Ajker Patrika

আমি দিনের পর দিন কাউকে ডিস্টার্ব করে গেছি: ফেসবুকে লিখে ঢাবি শিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৫, ০০: ২৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সঞ্জু বড়াইক। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সঞ্জু বড়াইক। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সঞ্জু বড়াইক (২৩) ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। আজ সোমবার ভোররাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের রবীন্দ্র ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন তিনি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আত্মহত্যার কয়েক ঘণ্টা আগে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন সঞ্জু। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি, আমি দিনের পর দিন কাউকে ডিস্টার্ব করে গেছি, উল্টো মানুষকে দোষারোপ করা আমার একদম ঠিক হয়নি, আমি সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি দিনের পর দিন অন্যায় করেছি, নিজের দোষ ঢেকে অপরজনকে দোষ দেওয়া আমার ঠিক হয়নি। আমি সকলের কাছে ক্ষমা চাইছি, আমার কারণে কারও কোনো ক্ষতি হলে সে দায় একান্তই আমার, আমি ক্ষমা চাইছি।’

হলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, সঞ্জু ভোরের দিকে ছাদে যান এবং প্রায় দেড় ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করেন। সকাল ৫টা ৩৬ মিনিটে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী তাঁকে ছাদ থেকে লাফ দিতে দেখেন। এরপর দ্রুত বিষয়টি দারোয়ান ও হল প্রাধ্যক্ষকে জানানো হয়। তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি।

ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী ইনচার্জ মো. মাসুদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভোররাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা সঞ্জুকে হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রথমে তাঁর পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পরে শাহবাগ থানা-পুলিশ তাঁর পকেটে থাকা নৃবিজ্ঞান বিভাগের একটি প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে এবং সহপাঠীদের সহযোগিতায় তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করে।

জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক দেবাশীষ পাল জানান, সঞ্জু মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন বলে তাঁর বন্ধুরা জানিয়েছেন। গত দুই দিন তিনি হলে ছিলেন না, ছিলেন এক বাল্যবন্ধুর বাসায়। আজ ভোররাতে হলে ফিরে কিছুক্ষণ পরই ছাদে উঠে যান।

এ বিষয়ে জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ববি বিশ্বাস জানান, সঞ্জুর সাঁওতাল গোষ্ঠীর এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। কিছু বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে কিছুটা মনোমালিন্য চলছিল। এ ছাড়া তিনি আর্থিকভাবেও কিছুটা সমস্যায় ছিলেন। সম্ভবত এসব কারণেই সঞ্জু আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

সঞ্জুর চাচাতো বোন অনুরাধা বাড়াইক বলেন, ‘আমরা সঞ্জুর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। সেখানেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।’

সঞ্জুর গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায়। তিনি চুনারুঘাট সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। জগন্নাথ হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন তিনি। তাঁর মা স্থানীয় একটি চা-বাগানের শ্রমিক। সম্প্রতি চা-শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে অনুষ্ঠিত আন্দোলনে সঞ্জু সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত