Ajker Patrika

গৃহকর্মী থেকে রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষে ওঠা এক নারী

শাকেরা তাসনীম ইরা, ঢাকা
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২৩: ০০
গৃহকর্মী থেকে রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষে ওঠা এক নারী

লাতিন আমেরিকার রাজনীতিতে এর আগে এমন কাউকে দেখা যায়নি। যার কথা বলছি, তিনি এক সময় গৃহকর্মীর কাজ করেছেন! পরে কাজ করেছেন পরিবেশকর্মী হিসেবে। সেখান থেকে রীতিমতো দেশ পরিচালনার কাতারে উঠে এসেছেন। তিনি কলম্বিয়ার এক নারী, নাম ফ্রান্সিয়া মার্কেজ। বিশ্বের আর কোনো রাজনীতিবিদের চেয়ে তাঁর সংগ্রামের গল্পটা আলাদা। একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী, দরিদ্র, বাস্তুচ্যুত, সমাজ নেত্রী, পরিবেশবাদী এবং নারীবাদী—তিনি নির্বাচিত হয়েছেন কলম্বিয়ার প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে। এবং এটি সেই যুগে, যখন কলম্বিয়ায় ২১৪ বছরের ডানপন্থী রাজনৈতিক আধিপত্য ভেঙে গিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রে বসেছে বামপন্থী সরকার।

একজন কৃষ্ণাঙ্গ ‘সিঙ্গেল মাদার’ থেকে কলম্বিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার রাস্তাটা যে ফ্রান্সিয়ার জন্য সহজ ছিল, তেমন নয়। প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব তীরে এবং কলম্বিয়ার দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তের কাউকা বিভাগের ছোট একটি গ্রাম ইয়োলোম্বোতে জন্ম নেন ফ্রান্সিয়া, ১৯৮১ সালে। তাঁর বাবা ছিলেন খনিশ্রমিক এবং মা কৃষক ও ধাত্রী। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়তে হয়েছে তাঁকে। 

আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের সহায়তার জন্য ফ্রান্সিয়া প্রথমে শ্রমিকের কাজ নেন সোনার খনিতে। এরপর কিছুদিন কাজ করেন গৃহপরিচারিকা হিসেবে। এর মধ্যে মাত্র ১৩ বছর বয়সে জড়িয়ে পড়েন ওয়েভাইস নদী বাঁচানোর আন্দোলনে। সে নদীটি ছিল তাঁর সম্প্রদায়ের মানুষের একমাত্র পানির উৎস। কলম্বিয়ার একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এ নদীকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পরিবেশ বিরুদ্ধ প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সিয়া মার্কেজ নিজ এলাকা ও সম্প্রদায়ের মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। এ সময় তিনি পরিবেশ আন্দোলনকারী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিকের সঙ্গে ফ্রান্সিয়া মার্কেজনদী রক্ষার সঙ্গে ফ্রান্সিয়া সোনার খনির অবৈধ খনন প্রতিরোধেও আন্দোলনে যোগ দেন। প্রায় দুই দশক ধরে সে অঞ্চলকে ঘিরে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিনি নিরন্তর সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। এই ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২০১৪ সালে ফ্রান্সিয়ার ডাকা লং মার্চে অংশ নেন প্রায় ৮০ জন আফ্রো–কলম্বিয়ান নারী। তাঁরা কাউকা থেকে ১০ দিন হেঁটে ৩৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছান রাজধানী বোগোতায়। এই নারীরা দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ের সামনে প্রায় ২০ দিন টানা বিক্ষোভ করেন। পরিশেষে এ আন্দোলনে সাফল্য আসে এবং সরকার ওয়েভাইসের আশপাশে থাকা সব অবৈধ খনন কার্যক্রম বন্ধ করার অঙ্গীকার করে। ইতিহাসে এটি ‘মার্চ টু বোগোতা’ হিসেবে খ্যাত। 

পরিবেশ আন্দোলনের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৮ সালে ফ্রান্সিয়া মার্কেজ ‘গোল্ডম্যান প্রাইজ’ পান। এ ছাড়া ২০১৯ সালে তিনি বিবিসি প্রকাশিত বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় স্থান পান। অথচ মাত্র ১৬ বছর বয়সে এক অনিশ্চিত জীবনে তিনি জন্ম দেন তাঁর প্রথম সন্তান। আন্দোলন সংগ্রামের জন্য অনেক মানুষকে সঙ্গে পেলেও সন্তান বড় করার লড়াইটা তাঁকে একাই করতে হয়। 

স্যালভাজিনা হাইড্রোইলেকট্রিক ড্যাম, কাউকাফ্রান্সিয়া মার্কেজ কলম্বিয়ার ন্যাশনাল লার্নিং সার্ভিস থেকে কৃষি প্রযুক্তিবিদ হিসেবে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ২০২০ সালে তিনি সান্তিয়াগো ডি ক্যালি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। 

২০১৯ সালে টুইটারে একটি পোস্ট করেন ফ্রান্সিয়া মার্কেজ। লেখেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট হতে চাই। আমি জনগণকে মুক্ত ও সম্মানজনক অবস্থানে দেখতে চাই। আমি চাই আমাদের অঞ্চলগুলো নবজীবন লাভ করুক।’ সে সময় অনেকেই তাঁর কথায় পাত্তা না দিলেও ফ্রান্সিয়া ঠিকই ২০২২ সালের মার্চ মাসে বামপন্থীদের ‘হিস্টোরিক প্যাক্ট’ জোটের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনয়নের (প্রাইমারি) লড়াইয়ে সবাইকে বিস্মিত করে তৃতীয় স্থান দখল করেন। পরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাবেক গেরিলা যোদ্ধা পেত্রো তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট (রানিংমেট) হিসেবে ফ্রান্সিয়া মার্কেজকে বেছে নেন। নির্বাচনে বামজোট জয়লাভ করে।

তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, আফ্রিকান নিউজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত