Ajker Patrika

শূন্যের নিচে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা যেখানে স্বাভাবিক ঘটনা

আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬: ১১
শূন্যের নিচে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা যেখানে স্বাভাবিক ঘটনা

আজ বাইরে বেশ হতে নিশ্চয় শীতল একটা হওয়া কাঁপিয়ে দিয়েছে আপনাকে? বুঝতেই পারছেন, উত্তরের জেলাগুলির এবং গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা ঠান্ডাটি অনেক বেশি অনুভব করেছেন। এই সুযোগে জানিয়ে রাখছি, আজকের ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রির আশপাশে ও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির সামান্য ওপরে। এখন কোনো জায়গায় তাপমাত্রা যদি শূন্য অর্থাৎ হিমাঙ্কের নিচে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায় তখন কী অবস্থা হবে বলুন তো?

যা ভাবছেন তা নয়, এটি মোটেই জনবসতিহীন কোনো জায়গা নয়। রাশিয়ার ভেরখোইয়ান্‌স্ক নামের ছোট্ট জনপদটির তাপমাত্রা আজ ১১ জানুয়ারিও হিমাঙ্কের নিচে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গেছে। নিশ্চয় চোখ কপালে উঠেছে? ভাবছেন, এই শীতে ওখানকার মানুষেরা থাকে কীভাবে?

সাইবেরিয়ার দুর্গম ইয়াকুতিয়া অঞ্চলে অবস্থান শহরটির। আর্কটিক সার্কেলের এক শ কিলোমিটারের বেশি গভীরে এটি। শীত মৌসুমে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে পঞ্চাশ ডিগ্রি থাকাটা এখানে অতি সাধারণ ব্যাপার। স্বাভাবিকভাবেই ঘরের বাইরে ১৫ মিনিট টিকে থাকাটাই এখানে প্রায় অসম্ভব।

সাইবেরিয়ার দুর্গম ইয়াকুতিয়া অঞ্চলে অবস্থান ভেরখোইয়ান্‌স্কের।এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে শীতল শহরটির স্বাভাবিক একটি দিনের চিত্র কেমন থাকে? প্রবল ঠান্ডার থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন পশুর লোম আর চামড়া দিয়ে তৈরি পোশাকে ঢেকে রাখেন শহরের বাসিন্দারা। কখনো কখনো বরফের টুকরোকে তাপ দিয়ে গলিয়ে পানি সংগ্রহ করতে দেখা যায় এখানকার বাসিন্দাদের।

সমস্যা আরও আছে। শুষ্ক বাতাস চারদিকে ঘোরাফেরা করা অদৃশ্য বিশাল চিমনির মতো আর্দ্রতা শুষে নেয়। এভাবে শরীর থেকে আর্দ্রতা টেনে নেওয়ায় সব সময় তৃষ্ণার্ত বোধ করবেন। এর ফলাফল হিসেবে ব্রঙ্কাইটিস ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি এই জনপদের বাসিন্দাদের।

মোটামুটি হাজার-বারোশ লোকের বাস ভেরখোইয়ান্‌স্কে। বছর পনেরো আগে সংখ্যাটি দ্বিগুণ ছিল। আরও ভালো পরিবেশে থাকার জন্য এখানকার অনেকেই শহরটি ছেড়ে গেছেন আগের বছরগুলিতে। তাঁদের কি দোষ দেওয়া যায়?

মোটা কাপড় পরে ঘর থেকে বের হয়েও শীতের থেকে রেহাই মেলে না।শহরটির গোড়াপত্তন হয় কসাকদের হাতে, ১৬৩৮ সালে। এর অবস্থান ইয়ানা নদীর উজানের দিকে। এখান থেকেই শহরটি তার নাম পেয়েছে। ভেরখোইয়ান্‌স্ক শব্দের অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘ইয়ানের উজানের শহর’।

এই অঞ্চলের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন শহরগুলির একটি ভেরখোইয়ান্‌স্ক। এটি পর্যন্ত সে অর্থে কোনো রাস্তা নেই। শীতে যখন গোটা এলাকা ঢেকে যায় বরফে, তখন হিমায়িত জলাভূমি ও ইয়ানা নদীর ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে সেখানে পৌঁছা যায়। এদিকে গ্রীষ্মে বরফ গলে গেলে বড় ভরসা হেলিকপ্টার।

শীতের সময়টা শহরের বাসিন্দারা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া পারতপক্ষে বাইরে বের হন না। ঘরগুলোকে উষ্ণ রাখা হয় কাঠ দিয়ে জ্বালানো আগুনে এবং সারা শীত জুড়ে চালু থাকা কেন্দ্রীয় হিটিং প্ল্যান্ট থেকে আসা গরম জলে । যারা বাইরে যেতে বাধ্য হন রাস্তার পাশের কুঁড়েঘরে জ্বলা আগুন তাঁদের ভরসা। গাড়ির ইঞ্জিন চালু রাখতে হয় ওই সময়টা। এমনিতে এখানকার শিশুরা এই শীতল পরিবেশেই স্কুলে যায়। স্কুলগুলি বন্ধ থাকে কেবল তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গেলেই।

পুরু বরফে ঢেকে গেছে শহর।মজার ঘটনা পৃথিবীর শীতলতম স্থান কোনটি এটি নিয়ে সাইবেরিয়ার ইয়াকুতিয়া অঞ্চলের দুই শহর ওয়ামিয়াকোন আর ভেরখোইয়ান্‌স্কের মধ্যে সব সময়ই জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। তবে ওয়ামিয়াকোন মিডিয়ার মনোযোগ বেশি পাওয়ার পাশাপাশি পর্যটন থেকেও উপকৃত হচ্ছে। কোলিমা মহাসড়ক থেকে খুব দূরে নয় বলে ওয়ামিয়াকোনে পর্যটকেরা সহজেই সড়ক পথে যেতে পারেন। সেখানে ভেরখোইয়ান্‌স্কের অবস্থান বিপরীত মেরুতে। ওয়ামিয়াকনে হোটেল এমনকি একটি জাদুঘরও আছে।

ওয়ামিয়াকোন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় হিমাঙ্কের নিচে ৬৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেটি ১৯৩৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনা। এদিকে এখন পর্যন্ত ভেরখোইয়ান্‌স্কের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে ৬৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ভেরখোইয়ান্‌স্ক উত্তরের ‘পোল অফ কোল্ড’ হিসেবে বিবেচিত স্থানগুলির মধ্যে একটি। সাইবেরিয়ান হাই নামে পরিচিত ঠান্ডা ও ঘন বাতাসের একটি অঞ্চল এখানকার এমন অনন্য জলবায়ুর কারণ । এই অঞ্চলটিতে তাপমাত্রার পরিবর্তন বেশি হয়। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এখানে গড় তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নিচে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে।

অনবরত পড়তে থাকা তুষারে ভারী হয়ে গেছে গাছের ডাল, পাতা।শীতকালে প্রবল ঠান্ডা পড়লেও গ্রীষ্মের মাসগুলিতে পরিস্থিতি বদলে যায় প্রায়ই। জুন, জুলাই ও আগস্টে এখানে দিনের তাপমাত্রা কখনো কখনো ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়।

শীতে ও গ্রীষ্মে তাপমাত্রার ব্যবধানও তাই এখানে প্রকট। এই ব্যবধান কখনো কখনো ছাড়িয়ে যায় ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৮৯২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভেরখোইয়ান্‌স্কে তাপমাত্রা নামে হিমাঙ্কের নিচে ৬৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। অপর দিকে ২০২০ সালের ২০ জুন জায়গাটির তাপমাত্রা ওঠে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। অর্থাৎ দুই তাপমাত্রার পার্থক্য ১০৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী এটি সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ব্যবধানের রেকর্ড।

স্বাভাবিকভাবেই এমন জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার কথা চিন্তা করাটাও কষ্টকর। তবে আশ্চর্যজনক হলেও শীত উপভোগের জন্য সেখানে যায় মানুষ। যদিও ভেরখোইয়ান্‌স্কে রাস্তা-ঘাটের সুবিধা না থাকায় ওয়ামিয়াকোন শীত উপভোগের জন্য পর্যটকদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। কাজেই আপনি যদি রোমাঞ্চপ্রেমী হোন তবে ভেরখোইয়ান্‌স্কে কয়েকটি রাত কাটানোর কথা ভাবতেই পারেন!

সূত্র: অ্যামিউজিং প্ল্যানেট, বিবিসি সায়েন্স ফোকাস, ট্র্যাভেল অ্যান্ড লেইজার, গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

‘ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির’, কারখানার ভেতর আত্মহত্যার আগে শ্রমিকের ফেসবুক পোস্ট

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত