জ্বালানি তেল

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সারা দেশে চলা পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ রোববার বাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ। সেখানে বাস ভাড়া বাড়ানোর পরপরই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। 

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় দূরপাল্লা ও মহানগরীতে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। দূরপাল্লায় প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়িয়ে করা হয়েছে এক টাকা ৮০ পয়সা। যা আগে ছিল এক টাকা ৪২ পয়সা। ভাড়া বেড়েছে ২৭ শতাংশ। এদিকে মহানগরীতে প্রতি কিলোমিটারে বাস ভাড়া বাড়িয়ে করা হয়েছে দুই টাকা ১৫ পয়সা।

জ্বালানি তেলের (ডিজেল ও কেরোসিন) বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার। যমুনা ও মুক্তারপুর সেতুর বর্ধিত টোল প্রত্যাহার। দেশের সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো কর্তৃক পণ্য পরিবহন যানের ওপর টোলের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করা।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া পরিবহন ধর্মঘট সারা দেশে এখনো পর্যন্ত চলছে। তবে চট্টগ্রামে আজ রোববার থেকে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে। সকাল থেকে নির্ধারিত রুটে চলাচলকারী বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলার, টেম্পোসহ বিভিন্ন গণপরিবহন রাস্তায় নেমেছে। 

জ্বালানি তেলের ব্যাপারে সরকারকে যত শিগগির সম্ভব জনবান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা-ক্ষোভকে সবার আগে বিবেচনায় নিতে হবে। কেবল দাম বাড়িয়ে সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়ার সর্বনাশা প্রবণতা সরকারের জন্য আত্মঘাতী হতে পারে।

তেলের দাম বাড়িয়ে সরকার খুবই অযৌক্তিক কাজ করেছে। এটা ৯০ শতাংশ মানুষের জন্য বড় আঘাত হবে। কৃষিতে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। এমনিতে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত। কৃষকদের যে উৎপাদন ব্যয় হয়, কৃষকেরা সঠিকভাবে তা পান না। এতে কৃষিপণ্যের দামও বাড়বে। তেলের দামের প্রভাব পড়বে পরিবহন খাতেও।

পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ জ্বালানি তেল আমদানি করে। তাদের আমদানি করা দামের ওপরে দেশে দাম নির্ধারণ হয়। সম্প্রতি তরল পেট্রোলিয়াম ও তরলীকৃত গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। সে অনুযায়ী দেশের বাজারে দাম বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু তার একটি কর্তৃপক্ষ আছে, সেটি হলো বাংলাদেশ এনার্জি

থেকে আমাদের সঙ্গে এখনো কোনো যোগাযোগ করেনি। ফলে মালিকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে শনিবার থেকে লঞ্চ না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর আগে শুক্রবার বিকেলে লঞ্চের ভাড়াও দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাপ) সংস্থা। 

পরিবহন মালিকদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করে একতরফাভাবে ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে করে শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করা হয়েছে। 

সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ছাড়াও সংশ্লিষ্ট অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেবেন।

প্রায় ৩০ হাজার পর্যটক কক্সবাজারে আটকে পড়েছেন। অনেকেই পড়েছেন অর্থ সংকটে। কেউ কেউ অতিরিক্ত ব্যয়ে মাইক্রো ভাড়া করে ফিরছেন গন্তব্যে।

গণপরিবহন নেই। ভারী যানবাহনেরও চলাচল নেই। এ হিসেবে রাস্তা ফাঁকা থাকার কথা। কিন্তু তেমনটি নয়। বরং বিভিন্ন স্থানে বেশ জটলা করে আছে গাড়িগুলো। তারপরও মোড়ে মোড়ে যানবাহনের অপেক্ষায় থাকা মানুষের জটলা কমছে না। এত ভিড় ঠেলে তবু এগিয়ে যাওয়া যাচ্ছে দু-চাকার জোরে। একে পাশ কাটিয়ে, তাকে পিছে ফেলে এগোনো যাচ্ছে। মোটর

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে সারা দেশে পরিবহন ধর্মঘটের প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এখনো আমাদের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এখন যে দাম বাড়ানো হয়েছে, তারপরও ভর্তুকি দিতে হবে। তবে আলোচনার মাধ্যমেই সব সমাধান করা সম্ভব। ধর্মঘট ডেকে সমাধান হবে না। 

জ্বালানি তেলের দাম না কমালে চলমান পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হবে না বলে জানিয়েছে ট্রাক শ্রমিক-মালিক ফেডারেশন। আজ শনিবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে দেখা করার পর তাঁরা এমনটি জানিয়েছেন

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ও ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে সারা দেশের সঙ্গে সিলেটেও চলছে পরিবহন ধর্মঘট। গণপরিবহন না পেয়ে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা ভিড় করছে রেলস্টেশনে। বাড়তি যাত্রীল চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে রংপুরে হঠাৎ ধর্মঘটে গেছেন যাত্রীবাহী পরিবহনের মালিক-শ্রমিকেরা। গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে একযোগে বিভাগের সব জেলায় শুরু হয় অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি। হঠাৎ এ ধর্মঘটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

জ্বালানি তেলের ব্যবসা থেকে গত ছয় বছরে সরকারের আয় হয়েছে ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) তেল বিক্রি করে লাভ করেছে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।