Ajker Patrika

গল্প-আঁকায় মগ্ন থাকেন মাহ্‌জাবীন

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
গল্প-আঁকায় মগ্ন থাকেন মাহ্‌জাবীন

তিনি একজন গৃহিণী। দুই সন্তানের মা। ঘর-সংসার সামলে লেখালেখি করেন। আঁকেন সুন্দর সব ছবি। প্রায় ২০০ বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন। এই গল্পকার আঁকিয়ের নাম নিসা মাহ্‌জাবীন। ময়মনসিংহের আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন নিসা। পরিবার নিয়ে বসবাস করেন ময়মনসিংহে। স্বামী সৈয়দ মোমিনুল হক মাসুদ প্রভাষক হিসেবে কর্মরত।

যেভাবে লেখালেখি শুরু
নিসার বাবা অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমান লেখালেখি করতেন। ছোটবেলা থেকে বাবার লেখালেখি দেখে বড় হয়েছেন নিসা। বাবা কিছু কিছু লেখা পড়তে দিতেন তাঁকে। একদিন বাবা নিসাকে লিখতে বললেন। এরপর তিনি ইভ টিজিং নিয়ে বিশাল এক লেখা লিখে বাবাকে দিলে বাবা সেটা পাঠিয়ে দিলেন পত্রিকা অফিসে। সে পত্রিকায় বাবা ও মেয়ের লেখা একই দিনে ছাপা হলো। এভাবেই নিসা লেখালেখির জগতে ঢুকে পড়েন। 

প্রথম বই
নিসার লেখা প্রথম বইয়ের নাম ‘টুকুনের লাল জামা’। সাতটি শিশুতোষ গল্প নিয়ে ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয়েছিল সে বই। এ পর্যন্ত মোট চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। এগুলোর মধ্যে তিনটি বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলংকরণ তিনি করেছেন। শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা নিসার প্রথম উপন্যাস ‘মিশন হাকিম নগর ’৭১’। এ ছাড়া আছে শিশুতোষ গল্পের বই ‘চা বাগানে বাঘ’ ও ‘বাঁশঝাড়ে আতঙ্ক’। বইয়ের বাইরে তিনি দেশের প্রথম সারির বিভিন্ন পত্রিকায় লিখছেন ২০০৭ সাল থেকে।

ছবি আঁকার গল্প
ছবি আঁকার প্রতি নিসার আগ্রহ ছোটবেলা থেকে। কাগজে ছবি এঁকে বন্ধুদের উপহার দিতেন। বিয়ের পরে তাঁর আঁকাআঁকি নতুন মাত্রা পায়। অনলাইনে তাঁর প্রথম আয় পোর্ট্রেট আঁকার মাধ্যমে। ছবি আঁকার ক্ষেত্রে নিসা ছোটদের পছন্দের বিষয় বিবেচনায় রাখেন। অবশ্য বড়রাও তাঁর আঁকা অপছন্দ করেন না। বইমেলায় তাঁর আঁকা প্রচ্ছদ দেখে অনেক লেখক ও প্রকাশক তাঁকে প্রচ্ছদ এবং অলংকরণের কাজ দিয়েছেন। 

পুরস্কার
২০১৮ সালে ‘টুকুনের লাল জামা’ বইটির জন্য চলন্তিকা প্রকাশনী থেকে চলন্তিকা তরুণ লেখক পুরস্কার পান নিসা। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘মিশন হাকিম নগর ’৭১’-এর জন্য ২০১৯ সালে জিতে নেন পেন্সিল পাণ্ডুলিপি পুরস্কার।

আয়ের গল্প
লেখালেখি ও আঁকাআঁকি করতে ভালোবাসেন নিসা। তারপরও এসব থেকে তাঁর যা আয় হচ্ছে, তা মন্দ নয়। ছবি আঁকা থেকেই মূলত তাঁর আয় হয় বেশি। 

ইউটিউব থেকে শেখা
ছবি আঁকা বা লেখালেখি—কোনোটাতেই নিসা মাহ্‌জাবীনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। মূলত ইচ্ছাশক্তির ওপর ভর করেই তিনি এত দূর এসেছেন। নিজে নিজে চর্চা করেছেন। কোথাও আটকে গেলে ইউটিউবের সাহায্য নিতে ভোলেন না। নিসা বলেছেন, ‘ইউটিউব আমার নিজেকে তৈরি করতে অনেকাংশে সাহায্য করেছে।’

শিক্ষকতায় মন বসেনি
বিয়ের পর কিছুদিন তিনি ড. সিরাজুল ইসলাম একাডেমিতে চারু ও কারুকলার শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রথম সন্তানের জন্ম হওয়ার পর নিসার মনে হলো, এমন কিছু করবেন, যেটা বাসায় বসে করা যাবে। তাঁর কাছে ক্যারিয়ারের পাশাপাশি পরিবার সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই আঁকাআঁকি ও লেখালেখিকে পেশা হিসেবে বেছে নিলেন। 

পরিবার বড় সহায়
নিসার লেখালেখিতে নিসার স্বামী, শ্বশুর কিংবা শাশুড়ি কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াননি। স্বামী মাসুদ আঁকাআঁকি, লেখালেখিতে সহায়তা করেছেন সব সময়। নিসার গল্প বা উপন্যাসের চরিত্রগুলো তাঁর পরিবার ও আশপাশ থেকে উঠে আসে। যেমন মিশন হাকিম নগর ’৭১ উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র ইশিতা। এই চরিত্র নিসা তৈরি করেছেন তাঁর শাশুড়ির ছোটবেলাকে অবলম্বন করে।

নিসার জনপ্রিয় গল্পগুলোর মধ্যে আছে তিন বন্ধু, টুকুনের লাল জামা। সহজ ভাষায় লেখা এই গল্পগুলো কেবল ছোটদের নয়, বড়দের মনও ছুঁয়ে যায়। গল্পের কাঠামো, শব্দচয়ন এবং শিক্ষামূলক বার্তা নিসার গল্পগুলোকে জনপ্রিয় করেছে। 

সংসার সামলে
সংসার-সন্তান সামলে লেখালেখি, বইয়ের প্রচ্ছদ করা ভীষণ কঠিন। কিন্তু নিসা কঠিন বিষয়টি ভালোভাবেই সামলে নিয়েছেন। সংসারের চাপ সামলে সমানতালে সব করে চলেছেন। 

ভবিষ্যৎ ভাবনা
প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে আরও কাজ করার ইচ্ছা নিসার। প্রচ্ছদে নিজের পরিচয় তৈরি করতে চান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত