Ajker Patrika

ডেনিশ রূপকথা থামিয়ে ৫৫ বছর পর ফাইনালে ইংল্যান্ড 

ক্রীড়া ডেস্ক
আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২১, ০৪: ১১
Thumbnail image

রোমাঞ্চ, নাটকীয়তা ও গতিময় ফুটবলে ডেনিশ রূপকথা থামিয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোর ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ইংল্যান্ড। প্রথম ৯০ মিনিট ১-১ গোলে সমতায় থাকার পর ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। হ্যারি কেনের গোলে সেখানেই বাজিমাত করে গ্যারেথ সাউথগেটের দল। ম্যাচ জিতে নেয় ২-১ গোলে।

ইউরোর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বটেই, ৫৫ বছর পর কোনো বড় টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলবে ইংলিশরা। ১৯৬৬ সালে ওয়েম্বলিতেই জার্মানির বিপক্ষে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছিল ইংল্যান্ড। লম্বা অপেক্ষা শেষে শিরোপা 'ঘরে ফেরাতে' এখন ইংল্যান্ডের সামনে একটি ধাপ পেরোনোর অপেক্ষা। ১১ জুলাই রাত ১টায় প্রথম ইউরো শিরোপা জয়ের স্বপ্ন নিয়ে এই ওয়েম্বলিতেই ইতালির মুখোমুখি হবে ইংলিশরা। 

শেষ পর্যন্ত লড়াই করেও ফাইনাল খেলার স্বপ্ন পূরণ হলো না ডেনমার্কের। আগের ম্যাচের মতো এদিনও একাদশে পরিবর্তন আনেন সাউথগেট। জাদন সানচোকে বসিয়ে একাদশে ফিরিয়ে আনেন বুকাইয়ো সাকাকে। ওয়েম্বলিতে দর্শকদের গর্জনের মাঝে ম্যাচের শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে ইংল্যান্ড। প্রথম মিনিট থেকেই ডেনিশ ডি-বক্সের আশেপাশে হুমকি তৈরি করেন ইংলিশ ফরোয়ার্ডরা।

কেন-স্টার্লিংদের গতিতে ডেনমার্ক অবশ্য দমে যায়নি। পাসিং ফুটবলে ইংল্যান্ডের গতি কমানোর পাশাপাশি প্রতি আক্রমণেও যাওয়ার চেষ্টা করে ডেনমার্ক। ইংল্যান্ড আক্রমণে এগিয়ে থাকলেও ইউক্রেনের বিপক্ষে সানচোর তৈরি করা সুযোগগুলোর অভাব শুরু থেকেই অনুভব হচ্ছিল।

১৩ মিনিটে স্টার্লিংয়ের দুর্বল শট রুখে দেন ডেনমার্ক গোলরক্ষক কেসপার স্মাইকেল। এরপর ইংলিশ রক্ষণে চাপ তৈরি করে ডেনমার্ক। ইংল্যান্ডের গোলপোস্টে দুটি শটও নেয় তারা। কিন্তু সেগুলো জর্দান পিকফোর্ডকে হার মানাতে যথেষ্ট ছিল না। গোল না পেলেও পাসিং ফুটবলে ইংল্যান্ডকে এ সময় চাপে রাখে ডেনমার্ক। ২৫ মিনিটে দারুণ এক আক্রমণ থেকে মিকেল ডামসগার্ডের দূরের পোস্ট লক্ষ করে নেওয়া শট বাইরে চলে  যায়।

 দুই দলের আক্রমণাত্মক ফুটবলে ম্যাচ এ সময় দারুণভাবে জমে উঠে। ৩০ মিনিটে ওয়েম্বলিতে উপস্থিত ইংলিশ সমর্থকদের স্তব্ধ করে দেন ডামসগার্ড। ২৫ গজ দূর থেকে এবারের ইউরোতে প্রথমবারের মতো সরাসরি ফ্রি কিকে গোল করেন এই সাম্পাদোরিয়া তারকা। অথচ কয়েক মিনিট আগে ইংলিশ গোলরক্ষক হিসেবে দীর্ঘ সময় গোল না খাওয়ার নতুন রেকর্ড গড়েছিলেন পিকফোর্ড। এর আগে ১৯৬৬ সালে মে-জুলাই মাসে ৭২০ মিনিট গোল না খাওয়ার রেকর্ড ছিল গর্ডন বাঙ্কসের। 

পিছিয়ে পড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ইংল্যান্ড। ৩৮ মিনিটে দারুণ নৈপুণ্যে স্মাইকেল রুখে দেন স্টার্লিংকে। এক মিনিট পর সেই স্টার্লিংকে আটকাতে গিয়ে নিজেদের জালে বল জড়ান ডেনমার্ক অধিনায়ক সিমন কায়ের। এটি ছিল টুর্নামেন্টের ১১তম আত্মঘাতী গোল। সমতাতেই শেষ হয় প্রথমার্ধ।

বিরতির পরও আক্রমণ- প্রতি আক্রমণে ম্যাচ জমে ওঠে। এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় দুই দলই গোলের জন্য উন্মুখ হয়েছিল। ইংলিশ গোলরক্ষক পিকফোর্ড দারুণ নৈপুণ্যে একাধিকবার দলকে রক্ষা করেন। ৫৫ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে হ্যারি ম্যাগুয়েরের হেড ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন ডেনিশ গোলরক্ষক। ৬২ মিনিটে কালভিন ফিলিপসের দুর্দান্ত এক থ্রু পাস ধরে কাছাকাছি গিয়েও গোলের দেখা পাননি ম্যাসন মাউন্ট। 

খেলায় গতি বাড়াতে সাকাকে তুলে ছন্দে থাকা জ্যাক গ্রিলিশকে নামান সাউথগেট। ডেনিশ রক্ষণকে বেশ চাপে রাখে ইংলিশ আক্রমণ। স্মাইকেল বাধা হয়ে না দাঁড়ালে ৭৪ মিনিটে লিড বাড়াতে পারত ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের অলআউট আক্রমণের সামনে এ সময় কোণঠাসা হয়ে পড়ে ডেনমার্ক। তবে নির্ধারিত সময়ে একের পর এক চেষ্টা করেও আর গোলের দেখা পায়নি ইংল্যান্ড। শেষ দিকে দারুণ দৃঢ়তায় ঝড়ের মতো ধেয়ে আসা ইংলিশ আক্রমণ সামলেছে ডেনমার্ক। ম্যাচ চলে যায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত সময়ের শুরুতে কেনকে আরও একবার ঠেকিয়ে দেন স্মাইকেল। এখানেই শেষ নয়। এক পর্যায়ে ম্যাচটা হয়ে যায় ইংল্যান্ড বনাম স্মাইকেলের! সুপারম্যানসুলভ প্রচেষ্টায় ইংল্যান্ডকে বলতে গেলে একাই ঠেকিয়ে রাখেন লেস্টার সিটির তারকা গোলরক্ষক! শেষ পর্যন্ত আর পারেননি তিনি। নাটকীয় এক গোলে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। ডি-বক্সের ভেতরে স্টার্লিং ফাউলের স্বীকার হলে পেনাল্টি পায় থ্রি লায়নসরা। তবে ফাউলটি আসলেই ছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। 

পেনাল্টিতে প্রথম প্রচেষ্টায় কেনকে ঠিকই রুখে দিয়েছিলেন স্মাইকেল। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে ফিরতি শটে গোল নিশ্চিত করেন ইংলিশ অধিনায়ক। পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত লড়াই করা ডেনমার্ক গোলের দেখা আর পায়নি। স্বপ্নভাঙার বেদনা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় ডেনিশ রূপকথার নায়কদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত