Ajker Patrika

নায়িকা দেখতে ঢাকায় এসে জায়গার নাম নিয়ে বিব্রত

আপডেট : ১১ জুলাই ২০২২, ১৭: ৪৪
নায়িকা দেখতে ঢাকায় এসে জায়গার নাম নিয়ে বিব্রত

তখন পাকিস্তান আমল। আমিও স্কুলের গণ্ডি পেরোইনি। দিনাজপুর জেলা ভেঙে তিনটি জেলাও হয়নি। অনেক কিছুই তখনো হয়নি। হয়নি সড়কপথে সরাসরি উত্তরের সুদূর এক থানা থেকে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকায় আসার ব্যবস্থাও। আমি হাইস্কুলের পাঠ শেষ না করলেও সিনেমা দেখার ঝোঁক ছিল। সুভাষ দত্তের সুতরাংসহ বিভিন্ন ছায়াছবির নায়িকা মিষ্টি মেয়ে কবরী তখন ভালো লাগার তালিকার শীর্ষে। যাকে বলে রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার মতো ব্যাপার। আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার নাম করে কবরী দর্শনে ঢাকা পর্যন্ত ছুটেছিলাম। কত কাণ্ড করেই না তখন ঢাকা আসতে হতো। আমিও বাস-ট্রেন-স্টিমার ইত্যাদি যানে চড়ে প্রায় দিন পার করে ঢাকা এসে পড়েছিলাম মহা ফাঁপরে। 

ঢাকা তখনো এখনকার মতো পেল্লায় শহর হয়ে না উঠলেও রাজধানী শহর তো ছিলই। কবরীকে দেখার জন্য মোক্ষম জায়গা এফডিসি বলে এক বড় ভাইয়ের কাছে জেনেছিলাম। তো কী করা, আমি কবরীকে একনজর দেখার জন্য এফডিসির সামনে ধরনা দিলাম।। কিন্তু দুদিন এফডিসির আশপাশে ঘুরঘুর করেছি কবরীদর্শন হয়নি। এত সহজে যে নায়িকা দেখা যায় না, তা তো আর তখন জানতাম না। কিন্তু কবরীর দেখা না পেলেও হয়েছিল এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। আমার চেহারাসুরত, বেশভূষা দেখে কারও বুঝতে অসুবিধা হতো না যে, আমি এক গাঁইয়া। এক রিকশাচালক জানতে চাইলেন, আমার বাড়ি কোথায়? আমি বললাম, ‘বোদা, দিনাজপুর জেলা।’ রিকশাওয়ালা তো হেসে খুন। বললেন, ‘ওইহানেও আবার থাকন যায়নি?’ 

আমি তার এই কথার মাথামুণ্ডু কিছু তখন বুঝিনি। পরে একজনকে বিষয়টি বলায় তিনি আমাকে বললেন, ‘বোদা’ শব্দ নিয়ে ঢাকাইয়ারা হাসি-তামাশা করে। তিনি আমাকে বুঝিয়ে বলায় আমি একটু লজ্জা পেলাম। আমাদের জায়গার নাম শুনে দেশের কোনো কোনো অঞ্চলের মানুষ এ রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে—বিষয়টি আমার ভালো লাগল না। হতাশ মনে বাড়ি ফিরে ‘বোদা’ নামটি বদলানোর জন্য কিছু তৎপরতা শুরু করলাম। তখন দৈনিক আজাদ ছিল জনপ্রিয় পত্রিকা। তো, আমি আজাদে একটি চিঠি লিখলাম, ‘বোদা’ নাম পাল্টানোর যুক্তি দিয়ে। 

বোদার মুরব্বিরা আমার এই তৎপরতা ভালো চোখে দেখলেন না। একদিন কয়েকজন আমাকে ডেকে একটু শাসিয়ে বললেন, ‘বিরাট পণ্ডিত হইছিস মনে হচে। খবরের কাগজত লেখেছিস। দোকানির ব্যাটা (আমার বাবার গালামালের দোকান ছিল) এলা হামাক নতুন জ্ঞান দেছে। হামার বাপদাদা চৌদ্দগুষ্টির বোদা নামে সমস্যা হয়নি। এলা দোকানির ব্যাটার হচে। দুই দিনের বৈরাগী ভাতক কহেছে অন্ন।’ 

আরও অনেক কিছুই বললেন। মোদ্দা কথা হলো, আমার ভালো না লাগলে আমি যেন বোদা ছেড়ে চলে যাই। তারা কিছুতেই বোদার নাম বদলানো মানবেন না। তোমার যেখানে সাধ যাও, আমরা থাকব এই বোদায়—অনেকটা এই রকম আর কি! 

বোদার নাম বদলানো নিয়ে আমি আর কখনো কিছু বলিনি। নামের সঙ্গে আসলে গভীর আবেগ জড়িত। নামকে মানুষ ভালোবাসে। নাম হলো আইডেনটিটির বাহন। সে ব্যক্তির নাম হোক কিংবা হোক জায়গা বা প্রতিষ্ঠানের। কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন হলেও তাকে নিয়ে বিদ্রূপ করা মূর্খতা। তা ছাড়া, এক অঞ্চলের বুলি আর এক অঞ্চলের গালি—এ কথাও তো আমাদের জানা। বোদা নামের বিকৃত উচ্চারণে কেউ যদি শরম পায়, পাক। সেটা একান্তভাবেই তার ব্যক্তিগত বুঝের ঘাটতিজনিত সমস্যা; বোদাবাসীর সমস্যা নয়। আইয়ুব খান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বোদার নাম আইয়ুবগঞ্জ করার একটি ব্যর্থ উদ্যোগের কথাও আমরা শুনেছি। 

নাম বিকৃতি নিয়ে একটি ঘটনা মনে পড়ছে। রাজেন্দ্র লাল ভদ্র ছিলেন বোদা হাইস্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক। তাঁর বড় ছেলের নাম ছিল গোরা। একদিন কোনো কারণে ফখরুল ইসলাম মানিক ভাইকে তিনি মাঙ্কি বলে সম্বোধন করেন। (মাঙ্কি—বানর) < মানিক > বিকৃত করে। মানিক ভাই ছাড়বার পাত্র নন। সঙ্গে সঙ্গে স্যারকে প্রশ্ন করেন, ঘোড়াদা (গোরা) কেমন আছে স্যার? স্যার সেদিন বুঝেছিলেন নাম বিকৃতি ভালো নয়। 

আজকাল অবশ্য নাম বদল অনেকের কাছে একধরনের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিবর্তন করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের নাম, এমনকি জায়গার নামও। হুজুগে মাতার এ অভ্যাস পরিহার করা উচিত। আগেই বলেছি, নাম হলো পরিচয়জ্ঞাপক একটি বিষয়। একবার একনামে পরিচিতি তৈরি হওয়ার পর সেটা বদলানোর প্রয়োজনীয়তা আমার কাছে জরুরি বলে মনে হয় না। আমার নাম বিভু। আমার নাম তো শিবুও হতে পারত। এখন বিভু নামেই আমাকে আমার পরিচিতজনেরা চেনেন, জানেন। এখন যদি আমি শিবু নাম নিই, সেটা তো বিভ্রান্তি তৈরি করবে। 

মুসলমানদের নাম রাখা হয় আকিকার মাধ্যমে। হিন্দুদেরও নামাকরণের আনুষ্ঠানিকতা আছে। ধর্মীয় বিধান মেনে না হয় মানুষের নাম হয়, কিন্তু জায়গার নাম রাখা হয় কীভাবে? আমার জানামতে, জায়গার নাম সম্ভবত কোনো অনুষ্ঠান করে রাখা হয় না। জনশ্রুতি আছে যে কলকাতার নাম হয়েছিল এভাবে—কলকতা নামে কোনো জায়গা ছিল না। এখন যে কলকাতা শহর, একসময় সেটা ছিল ফসলের খেত। একদিন এক চাষি আগের দিন কাটা ধানের আঁটির বোঝা বেঁধে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছিল। পথে এক ইংরেজ সাহেব চাষির কাছে ওই জায়গার নাম জানতে চান। চাষি তো ইংরেজি বোঝে না। সাহেব কী বলছে বুঝতে না পেরে সে ধরে নেয় যে, তার ধান কবে কাটা হয়েছে সেটাই হয়তো সাহেব জানতে চাইছে। তাই জবাব দেয় ‘কাল কাটা'। ব্যস, সাহেব ধরে নেন জায়গার নাম—কালকটা। সেই কালকাটা থেকেই কলকাতা। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? না হোক। কিন্তু মনে রাখবেন, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহু দূর। 

তাই আমার এলাকাবাসীর প্রতি আবেদন, আসুন, বোদার নাম পরিবর্তনের চেয়ে বোদাকেই মনের মন্দিরে ঠাঁই দিয়ে বোদার উন্নতি ও সমৃদ্ধিতে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করি। বাহারি নাম ধারণ করে কী হবে, যদি বোদা অন্য জায়গার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকে। নামে কীই-বা আসে-যায়। বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট—এমন অবস্থা কাম্য নয়। 

আমি বোদা বলতে শুধু বোদা বাজার এলাকা বুঝি না। আমার বোদা পুরো বোদা উপজেলা এবং চারপাশের এলাকাও। যারা কোনো একসময় বোদায় ছিলেন, অথবা বোদা স্কুলে লেখাপড়া করেছেন, এখনো নিজেদের বোদার মানুষ বলে পরিচয় দেন—এসব নিয়েই আমার বোদা। 

এ প্রসঙ্গে একটি গল্প মনে পড়ছে। ছোটবেলায় আমরা পড়েছি, গ্রাম কাহাকে বলে। একটু ওপরের ক্লাসে উঠে দেখি জায়গার নামের সঙ্গে গ্রাম শব্দটি থাকলেও সেগুলো অনেক বড় জায়গা। সে জন্য গ্রাম কাকে বলে জিজ্ঞাসা করলে আমরা বলতাম, কোন গ্রাম? ছোট, মাঝারি, নাকি বড়। আমাদের কাছে ছোট গ্রাম ছিল মাঝগ্রাম, যেটা বোদা থানার মধ্যে পড়েছে। মাঝারি গ্রাম হলো কুড়িগ্রাম, যেটা এখন একটি জেলা। আর বড় গ্রাম হলো চট্টগ্রাম জেলা, বিভাগ—সবই। আমি যদি দূরে কোথাও গিয়ে বলি, আমার বাড়ি বোদা, তাহলেই যথেষ্ট। সেখানে মাড়েয়া, চন্দনবাড়ি নাকি ঝলইশালশিরি, সে প্রশ্ন ওঠে না। তেমনি কেউ যখন বলেন তাঁর বাড়ি কুড়িগ্রাম, তখন কুড়িগ্রামের কোন উপজেলা কিংবা ইউনিয়ন, সেটা না জানলেও সমস্যা নেই। ঠিক কেউ তাঁর বাড়ি চট্টগ্রাম বললেও আমাদের বুঝে নিতে সমস্যা হয় না। বোদা আমাদের নাড়ির বন্ধনে আবদ্ধ। বোদা আমাদের প্রথম প্রেম। তাই বোদা নিয়ে কোনো বিরূপ কথা নয়। 

এবার একটি সতর্কবার্তা। বোদা নিয়ে লিখতে শুরু করেছি বলে কেউ আবার মনে করবেন না যে, আমি সাগর সেচে কোনো মানিক এনে দেব। আমি ইতিহাসবিদ নই, নই উঁচু মাপের গবেষক। আমি একেবারেই একজন সাধারণ কলমজীবী মানুষ। বোদার হাজার বছরের ইতিহাস চর্চা আমি করব না। তা ছাড়া, আমার কাছে ইতিহাস মানে শুধু মাটি খুঁড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বের করা নয়, আমার কাছে ইতিহাস হলো মানুষ। মানুষ যে পরিবেশ, আর্থসামাজিক অবস্থায় বসবাস করে, সেটা এবং তার জীবনধারণ, জীবনধারণের সংগ্রাম, তার সাফল্য-ব্যর্থতা—এ সবকিছুই আমার কাছে ইতিহাস। ইতিহাস মানুষের সৃষ্টি। মানুষই ইতিহাস তৈরি করে। যেমন ইতিহাস তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

জীবনে প্রথম কবরী নামের এক নায়িকাকে দেখতে ঢাকা এসে যে বিড়ম্বনার মুখে পড়েছিলাম, তা লিখতে গিয়ে কত বাড়তি কথা লিখে ফেললাম। বেশি কথা বলাও আমাদের এক বদ হেবিট! ও হ্যাঁ, আরেকটি কথা, পরে এটাও জেনেছিলাম যে, কবরী নামের আড়ালে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল চট্টগ্রাম থেকে আসা স্কুলপড়ুয়া এক বালিকার পারিবারিক নাম—মিনা পাল।

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সম্পাদকীয়
সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।

অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।

তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।

কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।

সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।

পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আমাদের অর্জন অনেক

সম্পাদকীয়
আমাদের অর্জন অনেক

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।

এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।

সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত