Ajker Patrika

রোমাঁ রোলাঁর জন ক্রিস্টোফার

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০: ৩০
রোমাঁ রোলাঁর জন ক্রিস্টোফার

তখন পাটনা কলেজে পড়ছেন অন্নদা শঙ্কর রায়। কলেজ ম্যাগাজিনে তাঁর লেখা ইংরেজি প্রবন্ধ নিয়মিত ছাপা হয়। কলেজের বাইরে বিভিন্ন লেখা বাংলা ও উড়িয়া ভাষায় ছাপা হয়। তিনটি ভাষার ওপরই তাঁর দখল এসেছে। বন্ধুরা মিলে হাতে লেখা যে ত্রিভাষী পত্রিকা বের করেছিলেন, তাতে বাংলা, ইংরেজি আর উড়িয়া ভাষায় লিখতেন অন্নদা।

যে সময়ের কথা হচ্ছে, তখন কলেজের অধ্যক্ষ ভি এস জ্যাকসন ছিলেন ছুটিতে। তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ই এ হর্ন। একবার তিনি হোস্টেলে এসে ছাত্রদের জড়ো করতে বললেন। সবাই এক জায়গায় হলে তিনি বললেন, ‘দশ বা পনেরো মিনিটের মধ্যে খাতা-কলম নিয়ে একটা প্রবন্ধ লিখতে হবে।’

যে ছেলেরা কাগজ-কলম নিয়ে ইংরেজিতে সেই প্রবন্ধ লিখতে বসে যায়, তাদের মধ্যে অন্নদা শঙ্কর একজন। যদি প্রবন্ধ ভালো হয়, তাহলে পাটনা ডিভিশনের কমিশনার বি সি সেন পুরস্কার দেবেন। প্রতিযোগিতায় প্রথম হলেন অন্নদা শঙ্কর রায়। পুরস্কার হিসেবে পেলেন কুড়ি টাকা। কিন্তু নগদ টাকা নেওয়ার ইচ্ছে ছিল না তাঁর। অধ্যক্ষকে গিয়ে অন্নদা শঙ্কর বললেন, ‘রোমাঁ রোলাঁর “জন ক্রিস্টোফার” উপন্যাসটি উপহার দিলে খুশি হব।’ মূল ফরাসিতে বইটি ছিল ১০ খণ্ডে, ইংরেজি অনুবাদ পাওয়া যায় ৪ খণ্ডে। সেটার প্রতিই অন্নদার আগ্রহ। দাম অবশ্য কিছুটা বেশি। পঁচিশ টাকা। অধ্যক্ষ মহাশয় গেলেন কমিশনারের কাছে। জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কি পুরস্কারের মূল্য আরও পাঁচ টাকা বাড়িয়ে দিতে পারেন? কমিশনার রাজি হলেন। তখন অন্নদা শঙ্কর রায়ের হাতে এসে পড়ল রোমাঁ রোলাঁর নোবেল পুরস্কার পাওয়া বিখ্যাত উপন্যাসটি।

উপন্যাসটি পড়ে অন্নদার মনে হলো, বাংলা ভাষায়ও এ রকম মহৎ উপন্যাস থাকা উচিত। কিন্তু লিখবে কে? কেন—অন্নদাই তো লিখতে পারেন! তবে সে জন্য পরিশ্রম করতে হবে। তিন ভাষায় লেখা ছেড়ে একনিষ্ঠ হতে হবে বাংলায়। এরপর বাংলায় মনোনিবেশ করেন তিনি। 

সূত্র: অন্নদা শঙ্কর রায়, নির্বাচিত রচনা, পৃষ্ঠা ৪৯০-৪৯১

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত