Ajker Patrika

অভিনন্দন জেসি

বোরহান জাবেদ
অভিনন্দন জেসি

কিছু কষ্ট হয়তো থাকে ভবিষ্যতে বড় কিছু করার জন্যই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থেকেও মূল দলে জায়গা পাননি তিনি। সে কষ্ট তাঁকে পুড়িয়েছে। তবে আম্পায়ারিং নিয়ে তাঁর স্বপ্ন ক্রিকেটার থাকা অবস্থা থেকেই। সাথীরা জাকির জেসি সেই স্বপ্নের পেছনে সময় ব্যয় করেছেন নিজেকে উজাড় করে দিয়ে। গত বছরের মার্চে স্বাধীনতা কাপ প্রীতি ম্যাচ দিয়ে জেসির পেশাদার আম্পায়ারিং জগতে পদার্পণ। এরপর স্কুল ক্রিকেট, বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট, ছেলেদের লঙ্গার ভার্সন, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ মিলিয়ে ক্রিকেট ম্যাচ পরিচালনায় ‘ফিফটি’ আগেই পূর্ণ হয়ে গেছে। বছর ঘুরতেই জেসির স্বপ্নের পালকে যুক্ত হয়েছে নতুন মাইলফলকও।

আগামী ১২ জুন হংকংয়ে অনুষ্ঠেয় ইমার্জিং এশিয়া কাপে জেসি আম্পারিংয়ের জন্য মনোনীত হয়েছেন। এমন একটা অর্জন নিশ্চিতভাবে তাঁকে পুলকিত করেছে। খবরটা শোনার পরের অনুভূতি জেসির মুখেই শোনা যাক, ‘আমার মধ্যে এত বেশি রোমাঞ্চ কাজ করছিল, কোনো কিছুই ঠিকঠাক করতে পারছিলাম না। কোনো কাজ করছি, যেমন আমি ই-মেইল আইডি লিখছি, কিন্তু বারবার ভুল করে ফেলছি। ওই মুহূর্তে এত বেশি রোমাঞ্চ কাজ করছিল! স্বপ্ন ছিল অনেক আগে থেকেই। কিন্তু সেটা এত তাড়াতাড়ি পূর্ণতা পাবে, বুঝে উঠতে পারিনি।’

বাংলাদেশ নারী দলের হয়ে জেসি দুটি ওয়ানডে ও একটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। তবে ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় দলের হয়ে অসংখ্য ম্যাচ খেলেছেন। বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের মেয়েরা ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার পর খেলা তিনটি ম্যাচের কথাই শুধু লেখা আছে তাঁর প্রোফাইলে। ২০১৩ সালে সেঞ্চুরিয়ানে দক্ষিণ আফ্রিকা নারী দলের বিপক্ষে খেলা ওয়ানডেটাই তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়ে আছে। ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে জেসির একটাই আফসোস–তিনি বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি। ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্যাম্পে ২০ জনের স্কোয়াডে ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো কারণে মূল স্কোয়াডে জায়গা হয়নি তাঁর। তখনই জেসির ভাবনায় আসে, যদি বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে আম্পায়ারিং করা যায়, অনুভূতিটা একই রকম হবে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ফুল হয়ে না ফুটলেও আম্পায়ারিং নিয়ে ৩২ বছর বয়সী জেসির স্বপ্নটা বেশ বিস্তৃত, ‘স্বপ্নটা তখন থেকেই দেখছিলাম। এ রকম ভেবেছি, খেলোয়াড়ি জীবনে যেসব লক্ষ্য পূর্ণ হয়নি, আম্পায়ার হিসেবে সেগুলো পূর্ণ করব। একদিন বিশ্বকাপে আম্পায়ারিং করব।’

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন মেয়ের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের যাত্রাটা একদমই সহজ হয় না। নানান প্রতিবন্ধকতা পার হতে হয়। সমাজ, এমনকি পরিবার থেকেও বাধার সম্মুখীন হতে হয়। দীর্ঘদিন এই জায়গায় জড়িয়ে থেকে ব্যাপারগুলো কাছ থেকে দেখেছেন জেসি। প্রতিবন্ধকতার ব্যাপারগুলো তাঁর চোখে ধরা পড়েছে এভাবে, ‘একদম ভালো না করলে বা জাতীয় দলে না খেললে সেটা আরও বেশি। আমার পরিচিত এমনও আছে, পরের সিরিজেই জাতীয় দলে সুযোগ পাবে। কিন্তু এর আগে মা-বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে আলাদা হয়ে গেছে! বাবা-মা এটাও জানেন না, তাঁদের মেয়ে কত ভালো ক্রিকেট খেলে। দেখা যায়, ক্যারিয়ার টিকিয়ে রাখার জন্য তাঁকে আলাদা হয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু মেয়ে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেলে ওই একই বাবা-মায়ের আচরণ পরিবর্তন হয়ে যায়। এটা সবার ক্ষেত্রেই হয়। আমাদের প্রেক্ষাপটটাই এমন। আমরা খুব কম সমর্থন পাই, যতক্ষণ না আমরা সফল হচ্ছি। সফল হওয়ার পর আশপাশে সবাই থাকে। এর আগে বাধার শেষ নেই। একজন মেয়ের জন্য এই সময় খুব কঠিন।’

এই কঠিন সময় পার করেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন সাথীরা জাকির জেসি। অভিনন্দন জেসি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জমকালো দোতলা বাড়িতে দূতাবাস, সামনে সারি সারি কূটনৈতিক গাড়ি—৭ বছর পর জানা গেল ভুয়া

বেনজীরের এক ফ্ল্যাটেই ১৯ ফ্রিজ, আরও বিপুল ব্যবহার সামগ্রী উঠছে নিলামে

অবশেষে রাজি ভারত, ‘জিতেছে বাংলাদেশ’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাকে শুভেচ্ছা জানাতে বিমানবন্দরে পলাতক আসামি

ই-মেইলে একযোগে ৫৪৭ ব্যাংক কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত, পুনর্বহালের দাবি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত