Ajker Patrika

সড়কের ১০ স্থানে চাঁদাবাজি

  • উপজেলার প্রতিটি সড়কে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে চালকদের দিতে হচ্ছে চাঁদা।
  • যানবাহনভেদে প্রতিটি থেকে দৈনিক ২০ থেকে ১ হাজার টাকা আদায়।
  • প্রতিটি পয়েন্টে রয়েছে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের নিয়োগ দেওয়া ‘লাইনম্যান’।
রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী) 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রতিটি সড়কে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে চাঁদা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, যানবাহনভেদে প্রতিটি থেকে দৈনিক ২০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। চাঁদা দিয়ে নিতে হয় টোকেন। চালকদের অভিযোগ, দেশের সরকার পরিবর্তন হলেও বন্ধ হয়নি চাঁদাবাজি। থানা-পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করেই এই চাঁদাবাজি চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ১০টি পয়েন্টে চাঁদা দিতে হয় গাড়িচালকদের। এ জন্য সেখানকার প্রতিটি পয়েন্টে বা স্ট্যান্ডে রয়েছে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের নিয়োগ

দেওয়া আলাদা ‘লাইনম্যান’। ব্যাটারিচালিত এবং পায়ে চালানো রিকশা, পিকআপ, বাস, টেম্পো কোনো কিছুই নেই চাঁদার বাইরে।

নীলফামারী বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সৈয়দপুর থেকে দিনাজপুর, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচল করে দুই শতাধিক যাত্রীবাহী কোচ। সব মিলিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার।

সৈয়দপুরের ২ নম্বর রেলগেট থেকে নীলফামারী সদর পর্যন্ত সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (ইজিবাইক) চালান মো. মুন্না। তিনি বলেন, এ সড়কে যাতায়াত করতে প্রতিদিন ৩০ টাকা দিয়ে টোকেন নিতে হয়। টাকা না দিলে এ সড়কে গাড়ি চালানো বন্ধ। মুন্না বলেন, ‘আবার ঘুরে এসে দিচ্ছি—এমন আবদারও টেকে না; আগের দিনের আয় থেকেই চাঁদার টাকা রেখে দিতে হয়।’

মুন্না আরও বলেন, গত বছর সৈয়দপুর বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়েছিল রংপুর র‍্যাব-১৩। ওই সময় ইজিবাইক, বাস, পিকআপ, ডাম্প ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার পর থেকে কিছুদিন বন্ধ ছিল। এখন আবার আগের অবস্থায় ফিরেছে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শুধু চাঁদাবাজদের হাত বদল হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইজিবাইকচালক জানান, উপজেলার ১ নম্বর লেভেল ক্রসিং, চৌমুহনী, বাস টার্মিনাল, ওয়াপদা মোড়, মিস্ত্রিপাড়া মোড়, শহীদ তুলসীরাম সড়ক মোড়, রাবেয়া মোড়, পার্বতীপুর রোড মোড়, ঢেলাপীরসহ ১০টি স্ট্যান্ড বা পয়েন্টে বিভিন্ন পরিবহন থেকে প্রতি মাসে কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়। যানবাহনভেদে দৈনিক ২০ টাকা থেকে হাজার টাকা আদায় করা হয়। শহরের ২ নম্বর লেভেল ক্রসিং থেকে নীলফামারী সদর পর্যন্ত প্রতিদিন ২০০ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। এ সড়ক থেকে তিন লাখ টাকা চাঁদা আদায় হয়। বিভিন্ন সংগঠনের নাম ব্যবহার করে অনুদানের নামে রসিদের মাধ্যমে আদায় করা হচ্ছে এসব চাঁদা। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি পয়েন্ট ঘিরে রয়েছে শ্রমিক সমিতি কিংবা মালিক সমিতির নামে-বেনামে বিভিন্ন সংগঠন। আর এগুলোর নেতৃত্বে থাকছেন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও প্রভাবশালীরা। তাঁদের সমন্বয়েই গড়ে উঠেছে পরিবহন খাতের চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট।

অনুসন্ধানে চাঁদা আদায়কারী বিভিন্ন সংগঠনের নাম জানা গেলেও এসব সংগঠনের কোনো কমিটি না থাকায় সেগুলোর নেতার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তাই তাঁদের কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দপুর ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) মাহফুজার আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পরিবহন খাতে চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। আর কোনো সমিতি বা সংগঠন যদি চাঁদা নেয়, সেটা সেই সমিতি বা সংগঠনের দায়ভার।’

এ কর্মকর্তা আরও বলেন, এর সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ট্রাফিক পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত