দক্ষিণ সিরিয়া থাকবে নিরস্ত্র।

প্রসঙ্গত, ‘অনাক্রমণ চুক্তি’ বলতে দুটি দেশের মধ্যে সম্পাদিত এমন একটি চুক্তিকে বোঝায়, যেখানে দেশ দুটি একে অপরের বিরুদ্ধে আগ্রাসন না করার প্রতিশ্রুতি দেবে। এ ধরনের চুক্তি সাধারণত যুদ্ধের সম্ভাবনা কমানোর জন্য করা হয়। এর একটি বিখ্যাত উদাহরণ হলো জার্মান-সোভিয়েত অনাক্রমণ চুক্তি, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ১৯৩৯ সালের ২৩ আগস্ট জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

ইসরায়েলের সঙ্গে সিরিয়ার সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার আলোচনা চলছে ঠিকই, কিন্তু গোলান মালভূমির ভবিষ্যৎ, সামরিক উপস্থিতি ও আঞ্চলিক আধিপত্যের প্রশ্নে সমাধানে পৌঁছানো আপাতত কঠিন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তবে আল-শারা সরকার আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা অর্জনে আগ্রহী, এমন ইঙ্গিত মিলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দরপত্র ছাড়াই জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের কাজ পেল দুই প্রতিষ্ঠান, এরা কারা

ট্রাকে করে ৪৩ হাজার পৃষ্ঠার নথি ইসিতে জমা দিয়েও নিবন্ধন পেল না এনসিপি

বিধি লঙ্ঘন করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেন এনসিপি নেতা

এনবিআর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কুৎসা, বরখাস্ত নিরাপত্তাপ্রহরী

নোয়াখালীতে খালের ওপরের শতাধিক অবৈধ স্থাপনা, বাঁধ ও সড়ক উচ্ছেদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত