Ajker Patrika

পারিবারিক আদালতে বিচারাধীন ৭৪ হাজারের বেশি মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

পারিবারিক বিরোধে দ্রুত ও সহজ বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের পারিবারিক আদালতে বর্তমানে ৭৪ হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে নিষ্পত্তিহীন অবস্থায় রয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি মামলা। এই দীর্ঘসূত্রতা হাজারো পরিবারকে আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর।

আজ সোমবার (১৪ জুলাই) ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে ‘যথাসময়ে বিচার নিশ্চিত করতে পারিবারিক আদালতের পদ্ধতিগত জটিলতা নিরসন’ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় বক্তাদের আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে। ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা (সেলপ) কর্মসূচি এই কর্মশালার আয়োজন করে।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি পারিবারিক আদালতের দীর্ঘসূত্রতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৭৪ হাজার ২৫৯টি মামলা বিচারাধীন, যার মধ্যে ৫ হাজার ৩৪টি মামলা পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। তবে একই সময়ে ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে ১০ হাজার ৮৯টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। তিনি এটিকে বিচারক এবং বার নেতৃবৃন্দের ইতিবাচক জনমুখী দৃষ্টিভঙ্গির ফল বলে উল্লেখ করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারপ্রক্রিয়ায় পদ্ধতিগত অদক্ষতা দূর করতে দেওয়ানি কার্যবিধির সাম্প্রতিক সংশোধনের মাধ্যমে মামলা পরিচালনা কার্যক্রমের স্তর কমানো হয়েছে, যা অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব ও জটিলতা কমাবে।

প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন ছাড়া কোনো বিচারব্যবস্থা সময়সূচি, জনবল বা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে না। এই কাঠামোগত স্বাধীনতা বিচার বিভাগের অভ্যন্তরীণ সংস্কার এবং বৃহত্তর শাসনব্যবস্থার সংস্কার রক্ষায় অপরিহার্য।

কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব। তিনি কর্মশালাকে সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, এখানে বিচার বিভাগ, সরকারি প্রতিষ্ঠান, আইনি সেবা প্রদানকারী সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছেন। এটি বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারকে ন্যায়বিচারে সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিতে সবার সম্মিলিত প্রতিশ্রুতিকে পুনর্ব্যক্ত করছে।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, একটি সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজে প্রত্যেক নারী ও কিশোরী ক্ষতিকর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ না থেকে তার পূর্ণ সম্ভাবনা বিকাশের সুযোগ পায়। সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্র্যাকের বহুমাত্রিক কার্যক্রম উল্লেখ করেন তিনি। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জনগণকে সম্পৃক্ত করা, তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নীতিগত ও আইনগত সহায়তা নিশ্চিত করা। তিনি জানান, সাধারণ মানুষ, বিশেষত নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, এমন বাধাগুলো দূর করতে কাজ করছে ব্র্যাক।

স্বাগত বক্তব্যে সেলপ ও জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি (জিজেডি) কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে শুধু আদালতের পদ্ধতিগত জটিলতা দূর করতে কাজ করছি না, বরং বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছি। বিচারপ্রার্থী ভুক্তভোগীদের মর্যাদা রক্ষা করে একটি ন্যায়সংগত, সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ার কাজ করছি।’

কর্মশালায় বিচারক, নীতিনির্ধারক, জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা এবং অভিজ্ঞ আইনজীবীরা অংশ নেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত