Ajker Patrika

গালাগাল

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১: ৪৫
গালাগাল

জীবনটা কেমন কেটেছিল মির্জা গালিবের, তা নিয়ে অনেক কথা রয়েছে। ডুবে থাকতেন মদে, সেরা মদটা জোগাড় করা চাই। আর লিখতেন মন খুলে। তাঁর লেখালেখির কারণেই তিনি এখনো বেঁচে আছেন মানুষের মনে। এবং তাঁর জীবনযাপন পদ্ধতির জন্যও।

বড় ফারসি কবি বলে স্বীকৃতি মেলেনি গালিবের। উর্দু কবিতা ভালো লাগত না তাঁর। কিন্তু সেই উর্দু কবিতাই একসময় হয়ে উঠল তাঁর দিনরাত্রির কাব্য।

মোগল শাসনের অবসানের পর ১৮৫৭ সালের বিষাদময় ঘটনাবলি দেখেছেন গালিব। তখন তাঁর চোখের সামনে নিরাশার অন্ধকার। আবার বসন্তে নতুন প্রাণের বিজয়বার্তাও তাঁর দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। একজন ভারতবর্ষীয় মানবের চোখে ধীরে ধীরে উন্মুক্ত হচ্ছে আধুনিক কাল। যা কিছু মহান বলে ভেবেছেন, তার সবকিছুই ভেঙে পড়ছে। তাই মির্জা গালিবের কাছে পাতাঝরা হেমন্ত আর ফুল ফোটা বসন্তের মধ্যে কোনো ফারাক নেই। হেমন্ত আর বসন্তের ঋতু পরিবর্তনে তাঁর জীবনের কোনো পরিবর্তন হয় না। নিজের সম্পর্কে লিখছেন, ‘সেই আমি, সেই খাঁচা আর ডানা পালক হারাবার মাতম।’

একদিন একটি অভিধানের ভুল ধরিয়ে দিয়ে লেখালেখি করলেন। তাতে ভাষার জগতে উঠল আলোড়ন। যা লিখলেন তা নিয়ে আলোচনা নয়, মূলত গালিবকে গালাগালি করা শুরু হলো। বেনামি চিঠিতে ভরে গেল ডাকপিয়নের ঝুলি। সেই সব এসে হাজির হতে লাগল গালিবের কাছে। প্রেরকের নামহীন এক চিঠি দেখে গালিব তা তার শাগরেদকে দিলেন। বললেন, ‘পড়ে দেখো তো!’

চিঠিতে গালিগালাজ। শাগরেদ চুপ। গালিব নিজে পড়ে হেসে বললেন, ‘গাধাটা গালও দিতে জানে না। বুড়ো লোককে মা ধরে গাল দিতে নেই। এদের গাল দিতে হয় মেয়েকে নিয়ে। জোয়ান লোককে গাল দিতে হয় বউকে নিয়ে। এদের বউয়ের জন্য মনে ভালোবাসা থাকে। আর বাচ্চাকে গাল দিতে হয় তার মায়ের নাম ধরে। কারণ, এর চেয়ে আপন তার আর কেউ নেই। এ যে আমার মতো বাহাত্তর বছরের বুড়োকে মা ধরে গাল দিচ্ছে!’ 

সূত্র: জাভেদ হুসেন, মির্জা গালিবের সঙ্গে আরও কয়েকজন, পৃষ্ঠা ১৫-৩৯

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত