Ajker Patrika

আন্তর্জাতিক নারী

পারমাণবিক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ হয়েও নোবেল পাননি যাঁরা

ফিচার ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পারমাণবিক গবেষণা আজকের বিষয় নয়। এ বিষয়ে সব সময় রিচার্ড ফাইনম্যান, আলবার্ট আইনস্টাইন, ওপেন হাইমারসহ অনেক পুরুষ বিজ্ঞানীর নাম উচ্চারিত হয়। কিন্তু দুটি সফল গবেষণা করেছিলেন নারীরা। যে গবেষণাগুলো পারমাণবিক চুল্লি এবং পারমাণবিক অস্ত্রের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। নিউক্লিয়ার যুগের সূচনাকালের তেমনি দুজন কিংবদন্তি বিজ্ঞানী লিজে মাইটনার ও চিয়েন শিউং উ।

নিউক্লিয়ার বিভাজনের রহস্যভেদ

লিজে মাইটনার পেশায় ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী। তবে পুরো পরিচয়ের ক্ষেত্রে বলতে হবে, তিনি ছিলেন রেডিও অ্যাকটিভ ও নিউক্লিয়ার পদার্থবিদ্যার অগ্রদূত। বিশ শতকের নারী বিজ্ঞানীদের মধ্যে মেরি কুরির পরই তাঁর নাম উচ্চারিত হয়। ১৯৩৮ সালে মাইটনার ও তাঁর ভাতিজা অটোহান প্রথমবারের মতো নিউক্লিয়ার ফিসন বা পারমাণবিক বিভাজন প্রক্রিয়াটি সফলভাবে ব্যাখ্যা করেন। এই আবিষ্কার পারমাণবিক চুল্লি এবং পারমাণবিক অস্ত্রের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মাইটনার কখনো এই জ্ঞানের সামরিক ব্যবহারকে সমর্থন করেননি। তিনি নাৎসি জার্মান থেকে পালিয়ে সুইডেনে চলে যান এবং আজীবন পরমাণু শক্তির সামরিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান ধরে রাখেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বোমার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখতে চাই না!’ নিউক্লিয়ার শক্তিকে শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের স্বপ্নই ছিল তাঁর আবিষ্কারের প্রেরণা।

১৯৪৪ সালে নিউক্লিয়ার ফিসনের জন্য অটোহান একা নোবেল পুরস্কার পান রসায়নবিজ্ঞানে। অথচ মাইটনার ছিলেন এই আবিষ্কারের পেছনে সমান গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। পরবর্তী সময়ে বহু বিজ্ঞানী, যেমন রিচার্ড ফাইনম্যান ও আলবার্ট আইনস্টাইন এর নিন্দা করেছিলেন। এটিই বিজ্ঞানের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বড় অবমূল্যায়ন’ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে মাইটনার হতাশ না হয়ে শান্তভাবে নিজের কাজ করে গেছেন। ১৮৭৮ সালের ৭ নভেম্বর লিজের জন্ম হয় অস্ট্রিয়ায়। তিনি ১৯৬৮ সালের ২৭ অক্টোবর মারা যান ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ শহরে। লিজে প্রথম ইউরোপিয়ান নারী হিসেবে

জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ হিসেবে অধ্যাপনা করেন। তাঁর সম্মানে ১৯৯৭ সালে মৌলিক পদার্থ মেইটনেরিয়ামের নামকরণ করা হয়।

পারমাণবিক বিভাজনের রানি

চীনা-মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী চিয়েন-শিউং উ নিউক্লিয়ার ফিজিকস ও তেজস্ক্রিয়তা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন। চিয়েনকে ‘চীনা ম্যাডাম কিউরি’ ও ‘নিউক্লিয়ার গবেষণার রানি’ বলা হয়। তাঁর গবেষণা মূলত ছিল তেজস্ক্রিয়তা ও নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্য নিয়ে।

১৯৫৬ সালে চিয়েন তাঁর বিখ্যাত গবেষণাটি করেন। সেখানে তিনি গ্যাসীয় ব্যাপনের মাধ্যমে ইউরেনিয়াম ধাতুকে ইউ-২৩৫ ও ইউ-২৩৮ আইসোটোপে পৃথক করতে সাহায্য করেন। এই আবিষ্কারের জন্য তাঁর সহকর্মী সুং-দাও লি ও চেন নিং ইয়াং ১৯৫৭ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লিজে মাইটনারের মতো চিয়েন-শিউং উ তাঁর বিখ্যাত আবিষ্কারের জন্য নোবেল পাননি। তিনি ম্যানহাটান প্রকল্পে কাজ করেছিলেন। যুদ্ধের শেষ সময়ে তিনি যুদ্ধবিরোধী অবস্থানে চলে যান। চিয়েন-শিউং উ নারীদের বিজ্ঞানচর্চায় উৎসাহিত করার জন্য কাজ করে গেছেন।

পারমাণবিক পদার্থবিদ্যায় যুগান্তকারী অবদানের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে চাঁদের বুকে একটি গিরিখাতের নাম রাখা হয়েছে উ ক্রেটর। চীনের জিয়াংসু প্রদেশে ১৯১২ সালের ৩১ মে জন্মেছিলেন চিয়েন। ১৯৯৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে তিনি মারা যান।

সূত্র: ব্রিটানিকা, নিউক্লিয়ার মিউজিয়াম, ইইপাওয়ার ডটকম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত