ইউরো ২০২০

বড় কোনো টুর্নামেন্ট ইংল্যান্ড একটু ভালো খেললেই একই সুরে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম আর ইংলিশ ভক্ত-সমর্থকেরা গাইতে শুরু করে, ইটস কামিং হোম! ব্রিটিশ মিডিয়ার অতিপ্রচারে বিশ্লেষকেরা কখনো কখনো বলেন, ইংল্যান্ড দলটা কাগুজে বাঘ। কাগজেই যত তর্জন-গর্জন। বাস্তবে তাদের দৌড় সর্বোচ্চ সেমিফাইনাল!

রোমাঞ্চ, নাটকীয়তা ও গতিময় ফুটবলে ডেনিশ রূপকথা থামিয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোর ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ইংল্যান্ড। প্রথম ৯০ মিনিট ১-১ গোলে সমতায় থাকার পর ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। হ্যারি কেনের পেনাল্টি গোলে সেখানেই বাজিমাত করে গ্যারেথ সাউথগেটের দল। ম্যাচ জিতে নেয় ২-১ গোলে।

ইতালির বিপক্ষে হেরে সেমিফাইনালে থেমে গেছে স্পেনের ইউরো অভিযান। হারলেও দুর্দান্ত এক ম্যাচই উপহার দিয়েছে লুইস এনরিকের দল। তবে ম্যাচে এবারও আলোচিত চরিত্র আলভারো মোরাতা। পিছিয়ে পড়া স্পেনকে ম্যাচে ফেরাতে প্রয়োজনীয় সময়ে যে মোরাতা স্পেনের ত্রাতা হয়েছিলেন।

ইউরোতে আরও একটি রোমাঞ্চকর ম্যাচ। স্নায়ুক্ষয়ী সব মুহূর্তে পেরিয়ে ইতালি-স্পেনের সেমিফাইনালের ফল নির্ধারণ হলো টাইব্রেকে। সেখানেই স্পেনকে হারিয়ে ইউরো ফাইনালে উঠে গেল ইতালি। নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময়েও ১-১ গোলে সমতায় ছিল ম্যাচ। টাইব্রেকের ভাগ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ রবার্তো মানচিনির ইতালিই টিকিট কাটল

এবারের ইউরোতে ইতালি আবির্ভূত হয়েছে অন্য চেহারায়। ইতালি যে আমূল বদলে গেছে, তাতে সবাই কোচ রবার্তো মানচিনিকেই কৃতিত্ব দেবেন। তাঁর ছোঁয়ায় চিরায়ত রক্ষাণত্মক কৌশল থেকে বেরিয়ে এসে প্রেসিং ফুটবলে মুগ্ধ করে চলেছে আজ্জুরিরা।

দেশের শহর, গ্রামগঞ্জ এখন ঘুমিয়ে পড়েছে কঠোর লকডাউনের মোড়কে। অদৃশ্য ভয়ংকর অণুজীবটির সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গতিময় জীবনটা আবারও থমকে গেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যাপিত জীবন আবারও আটকে গেছে চার দেয়ালের মাঝে। নিজেদের আটকে রাখলেও নানা মাধ্যম হয়ে ঠিকই ঘরে ঢুকে পড়ছে মন খারাপের সব খবর।

পুরো বিশ্বের দর্শকদের মনোযোগ যেন এই বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম টুর্নামেন্টের দিকে। তাই চাইনিজ স্পনসর কোম্পানিগুলো তাদের গ্লোবাল গ্রাহকের কথা মাথায় রেখে এই টুর্নামেন্টে অন্যতম স্পনসর হয়েছে। চীনা চারটি প্রযুক্তি সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান এবার ইউরো ২০২০ এর স্পনসর হয়েছে। 

২৪ দল থেকে ইউরোর শিরোপার লড়াইটা নেমে এসেছে চার দলে। চার দলে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবের খেলোয়াড়দের সংখ্যাই বেশি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, চ্যাম্পিয়নস লিগের দুই ফাইনালিস্ট ম্যানচেস্টার সিটি আর চেলসির লড়াইটা এখানেও চলছে। সেমিফাইনাল পর্যন্ত এই দুই দলের সর্বোচ্চ খেলোয়াড় আছে চার দলে। 

ইউরো এখনো শেষ হয়নি। সেমিফাইনাল আর ফাইনাল মিলিয়ে বাকি আছে আরও তিন ম্যাচ। কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের কাছে হেরে আগেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল।

শেষের পথে ২০২০ ইউরো। শিরোপা কার হাতে উঠছে, সেটি জানতে আর চার ম্যাচের অপেক্ষা। শেষ চারের আগে এই ইউরোটা যে চার তারকার কাছে অন্যভাবে ধরা দিয়েছে, দেখে নেওয়া যাক সেটিই—

ইতিহাসের না আবার পুনরাবৃত্তি ঘটে! কাল শুরুতে গোল দেওয়ার পর ইংল্যান্ড দলের কি এমন আশঙ্কা কাজ করছিল? শঙ্কাটা অস্বাভাবিক নয়। ইউরোতে শুরুতে গোল দেওয়ার পর এর আগেও ইংল্যান্ড পাঁচ-পাঁচবার হেরেছে।

ইউক্রেনকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে ইউরোর সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ইংল্যান্ড। ইংলিশদের ৪-০ গোলের জয়ে দুবার লক্ষ্যভেদ করেন হ্যারি কেন। বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে ইংল্যান্ড।

চেক প্রজাতন্ত্রকে বিদায় করে  ১৯৯২ ইউরোর স্মৃতি ফেরানোর আরও কাছে পৌঁছে গেল ডেনমার্ক। শেষ চারে ওঠার লড়াইয়ে দাপুটে ফুটবল খেলে ২-১ গোলের জয় পেয়েছে ১৯৯২ ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। 

বর্তমান ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর দল বেলজিয়াম। আর এই দলে আছেন কেভিন ডি ব্রুইনা, এডেন হ্যাজার্ড, রোমেলো লুকাকু, থিবো কর্তোয়ার মতো সময়ের বড় তারকারা। এবারের ইউরোতে শিরোপার অন্যতম দাবিদার ছিল বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের এই দলটা।

এই ইউরোতে ইতালি যেন চোখের প্রশান্তি এনে দেওয়া ফুটবলে শুধু রেকর্ড গড়ার অভিযানেই নেমেছে! প্রতিটা ম্যাচেই নিজেদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে তারা। আক্রমণ-রক্ষণে মিশেলে দুর্দান্ত ইতালি কাল বেলজিয়ামকে ২-১ গোলে হারিয়ে পৌঁছেছে সেমিফাইনালে।

দ্বিতীয় গোলের পর ইতালি অধিনায়ক লরেনৎসো ইনসাইনি উদযাপনে যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন বেলজিয়াম কোচ রবার্তো মার্টিনেজ! কেভিন ডি ব্রুইনা, রোমেলু লুকাকু, থিবো কর্তোয়াদের নিয়ে গড়া বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্ম নিয়েও যে ইউরোর শেষ আটেই থামতে হলো তাঁকে। 

ম্যাচ শেষে রোমেলু লুকাকু-কেভিন ডি ব্রুইনের হতাশ অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছিল সব কিছু। আরেকটু স্পষ্ট হলো গ্যালারিতে চোখ পড়তেই। বেলজিয়াম সমর্থকেরা অঝোরে কাঁদছিলেন। এবারো যে হলো না! দুরন্ত ইতালির কাছে ২-১ গোলে হেরে একটু আগে সলিলসমাধি হয়ে গেল বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের স্বপ্ন।