Ajker Patrika

সুস্থ থাকতে প্রতিদিন ১০,০০০ কদম হাঁটা একটা মিথ, বলছেন গবেষকেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যদি কোনো নিষ্ক্রিয় ৬০ বছর বয়সী নারী বা পুরুষ দৈনিক মাত্র ১০ মিনিট দ্রুত হাঁটেন, তাহলে তাঁর গড় আয়ু এক বছর পর্যন্ত বাড়তে পারে। ছবি: হাভার্ড হেলথ পাবলিশিং
যদি কোনো নিষ্ক্রিয় ৬০ বছর বয়সী নারী বা পুরুষ দৈনিক মাত্র ১০ মিনিট দ্রুত হাঁটেন, তাহলে তাঁর গড় আয়ু এক বছর পর্যন্ত বাড়তে পারে। ছবি: হাভার্ড হেলথ পাবলিশিং

প্রাচীনকাল থেকেই দীর্ঘায়ু, প্রাণশক্তি ও তারুণ্য ধরে ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ভ্রান্ত ধারণা। তবে এসব বিভ্রান্তির মধ্যেও কয়েকটি সত্য টিকে রয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ সালে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিত হিপোক্রেটিস বলেছিলেন, ‘হাঁটাহাঁটি মানুষের সেরা ওষুধ।’ দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় পর, আধুনিক বিজ্ঞান এখন তাঁর সে কথার পক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছে।

তবে নতুন গবেষণা বলছে, যাঁরা দিনে ৮ হাজার কদমের বেশি হাঁটেন, তাঁরা ৫ হাজার কদমের কম হাঁটেন এমন মানুষের তুলনায় অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেক কমিয়ে ফেলেন। তবে ৮ হাজার কদমের পর হাঁটার উপকারিতা প্রায় স্থির হয়ে যায়। তাই ভালো স্বাস্থ্যের জন্য ‘দিনে ১০ হাজার কদম হাঁটতে হবে’—এ বহুল প্রচলিত ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই; বরং এটি একটি ভুল ধারণা।

এই ১০ হাজার কদমের ধারণার উৎপত্তিও বিজ্ঞানের কোনো ভিত্তিতে নয়; বরং ১৯৬০-এর দশকে জাপানে এক বিপণন প্রচারণা থেকে। সে সময় বাজারে আসা বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক কদম মাপার যন্ত্র পেডোমিটারের নাম ছিল ‘মানপো-কে’—যার অর্থই ‘১ হাজার কদম মিটার’।

সম্প্রতি গবেষকেরা খতিয়ে দেখছেন, প্রতিটি কদমের স্বাস্থ্যগুণ সমান কি না বা দ্রুত হাঁটার (মিনিটে ১০০ কদম বা ঘণ্টায় ৩-৪ মাইল বেগে হাঁটার) বেশি উপকারিতা আছে কি না। হৃদ্‌রোগ ও বার্ধক্যের ওপর এর প্রভাব নিয়ে বাড়ছে প্রমাণ। উদাহরণস্বরূপ, দিনে ১৪ মিনিট স্বাভাবিক গতিতে হাঁটার বদলে মাত্র ৭ মিনিট দ্রুত হাঁটলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি ১৪ শতাংশ কমে।

যুক্তরাষ্ট্র ৪ লাখ ৫০ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওপর করা এক বিশ্লেষণ দেখিয়েছে, যাঁরা আজীবন দ্রুত হেঁটেছেন, মধ্যবয়সে তাঁদের জৈবিক বয়স ধীরে হাঁটা মানুষের চেয়ে ১৬ বছর পর্যন্ত কম হয়।

পরবর্তী আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, দেরিতে শুরু করলেও এর উপকারিতা পাওয়া যায়। যদি কোনো নিষ্ক্রিয় ৬০ বছর বয়সী নারী বা পুরুষ দৈনিক মাত্র ১০ মিনিট দ্রুত হাঁটেন, তাহলে তাঁর গড় আয়ু এক বছর পর্যন্ত বাড়তে পারে।

দ্রুত হাঁটার গতি ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যঝুঁকি নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি হৃদ্‌রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি নির্ধারণে রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের চেয়েও নির্ভরযোগ্য সূচক হিসেবে দেখা গেছে। এমনকি এটি খাদ্যাভ্যাস, স্থুলতা কিংবা মোট শারীরিক কার্যকলাপের চেয়েও বেশি শক্তিশালী নির্দেশক হতে পারে।

তবে সবক্ষেত্রে দ্রুত হাঁটা অতিরিক্ত উপকারিতা দেয় না। উদাহরণস্বরূপ, ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে দ্রুত হাঁটার অতিরিক্ত কোনো বিশেষ উপকারিতা পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন ক্যানসার রোধে মোট হাঁটার পরিমাণই মুখ্য ভূমিকা রাখে, গতি নয়। আবার দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার মধ্যে হালকা হাঁটাহাঁটি বা চলাফেরাও শরীরের বিপাক প্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

শুধু শারীরিক নয়, হাঁটার মানসিক ও সৃজনশীল উপকারিতাও আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, হাঁটার সময় মস্তিষ্কের এমন কিছু অংশ সক্রিয় হয়, যা স্মৃতি এবং কল্পনাশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফলে হাঁটাহাঁটির ফলে সৃজনশীল চিন্তা দ্বিগুণ হয়। অনেকে এই অভ্যাসের মাধ্যমে সমস্যা নিয়ে চিন্তা করেন এবং সমাধানের পথ খুঁজে পান—যা ডেস্কে বসে চিন্তা করলেও হয়তো আসত না।

এ কারণে ‘প্রাকৃতিক হাঁটার প্রেসক্রিপশন’ নামের ধারণা চালু হয়েছে, যেখানে পরিবেশে হাঁটার মাধ্যমে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য একসঙ্গে উন্নত করা যায়।

বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগসহ নানা দীর্ঘমেয়াদি অসুখের মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা। সক্রিয় জীবনযাপনের প্রতি মনোযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে বছরে প্রায় ৩৯ লাখ অকালমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতে পারত।

তবে আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা এখনো রোগপ্রতিরোধের চেয়ে রোগ ব্যবস্থাপনাতেই বেশি গুরুত্ব দেয়। একটি নতুন ওষুধ বাজারে আনতে যেখানে কোটি কোটি ডলার খরচ হয়, সেখানে এসব ওষুধই বড় মুনাফা এনে দেয় ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর জন্য। অথচ এর একাংশ যদি হাঁটা ও শারীরিক সচেতনতা বাড়ানোর সরকারি উদ্যোগে ব্যয় করা যেত, তাহলে এত ওষুধনির্ভর চিকিৎসাব্যবস্থার প্রয়োজন হয়তো থাকত না।

তথ্যসূত্র: ইনডিপেনডেন্ট ইউকে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত