Ajker Patrika

শিশুতোষ বইয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন তাহমিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
শিশুতোষ বইয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন তাহমিনা

লেখক কিংবা প্রকাশক—ছোটদের বই লেখা ও প্রকাশ করা সবার কাছে এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। পৃথিবীর অনেক মানুষ সেই চ্যালেঞ্জটা নিতে ভালোবাসেন। এমনই একজন মানুষের সঙ্গে দেখা হলো বইমেলায়। তাঁর নাম তাহমিনা রহমান। তিনি এমন অনেক শিশু কার্টুন চরিত্র তৈরি করেন, যারা অনেক কিছু করতে পারে। তারা পারে নিজের সমস্যার সমাধান করতে, বন্ধুদের চিঠি লিখতে, তাদের সাহায্য করতে, সহানুভূতিশীল হতে, নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে। তাহমিনা লাইট অব হোপ প্রকাশনীর ম্যানেজার ও কিডস টাইম টিভির ফাউন্ডার। 

শুরু করেছিলেন শিশুদের জন্য
প্রায় এক যুগ ধরে তাহমিনা কাজ করছেন শিশুদের উন্নয়ন নিয়ে। ফার্মেসি বিষয়ে লেখাপড়া শেষ করে তিনি যোগ দিয়েছিলেন লাইট অব হোপের ভলান্টিয়ার হিসেবে। সেখানে তিনি কাজ শুরু করেন ‘পড়ুয়া—The Reader’ প্রকল্পে। তাহমিনা শিশুদের উপযোগী বই সংগ্রহ করে স্কুলে স্কুলে লাইব্রেরি করে দেওয়ার কাজ করতেন। বিভিন্ন বই পড়ে শিশুদের উপযোগী বইগুলো আলাদা করতেন তিনি। সেটা ছিল তাঁর অন্যতম কাজ। সে কাজ করতে গিয়ে তাহমিনা বুঝতে পারেন, দেশে শিশুদের জন্য নতুন ও মৌলিক গল্প নিয়ে কাজ করে গুটিকয়েক প্রকাশনা। বইয়ের ছবি ও বয়স উপযোগী লেখার সংখ্যা আরও কম। ছোটবেলায় শিক্ষক হতে চাওয়া তাহমিনা ঠিক করেন, ভবিষ্যতে শিশুদের বই নিয়ে কাজ করবেন তিনি। 

অভাব যখন চ্যালেঞ্জের বিষয়
তাহমিনা বলেন, ‘শিশুদের জন্য কাজ করতে গিয়ে দেখেছি সচেতনতা, পর্যাপ্ত গবেষণা ও রিসোর্সের অভাব। রিসোর্সের সহজলভ্যতারও অভাব আছে। ক্ষেত্রটির সঙ্গে নতুন প্রজন্মের সংযোগ কম বলে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আপডেট হতে পারছে না।’ তাহমিনা মনে করেন, আগের সময়কার গল্প, বই, ছবি কিংবা কাগজের মান নিয়ে এ যুগের শিশুদের আকর্ষণ করা যাবে না। গবেষণাভিত্তিক কাজ করতে গিয়ে বইয়ের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন অনেকে। এতে অভিভাবকদের সাড়াও কমে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্রতীরে বেড়ে ওঠা তাহমিনা এসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই শিশুদের জন্য কাজ করতে চান। 

তাহমিনা রহমানবইয়ে প্রযুক্তির ছোঁয়া
লাইট অব হোপের বইগুলো খুলে চোখে পড়ে কিউ আর কোড। অর্থাৎ এটি স্ক্যান করলেই বইটি শুনতে ও দেখতে পারা যাবে। যেখানে অভিভাবকেরা মোবাইল ফোন থেকে দূরে রাখতে শিশুদের বই পড়তে বলছেন, সেখানে কিউ আর কোড! রবীন্দ্রনাথের আশ্রয় নিয়ে তাহমিনার জবাব, ‘দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি।/ সত্য বলে, আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি?’ প্রযুক্তির এ যুগে প্রযুক্তি থেকে শিশুদের পুরোপুরি আলাদা রাখা কঠিন। ডিভাইস থেকে শিশুদের সম্পূর্ণ দূরে রাখা কঠিন। তবে সে ডিভাইসে উল্টাপাল্টা কিছু দেখার চেয়ে যদি ভালো কিছু দেখে, পড়ে আর ব্যস্ত থাকে, তবে সেটাই কি ভালো নয়? তবে প্রতিটি বয়সের জন্য স্ক্রিন লিমিট আছে। সময় ধরে, কী দেখছে সেটা লক্ষ রেখে শিশুদের ডিজিটাল লাইব্রেরি, অডিও বুক বা ই-বুকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়াটাই ভালো বলে মনে করেন তাহমিনা। 

গুণমানে আপস নেই
বইয়ের মান এমন হতে হবে, যা প্রযুক্তিকে টেক্কা দিতে পারবে—তাহমিনার মূল চ্যালেঞ্জ এটাই। শিশুদের ইচ্ছা আর চাহিদার মাঝে যে ফাঁকা জায়গা আছে, তা পূরণ করার ইচ্ছা তাহমিনার। ২ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের নিয়ে কাজ করলেও ১০-১২ বছর বয়সী শিশুদের নিয়ে আরও বেশি কাজ করার পরিকল্পনা তাঁর। লাইট অব হোপের বই বিশ্বের ৩০টি দেশে যাচ্ছে। এর পরিধি আরও বাড়ানোর ইচ্ছা আছে তাহমিনার। তাঁর একমাত্র মেয়ে মেঘাদৃতা ভূঁইয়ার বয়স আড়াই বছর। তাহমিনা বলেন, ‘একজন মেকার যদি নিজের সন্তানের কথা ভেবে পণ্য বানান, তার গুণমান ভালো হওয়ারই কথা। আমি যা বানাচ্ছি, সব আমার সন্তানের জন্য।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত