আজকের পত্রিকা ডেস্ক
একটা প্রবাদ আছে, ‘যস্মিন দেশে যদাচার’। অর্থাৎ যখন যে দেশে যাচ্ছেন সে দেশের আচার মেনে চলাই উত্তম। কোনো কোনো দেশে খালি পায়ে হাঁটা যাবে না আবার কোনো এলাকায় স্যান্ডেল পরে গাড়ি চালালে হতে পারে জরিমানা। আবার কোথাও পোশাক ঠিক না রাখলে হবে ‘দণ্ড’, আবার কোথাও সাঁতার কাটা ‘অপরাধ’। এমনই কিছু আচার আছে ইউরোপে। সেখানে ঘুরতে যাওয়ার আগে এ বিষয়গুলো জেনে নেওয়াই ভালো। কেন না চলতি বছর ইউরোপ বেশ ভালো অঙ্কের জরিমানাই লিখেছে নিয়ম ভঙ্গকারী পর্যটকদের জন্য।
পর্যটনে এগিয়ে থাকা ইউরোপ ‘খারাপ আচরণকারী’ বা ‘অবাধ্য’ পর্যটকদের জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের জরিমানা চালু করেছে তা চলুন জেনে নেওয়া যাক।
এ বছর থেকে বিমান পুরোপুরি না থামার আগে সিটবেল্ট খুলে ফেলা বা আসন ছেড়ে উঠে যাওয়াকে একটি ‘অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করছে ইউরোপ এবং এর জন্য জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই দারুণ এক ছুটি কাটানোর আনন্দ নিয়ে ইউরোপে পা রাখলেও সেই আনন্দভ্রমণের শুরু হতে পারে জরিমানা দেওয়ার মাধ্যমে।
পর্তুগালের জনপ্রিয় সমুদ্র তীরবর্তী শহর আলবুফেইরা। এখানে সৈকতের বাইরে সাঁতারের পোশাক পরলে দেড় হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে। আবার স্পেনের বালিয়ারিক দ্বীপপুঞ্জে অথবা ম্যালোর্কা বা ইবিজা দ্বীপে জনসমক্ষে মদপানে তিন হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
এমনকি ছোটখাটো লঙ্ঘন, যেমন রোদ পোহানোর জন্য কোনো সানবেড ভাড়া করে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশিক্ষণ ব্যবহার করলে বা তোয়ালে সেখানে ফেলে গেলে সেটাও ‘দণ্ডনীয়’ হতে পারে।
আবার হয়তো ঘুরতে ঘুরতে ‘নিরুদ্দেশ’ হয়ে যাওয়াটাও আপনার ভ্রমণ বাজেট ফাঁকা করে দিতে পারে।
এসব কঠোর নিয়ম-কানুন দেখে হয়তো ভেবে বসতে পারেন, যে দেশগুলোর পর্যটন থেকেই বিপুল আয়, সেখানে পর্যটকদের ওপর এমন দণ্ড আরোপ সেটা কেমন বিষয়!
তবে কর্তৃপক্ষ যুক্তি দিয়ে বলছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তা এবং ছুটি কাটাতে আসা মানুষদের ‘দায়িত্বশীল’ আচরণ করতে উৎসাহিত করতে এইসব জরিমানার বিধান করা হয়েছে।
লন্ডনে স্প্যানিশ পর্যটন অফিসের প্রেস বিভাগের প্রধান জেসিকা হার্ভে টেলর বলছিলেন, ‘ভ্রমণে আসা মানুষদের জন্য এসব নিয়ম কঠোর ও লঘু পাপে গুরু শাস্তি মনে হলেও দায়িত্বশীল এবং সহানুভূতিশীল ভ্রমণকে উৎসাহিত করার জন্য এগুলোর প্রয়োজন। পর্যটকদের অভিজ্ঞতা ভালো রাখার জন্যই এগুলো তৈরি করা হয়েছে।’
স্পেনের মালাগায় পর্যটকদের জন্য ১০ দফা আচরণবিধি তৈরি করা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইমপ্রুভ ইয়োর স্টে’। এই ১০টি আচরণবিধি বাসে, বিলবোর্ডে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। শহরে কেমন আচরণ করা উচিত তা তুলে ধরা হয়েছে এখানে। এর মধ্যে রয়েছে—সম্মানজনক পোশাক পরা, যেখানে সেখানে আবর্জনা না ফেলা, অতিরিক্ত শব্দ না করা এবং বেপরোয়া ই-স্কুটার ব্যবহার না করা।
যারা এই নীতি মেনে চলবে না তাদের সর্বোচ্চ ৭৫০ ইউরো (৬৫০ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।
এই বছর পর্তুগালের আলবুফেইরাতেও পাবলিক প্লেসে একই ধরনের আচরণবিধি চালু করা হয়েছে। এই বিধিতে বলা হয়েছে, প্রকাশ্যে নগ্নতা থেকে শুরু করে জনসমক্ষে প্রস্রাব করা নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া শপিং কার্ট (শপিং মলে কেনাকাটার সময় চাকা লাগানো যে ঝুড়ি ব্যবহার করা হয়) যেখানে সেখানে ফেলে যাওয়াও ‘অবৈধ’ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, নিয়মগুলো শুধু দেখানোর জন্যই নয়, বরং শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় পুলিশের গতিবিধি দেখা যাচ্ছে এবং তারা ‘অবাধ্য’ পর্যটকদের পাকড়াও করছে।
পরিবেশগতভাবে নাজুক এলাকা বা সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল এলাকায়-যেমন গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ বা ল্যাপল্যান্ডের সামি গোষ্ঠীপ্রধান এলাকায় আগে থেকেই কিছু আচরণবিধি মেনে চলতে হয়।
তবে এখন মূলধারার সৈকত বা রিসোর্টগুলোতেও নিয়মকানুন চালু একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এর মানে হলো বর্তমানে পর্যটকেরা অনেকেই এমন আচরণ করছেন যা ঠিক নয় এবং কর্তৃপক্ষ শহরগুলো ও সেগুলোর বাসিন্দাদের পর্যটনের খারাপ দিকগুলো থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে।
এই বছরের শুরুতে এক বক্তৃতায় ম্যালোর্কার ক্যালভিয়া শহরের মেয়র হুয়ান আন্তোনিও আমেঙ্গুয়াল বলছিলেন, ‘আমাদের দুটি প্রধান ধারণা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে; একটি হলো পরিবেশ সুরক্ষা এবং অন্যটি হলো সংরক্ষণ; সঙ্গে পর্যটন আমাদের সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নিশ্চিত করাও লক্ষ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘পর্যটন কখনোই স্থানীয় নাগরিকদের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।’
কোথায়, কীভাবে, কত টাকা জরিমানা দিতে হতে পারে
১. স্পেন, গ্রীস, ইতালি, ফ্রান্স, পর্তুগালে ফ্লিপ ফ্লপ বা সহজ ভাষায় যাকে বলা হয় চপ্পল সেটা বা স্যান্ডেল পরে অথবা খালি পায়ে গাড়ি চালানোর জন্য ৩০০ ইউরো (২৬১ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে। এ জরিমানা এড়াতে চাইলে গাড়ি চালানোর সময় সঠিক জুতা পরতে হবে।
২. স্পেনের বার্সেলোনা, পর্তুগালের আলবুফেইরা, ক্রোয়েশিয়ার স্প্লিট, ইতালির সোরেন্টো ও ভেনিস ও ফ্রান্সের কানে সমুদ্রসৈকত থেকে দূরে সাঁতারের পোশাক পরার জন্য এক হাজার ৫০০ ইউরো (এক হাজার ৩০৭ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। এই জরিমানা এড়াতে চাইলে সমুদ্রসৈকত থেকে বের হওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখুন।
৩. স্পেনের ম্যালোর্কা, ইবিজা, ম্যাগালুফ দ্বীপ ও ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে জনসমক্ষে মদ্যপানের জন্য তিন হাজার ইউরো (দুই হাজার ৬১৫ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে। এই জরিমানা এড়াতে বার, রেস্তোরাঁয় অথবা ভিলা বা অ্যাপার্টমেন্টে পরিমিত পরিমাণে পান করতে হবে।
৪. গ্রিসের সমুদ্রসৈকত থেকে খোলস বা নুড়ি তোলার জন্য এক হাজার ইউরো (৮৭১ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে। এই জরিমানা দিতে না চাইলে নুড়ি না তুলে ছবি তুলুন।
৫. ভেনিসে খালে সাঁতার কাটার জন্য ৩৫০ ইউরো (৩০৫ পাউন্ড) জরিমানা দিতে হতে পারে। এই জরিমানা এড়াতে চাইলে যে খাল দিয়ে ময়লা-আবর্জনা আসে, এর বদলে গন্ডোলা বা নৌকায় উঠে ঘুরতে শুরু করুন।
জরিমানা হতে পারে এমন কাজের তালিকা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
আয়ারল্যান্ডের এয়ারলাইন্স রায়ানএয়ার ‘বিঘ্ন’ সৃষ্টিকারী যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫০০ ইউরো বা ৪৩৫ পাউন্ড আদায় করে নিতে পারে।
অনুপযুক্ত জুতা পরে ইতালির উপকূলীয় পর্যটনকেন্দ্র সিনকে তেরতের ঢাল বেয়ে উঠতে শুরু করলে পর্যটকদের আড়াই হাজার ইউরো (দুই হাজার ১৮০ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানার শিকার হতে পারে।
আর ধূমপান করতে গিয়ে সৈকত বা খেলার মাঠে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ফ্রান্স ঘটনাস্থলেই ৯০ ইউরো (৭৮ পাউন্ড) জরিমানা চালু করেছে।
পর্যটন নিয়ে কর্মরত বিরগিত্তা স্পি-কোনিগ বলেন, ‘স্থানীয়রা বিরক্ত। এই জরিমানাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে স্থানীয়রা তাদের নিজেদের জন্য আলাদা পরিসর চায়। পর্যটকরা আরও হয়েছে, বিষয়টা এমন নয়––বরং সহনশীলতা চলে গেছে বলা চলে। আর এটাও বিবেচনায় রাখা উচিত যে প্রতিটি জরিমানাই একেকটি সাজা নয়, বরং এগুলো শ্রদ্ধাশীল হওয়ারও আহ্বান জানায়।’
ইউরোপে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পর্যটন বা অতিমাত্রায় পর্যটনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বেড়েছে।
স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোর দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে স্বল্পমেয়াদী বিভিন্ন ব্যবস্থা বা আইন যেমন নেওয়া হয়েছে, আবার নতুন নতুন জরিমানা আরোপও তাদের পক্ষে যাচ্ছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলো স্বীকার করছে যে তাদের বাসিন্দাদের পক্ষে দাঁড়াতে হবে এবং এটি করার জন্য পর্যটকদের বিরক্তির ঝুঁকিও তারা নিচ্ছে।
এটি ছুটি কাটাতে আসা লোকদের জন্যও একটি সংকেত যে বাড়ি থেকে দূরে থাকা আপনার ইচ্ছামতো কিছু করার জন্য মুক্ত সুযোগ নয়।
এই জরিমানা পর্যটকদের আচরণ পরিবর্তন করবে কি না এ নিয়ে কিছুটা সন্দেহ প্রকাশ করেন স্পি-কোনিগ। তিনি বলেন, স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করলেও দীর্ঘমেয়াদে এগুলো আচরণ পরিবর্তনকারী হিসেবে প্রমাণিত নাও হতে পারে।
স্পি-কোনিগ আরও বলেন, ‘ভালো দিকনির্দেশনা, স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি এবং স্থানীয় ও পর্যটকদের আকাঙ্ক্ষার সমন্বয় ছাড়া খুব কমই পরিবর্তন হবে।’
নতুন নতুন জরিমানা আরোপের বিষয়টি কাজ করছে কি না তা বলা এখনই সম্ভব নয়।
পর্তুগালের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর আলগারভে পর্যটকদের পরিষেবা দানকারী সংস্থা গোটুআলগারভের পরিচালক রবার্ট অ্যালার্ড জানান, আলবুফেইরার নাইটলাইফ এলাকায় নতুন নজরদারি ক্যামেরা এবং পুলিশের উপস্থিতি বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু লোককে জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু একইসঙ্গে এটাও সত্যি, মানুষ নতুন নিয়ম সম্পর্কে আসলে সচেতন নয়। যদিও হোটেলের লবিতে লিফলেট ও বিভিন্ন স্থানে এসব নিয়মের পোস্টার দেখা যাচ্ছে।’
আচরণ পরিবর্তনের জন্য চালানো প্রচারণা কার্যকর হতে সময় নেয় এবং একটি মৌসুমই দর্শনার্থীদের অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট নয়।
তবে বার্তাটি স্পষ্ট, সূর্য, বালি ও সমুদ্র অপেক্ষায় আছে, তবে কেবল তাদের জন্য যারা সংবেদনশীলভাবে এবং কিছুটা সংযতভাবে সেগুলো উপভোগ করতে সম্মত হবেন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা
একটা প্রবাদ আছে, ‘যস্মিন দেশে যদাচার’। অর্থাৎ যখন যে দেশে যাচ্ছেন সে দেশের আচার মেনে চলাই উত্তম। কোনো কোনো দেশে খালি পায়ে হাঁটা যাবে না আবার কোনো এলাকায় স্যান্ডেল পরে গাড়ি চালালে হতে পারে জরিমানা। আবার কোথাও পোশাক ঠিক না রাখলে হবে ‘দণ্ড’, আবার কোথাও সাঁতার কাটা ‘অপরাধ’। এমনই কিছু আচার আছে ইউরোপে। সেখানে ঘুরতে যাওয়ার আগে এ বিষয়গুলো জেনে নেওয়াই ভালো। কেন না চলতি বছর ইউরোপ বেশ ভালো অঙ্কের জরিমানাই লিখেছে নিয়ম ভঙ্গকারী পর্যটকদের জন্য।
পর্যটনে এগিয়ে থাকা ইউরোপ ‘খারাপ আচরণকারী’ বা ‘অবাধ্য’ পর্যটকদের জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের জরিমানা চালু করেছে তা চলুন জেনে নেওয়া যাক।
এ বছর থেকে বিমান পুরোপুরি না থামার আগে সিটবেল্ট খুলে ফেলা বা আসন ছেড়ে উঠে যাওয়াকে একটি ‘অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করছে ইউরোপ এবং এর জন্য জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই দারুণ এক ছুটি কাটানোর আনন্দ নিয়ে ইউরোপে পা রাখলেও সেই আনন্দভ্রমণের শুরু হতে পারে জরিমানা দেওয়ার মাধ্যমে।
পর্তুগালের জনপ্রিয় সমুদ্র তীরবর্তী শহর আলবুফেইরা। এখানে সৈকতের বাইরে সাঁতারের পোশাক পরলে দেড় হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে। আবার স্পেনের বালিয়ারিক দ্বীপপুঞ্জে অথবা ম্যালোর্কা বা ইবিজা দ্বীপে জনসমক্ষে মদপানে তিন হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
এমনকি ছোটখাটো লঙ্ঘন, যেমন রোদ পোহানোর জন্য কোনো সানবেড ভাড়া করে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশিক্ষণ ব্যবহার করলে বা তোয়ালে সেখানে ফেলে গেলে সেটাও ‘দণ্ডনীয়’ হতে পারে।
আবার হয়তো ঘুরতে ঘুরতে ‘নিরুদ্দেশ’ হয়ে যাওয়াটাও আপনার ভ্রমণ বাজেট ফাঁকা করে দিতে পারে।
এসব কঠোর নিয়ম-কানুন দেখে হয়তো ভেবে বসতে পারেন, যে দেশগুলোর পর্যটন থেকেই বিপুল আয়, সেখানে পর্যটকদের ওপর এমন দণ্ড আরোপ সেটা কেমন বিষয়!
তবে কর্তৃপক্ষ যুক্তি দিয়ে বলছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তা এবং ছুটি কাটাতে আসা মানুষদের ‘দায়িত্বশীল’ আচরণ করতে উৎসাহিত করতে এইসব জরিমানার বিধান করা হয়েছে।
লন্ডনে স্প্যানিশ পর্যটন অফিসের প্রেস বিভাগের প্রধান জেসিকা হার্ভে টেলর বলছিলেন, ‘ভ্রমণে আসা মানুষদের জন্য এসব নিয়ম কঠোর ও লঘু পাপে গুরু শাস্তি মনে হলেও দায়িত্বশীল এবং সহানুভূতিশীল ভ্রমণকে উৎসাহিত করার জন্য এগুলোর প্রয়োজন। পর্যটকদের অভিজ্ঞতা ভালো রাখার জন্যই এগুলো তৈরি করা হয়েছে।’
স্পেনের মালাগায় পর্যটকদের জন্য ১০ দফা আচরণবিধি তৈরি করা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইমপ্রুভ ইয়োর স্টে’। এই ১০টি আচরণবিধি বাসে, বিলবোর্ডে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। শহরে কেমন আচরণ করা উচিত তা তুলে ধরা হয়েছে এখানে। এর মধ্যে রয়েছে—সম্মানজনক পোশাক পরা, যেখানে সেখানে আবর্জনা না ফেলা, অতিরিক্ত শব্দ না করা এবং বেপরোয়া ই-স্কুটার ব্যবহার না করা।
যারা এই নীতি মেনে চলবে না তাদের সর্বোচ্চ ৭৫০ ইউরো (৬৫০ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।
এই বছর পর্তুগালের আলবুফেইরাতেও পাবলিক প্লেসে একই ধরনের আচরণবিধি চালু করা হয়েছে। এই বিধিতে বলা হয়েছে, প্রকাশ্যে নগ্নতা থেকে শুরু করে জনসমক্ষে প্রস্রাব করা নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া শপিং কার্ট (শপিং মলে কেনাকাটার সময় চাকা লাগানো যে ঝুড়ি ব্যবহার করা হয়) যেখানে সেখানে ফেলে যাওয়াও ‘অবৈধ’ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, নিয়মগুলো শুধু দেখানোর জন্যই নয়, বরং শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় পুলিশের গতিবিধি দেখা যাচ্ছে এবং তারা ‘অবাধ্য’ পর্যটকদের পাকড়াও করছে।
পরিবেশগতভাবে নাজুক এলাকা বা সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল এলাকায়-যেমন গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ বা ল্যাপল্যান্ডের সামি গোষ্ঠীপ্রধান এলাকায় আগে থেকেই কিছু আচরণবিধি মেনে চলতে হয়।
তবে এখন মূলধারার সৈকত বা রিসোর্টগুলোতেও নিয়মকানুন চালু একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এর মানে হলো বর্তমানে পর্যটকেরা অনেকেই এমন আচরণ করছেন যা ঠিক নয় এবং কর্তৃপক্ষ শহরগুলো ও সেগুলোর বাসিন্দাদের পর্যটনের খারাপ দিকগুলো থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে।
এই বছরের শুরুতে এক বক্তৃতায় ম্যালোর্কার ক্যালভিয়া শহরের মেয়র হুয়ান আন্তোনিও আমেঙ্গুয়াল বলছিলেন, ‘আমাদের দুটি প্রধান ধারণা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে; একটি হলো পরিবেশ সুরক্ষা এবং অন্যটি হলো সংরক্ষণ; সঙ্গে পর্যটন আমাদের সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নিশ্চিত করাও লক্ষ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘পর্যটন কখনোই স্থানীয় নাগরিকদের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।’
কোথায়, কীভাবে, কত টাকা জরিমানা দিতে হতে পারে
১. স্পেন, গ্রীস, ইতালি, ফ্রান্স, পর্তুগালে ফ্লিপ ফ্লপ বা সহজ ভাষায় যাকে বলা হয় চপ্পল সেটা বা স্যান্ডেল পরে অথবা খালি পায়ে গাড়ি চালানোর জন্য ৩০০ ইউরো (২৬১ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে। এ জরিমানা এড়াতে চাইলে গাড়ি চালানোর সময় সঠিক জুতা পরতে হবে।
২. স্পেনের বার্সেলোনা, পর্তুগালের আলবুফেইরা, ক্রোয়েশিয়ার স্প্লিট, ইতালির সোরেন্টো ও ভেনিস ও ফ্রান্সের কানে সমুদ্রসৈকত থেকে দূরে সাঁতারের পোশাক পরার জন্য এক হাজার ৫০০ ইউরো (এক হাজার ৩০৭ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। এই জরিমানা এড়াতে চাইলে সমুদ্রসৈকত থেকে বের হওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখুন।
৩. স্পেনের ম্যালোর্কা, ইবিজা, ম্যাগালুফ দ্বীপ ও ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে জনসমক্ষে মদ্যপানের জন্য তিন হাজার ইউরো (দুই হাজার ৬১৫ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে। এই জরিমানা এড়াতে বার, রেস্তোরাঁয় অথবা ভিলা বা অ্যাপার্টমেন্টে পরিমিত পরিমাণে পান করতে হবে।
৪. গ্রিসের সমুদ্রসৈকত থেকে খোলস বা নুড়ি তোলার জন্য এক হাজার ইউরো (৮৭১ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে। এই জরিমানা দিতে না চাইলে নুড়ি না তুলে ছবি তুলুন।
৫. ভেনিসে খালে সাঁতার কাটার জন্য ৩৫০ ইউরো (৩০৫ পাউন্ড) জরিমানা দিতে হতে পারে। এই জরিমানা এড়াতে চাইলে যে খাল দিয়ে ময়লা-আবর্জনা আসে, এর বদলে গন্ডোলা বা নৌকায় উঠে ঘুরতে শুরু করুন।
জরিমানা হতে পারে এমন কাজের তালিকা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
আয়ারল্যান্ডের এয়ারলাইন্স রায়ানএয়ার ‘বিঘ্ন’ সৃষ্টিকারী যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫০০ ইউরো বা ৪৩৫ পাউন্ড আদায় করে নিতে পারে।
অনুপযুক্ত জুতা পরে ইতালির উপকূলীয় পর্যটনকেন্দ্র সিনকে তেরতের ঢাল বেয়ে উঠতে শুরু করলে পর্যটকদের আড়াই হাজার ইউরো (দুই হাজার ১৮০ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানার শিকার হতে পারে।
আর ধূমপান করতে গিয়ে সৈকত বা খেলার মাঠে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ফ্রান্স ঘটনাস্থলেই ৯০ ইউরো (৭৮ পাউন্ড) জরিমানা চালু করেছে।
পর্যটন নিয়ে কর্মরত বিরগিত্তা স্পি-কোনিগ বলেন, ‘স্থানীয়রা বিরক্ত। এই জরিমানাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে স্থানীয়রা তাদের নিজেদের জন্য আলাদা পরিসর চায়। পর্যটকরা আরও হয়েছে, বিষয়টা এমন নয়––বরং সহনশীলতা চলে গেছে বলা চলে। আর এটাও বিবেচনায় রাখা উচিত যে প্রতিটি জরিমানাই একেকটি সাজা নয়, বরং এগুলো শ্রদ্ধাশীল হওয়ারও আহ্বান জানায়।’
ইউরোপে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পর্যটন বা অতিমাত্রায় পর্যটনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বেড়েছে।
স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোর দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে স্বল্পমেয়াদী বিভিন্ন ব্যবস্থা বা আইন যেমন নেওয়া হয়েছে, আবার নতুন নতুন জরিমানা আরোপও তাদের পক্ষে যাচ্ছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলো স্বীকার করছে যে তাদের বাসিন্দাদের পক্ষে দাঁড়াতে হবে এবং এটি করার জন্য পর্যটকদের বিরক্তির ঝুঁকিও তারা নিচ্ছে।
এটি ছুটি কাটাতে আসা লোকদের জন্যও একটি সংকেত যে বাড়ি থেকে দূরে থাকা আপনার ইচ্ছামতো কিছু করার জন্য মুক্ত সুযোগ নয়।
এই জরিমানা পর্যটকদের আচরণ পরিবর্তন করবে কি না এ নিয়ে কিছুটা সন্দেহ প্রকাশ করেন স্পি-কোনিগ। তিনি বলেন, স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করলেও দীর্ঘমেয়াদে এগুলো আচরণ পরিবর্তনকারী হিসেবে প্রমাণিত নাও হতে পারে।
স্পি-কোনিগ আরও বলেন, ‘ভালো দিকনির্দেশনা, স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি এবং স্থানীয় ও পর্যটকদের আকাঙ্ক্ষার সমন্বয় ছাড়া খুব কমই পরিবর্তন হবে।’
নতুন নতুন জরিমানা আরোপের বিষয়টি কাজ করছে কি না তা বলা এখনই সম্ভব নয়।
পর্তুগালের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর আলগারভে পর্যটকদের পরিষেবা দানকারী সংস্থা গোটুআলগারভের পরিচালক রবার্ট অ্যালার্ড জানান, আলবুফেইরার নাইটলাইফ এলাকায় নতুন নজরদারি ক্যামেরা এবং পুলিশের উপস্থিতি বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু লোককে জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু একইসঙ্গে এটাও সত্যি, মানুষ নতুন নিয়ম সম্পর্কে আসলে সচেতন নয়। যদিও হোটেলের লবিতে লিফলেট ও বিভিন্ন স্থানে এসব নিয়মের পোস্টার দেখা যাচ্ছে।’
আচরণ পরিবর্তনের জন্য চালানো প্রচারণা কার্যকর হতে সময় নেয় এবং একটি মৌসুমই দর্শনার্থীদের অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট নয়।
তবে বার্তাটি স্পষ্ট, সূর্য, বালি ও সমুদ্র অপেক্ষায় আছে, তবে কেবল তাদের জন্য যারা সংবেদনশীলভাবে এবং কিছুটা সংযতভাবে সেগুলো উপভোগ করতে সম্মত হবেন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা
বর্ষার কালো মেঘ হটিয়ে শরৎ নীল আকাশে ভাসিয়ে দেয় সাদা মেঘের ভেলা। প্রকৃতির গানে যেন যুক্ত হয় নতুন সুর। কাশবনে দোলা লেগে আপন সুরেই যেন বেজে ওঠে, ‘শরতে আজ কোন্ অতিথি এল প্রাণের দ্বারে।/ আনন্দগান গা রে হৃদয়, আনন্দগান গা রে।...’
২ ঘণ্টা আগেসমরেশ মজুমদার বলেছিলেন, ‘ব্যক্তির রুচি বোঝা যায় তাঁর গোড়ালি আর স্নানঘর দেখে।’ কথাটা একেবারে অগ্রাহ্য করার মতো নয়। দিন শেষে বাড়ি ফিরে গোসলখানায় গিয়ে আমরা সব ক্লান্তি এবং শরীরের ধুলো, ময়লা, দূষণ ধুয়ে নিই। ফলে ওই জায়গা পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রয়েছে কি না, সেটিও বিশেষভাবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন
৩ ঘণ্টা আগেবাইরের ধুলাবালি, রোদের তাপ এবং বয়সের কারণে ত্বকের ওপর বিভিন্ন ধরনের প্রভাব পড়ে। ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতা, বলিরেখা, পোরস, ব্রণসহ আরও নানা জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের সেরাম ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন ত্বক বিশেষজ্ঞরা।
৪ ঘণ্টা আগেযে পুরুষেরা রূপচর্চায় খুবই উদাসীন, তাঁরাও কিন্তু শেভ করেন মন দিয়ে। ফুল ক্লিন শেভ না করে যাঁরা নানান স্টাইলে দাড়ি রাখেন, তাঁদেরও প্রয়োজন হয় খুব ভালো একটি রেজর এবং দারুণ কোনো শেভিং ক্রিম। শেভ করারও কিছু কায়দা আছে।
৫ ঘণ্টা আগে