Ajker Patrika

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১৯: ১৫
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বেশি বেশি নাক খোটানোর ফলে স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়তে পারে। ছবি: পিক্সাবে
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বেশি বেশি নাক খোটানোর ফলে স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়তে পারে। ছবি: পিক্সাবে

আমাদের অনেকের প্রায় অনেক সময় নাক খোঁটানোর অভ্যাস আছে। আপাতদৃষ্টে বিষয়টি খুব সাধারণ মনে হলেও গবেষকেরা বলছেন, নাক খোঁটানোর বিষয়টি মোটেও নিরাপদ নয়। ২০২২ সালে বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল নেচারে প্রকাশিত এক গবেষণায় নাক খোঁটার সঙ্গে স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকির ক্ষীণ কিন্তু সম্ভাব্য যোগসূত্রের কথা বলা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, নাক খোঁটানোর সময় যদি ভেতরের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে কিছু নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া খুব সহজে মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে। মস্তিষ্কে এদের উপস্থিতি এমন কিছু প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, যা আলঝেইমারস বা স্মৃতিভ্রংশ রোগের লক্ষণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

তবে এই গবেষণার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এর মূল কারণ হলো, গবেষণাটি প্রাথমিকভাবে মানুষের ওপর নয়, ইঁদুরের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। তারপরও এই ফলাফল আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা জরুরি। এটি আলঝেইমারস কীভাবে শুরু হয়—যা এখনো অনেকটাই রহস্য—তা বুঝতে সাহায্য করতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে একটি গবেষক দল ‘ক্ল্যামাইডিয়া নিউমোনি’ নামে একধরনের ব্যাকটেরিয়া নিয়ে পরীক্ষা চালান। এই ব্যাকটেরিয়া মানুষের ফুসফুসের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ার কারণ হতে পারে। জীবনের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষের মস্তিষ্কে এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।

ইঁদুরের ওপর চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, এই ব্যাকটেরিয়া অলফ্যাক্টরি স্নায়ু (যা নাকের ছিদ্রপথকে মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত করে) বেয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নাকের ভেতরের পাতলা টিস্যু বা ন্যাসাল এপিথেলিয়াম ক্ষতিগ্রস্ত হলে স্নায়ুর সংক্রমণ আরও বেড়ে যায়। এর ফলে ইঁদুরের মস্তিষ্কে অ্যামাইলয়েড-বিটা প্রোটিন বেশি পরিমাণে জমা হতে দেখা যায়। সংক্রমণ প্রতিরোধে এই প্রোটিন নিঃসৃত হয়। আলঝেইমারস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কেও এই প্রোটিনের প্লেক বা জমাট বাঁধা দলা প্রচুর পাওয়া যায়।

২০২২ সালের অক্টোবরে গবেষণাটি প্রকাশিত হওয়ার সময় গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির নিউরোসায়েন্টিস্ট জেমস সেন্ট জন বলেন, ‘আমরাই প্রথম দেখিয়েছি, ক্ল্যামাইডিয়া নিউমোনি সরাসরি নাক দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে। সেখানে এটি এমন কিছু পরিবর্তন ঘটাতে পারে, যা দেখতে আলঝেইমারস রোগের ক্ষেত্রে সংঘটিত পরিবর্তনের মতো।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি ইঁদুর মডেলে এটি ঘটতে দেখেছি এবং এর প্রমাণ মানুষের জন্যও সম্ভাব্য ভীতিকর।’

বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে ক্ল্যামাইডিয়া নিউমোনির সংক্রমণের গতি দেখে অবাক হয়েছিলেন। মাত্র ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল। ধারণা করা হয়, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস মস্তিষ্কে পৌঁছানোর জন্য নাককে একটি সহজ পথ হিসেবে ব্যবহার করে।

যদিও মানুষের ক্ষেত্রে একই প্রভাব পড়বে কি না বা অ্যামাইলয়েড-বিটা প্লেক সত্যিই আলঝেইমারস কারণ কি না, তা নিশ্চিত নয়, তবে এই সাধারণ নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ বোঝার লড়াইয়ে নতুন সম্ভাবনাময় সূত্রগুলো অনুসরণ করা জরুরি। সেন্ট জন বলেন, ‘আমাদের মানুষের ওপর এই গবেষণা করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে একই পথ একইভাবে কাজ করে কি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটি এমন এক গবেষণা, যা অনেকে করার প্রস্তাব দিয়েছেন, কিন্তু এখনো সম্পন্ন হয়নি। আমরা যা জানি তা হলো—এই একই ব্যাকটেরিয়া মানুষের মধ্যেও উপস্থিত থাকে, কিন্তু কীভাবে তারা সেখানে পৌঁছায়, তা আমরা এখনো বের করতে পারিনি।’

নাক খোঁটা আসলে বিরল কোনো অভ্যাস নয়। বাস্তবে প্রতি ১০ জনের ৯ জনই হয়তো এটি করে থাকেন। মানুষ ছাড়াও অন্যান্য অনেক প্রাণীও এটি করে থাকে। নাক খোঁটার উপকারিতা স্পষ্ট না হলেও এই ধরনের গবেষণা আমাদের নাক খোঁটার আগে একটু ভাবতে শেখায়।

মানুষের ওপর একই প্রক্রিয়া নিয়ে ভবিষ্যতে আরও গবেষণার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তার আগে সেন্ট জন এবং তাঁর সহকর্মীরা পরামর্শ দিয়েছেন, নাক খোঁটা এবং নাকের লোম ছেঁড়া ‘ভালো ধারণা নয়।’ কারণ, এতে নাকের প্রতিরক্ষামূলক টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত