Ajker Patrika

এখন সময় খেলা দেখার

রানা আব্বাস, ঢাকা
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২১, ১৬: ০৫
এখন সময় খেলা দেখার

দেশের শহর, গ্রামগঞ্জ এখন ঘুমিয়ে পড়েছে কঠোর লকডাউনের মোড়কে। অদৃশ্য ভয়ংকর অণুজীবটির সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গতিময় জীবনটা আবারও থমকে গেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যাপিত জীবন আবারও আটকে গেছে চার দেয়ালের মাঝে। নিজেদের আটকে রাখলেও নানা মাধ্যম হয়ে ঠিকই ঘরে ঢুকে পড়ছে মন খারাপের সব খবর।

এই মন খারাপের দিনগুলোয় এক ঝটকা স্বস্তির ‘অক্সিজেন’ হয়ে এসেছে খেলা। রাতভর ইউরো-রোমাঞ্চের পর কাকডাকা ভোরে মিলছে লাতিন ফুটবলের সৌরভ। রঙিন ফুটবল উৎসবের ফাঁকেই চোখ রাখতে হচ্ছে আফ্রিকার দেশটিতে। আট বছর পর জিম্বাবুয়েতে পূর্ণাঙ্গ সফরে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আগামীকাল থেকে হারারেতে শুরু হচ্ছে সফরের একমাত্র টেস্ট। এই ক্রীড়া উৎসবটা আরও রঙিন করে তুলেছে উইম্বলডন। অল ইংল্যান্ডের সবুজ কোর্টে শৈল্পিক টেনিসে মুগ্ধ করে চলেছেন রজার ফেদেরার-নোভাক জোকোভিচের সঙ্গে আরও চেনা-অচেনা সব মুখ।

রোমাঞ্চকর এইসব খেলাই সুযোগ করে দিচ্ছে করোনার দুর্ভোগ সাময়িক ভুলে থাকার। টিভি পর্দায় ইউরোতে চোখ রাখলে মনে হতে পারে, এই পৃথিবীতে কোভিড বলে কিছু নেই! একটা অদৃশ্য ভাইরাস মানুষের ওপর এভাবে দিনের দিন ছড়ি ঘোরাবে; জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, অর্থ, প্রযুক্তিতে সব সময়ই এগিয়ে থাকা ইউরোপ কি তা সহজে মেনে নিতে পারে? মানেনি তারা। মহামারির শুরুর দিকে ভুগলেও ধীরে ধীরে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উপায় ঠিকই বের করে ফেলেছে। সাধারণ মানুষের কাছে টিকা সহজলভ্য করে জীবনটা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করে তুলেছে। শূন্য মাঠে খেলা ফিরিয়েছে। ফিরিয়েছে মাঠের ‘প্রাণ’ দর্শকদেরও। এবারের ইউরো ১০ দেশের ১১ শহরে আয়োজন করে তারা আবারও প্রমাণ করেছে অন্য মহাদেশের চেয়ে কেন ব্যতিক্রম ইউরোপ। গ্রুপ পর্ব, শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনালের বিরাট কর্মযজ্ঞ শেষে টুর্নামেন্ট এখন চলে এসেছে শেষ চারে। সেমিফাইনাল-ফাইনাল হচ্ছে শুধুই লন্ডনে। বিখ্যাত ওয়েম্বলিতে লড়াইটা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে ইতালি, স্পেন, ইংল্যান্ড আর ডেনমার্কের মধ্যে।

 ঝকঝকে সম্প্রচার, ব্যাপক আয়োজন, রোমাঞ্চকর ফুটবলের সঙ্গে গ্যালারিভর্তি দর্শকদের গর্জন—এই দৃশ্য যতই সহস্র মাইলে থেকে দেখা যাক, এই দেশের ফুটবলপ্রেমীদেরও হয়তো তা আশাবাদী করে তুলছে। হয়তো মনে মনে তারাও স্বপ্ন দেখছে, এখানেও স্বাভাবিক হয়ে যাবে সবকিছু। কিন্তু সময়টা কবে আসবে—এ নিয়ে যদি বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস, সান্ত্বনা নেওয়ার সুযোগ থাকছে কোপা আমেরিকা থেকে। করোনায় এখনো জবুথবু লাতিন আমেরিকা। মহামারি ধাক্কায় কোপার আয়োজকের নাম পর্যন্ত শেষ মুহূর্তে বদলে গেছে। ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন আগ্রহী না হলে এবারও কোপা আমেরিকা হতে পারত স্থগিত। দর্শকশূন্য গ্যালারিতে টুর্নামেন্ট এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও খেলোয়াড়–কোচরা অসন্তুষ্ট নিয়েই টুর্নামেন্ট শুরু করেছিলেন। তাঁদের প্রশ্ন ছিল, করোনায় জীবন যখন সংকটে, তখন কীভাবে স্বস্তিতে ফুটবল খেলা সম্ভব?

প্রশ্নটা পেছনে সরিয়ে মেসি–নেইমাররা হাসিমুখেই খেলে যাচ্ছেন। তাঁদের লক্ষ্য অবশ্যই শিরোপা জেতার। এই দুঃসময়ে ফুটবল জাদুতে মানুষকে কিছুটা সময় আনন্দে দেওয়াও মেসি–নেইমারদের উদ্দেশ্য। ইউরোর মতো কোপা আমেরিকাও চলে এসেছে শেষ দিকে। আজ প্রথম সেমিফাইনালে পেরুকে হারিয়ে ব্রাজিল যদি যায় ফাইনালে আর কাল কলম্বিয়া বাধা পেরোতে পারে আর্জেন্টিনা, আরেকটি ‘সুপার ক্লাসিকো’র অপেক্ষা করতেই পারেন ফুটবল রোমান্টিকরা!

সেটিই যদি হয়, ১১ জুলাই তারিখটা ক্যালেন্ডারে গোল করে রাখতেই হবে। সকালে কোপা, রাতে ইউরো। বিকেলে উইম্বলডনের ফাইনাল। আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের হারারে টেস্ট যদি শেষ দিনে ফল দেখে—ফুটবল, টেনিস, ক্রিকেট মিলিয়ে এমন খেলাময় দিন আমাদের জীবনে কবার এসেছে!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মেসিকে অমর করে রাখার উদ্যোগ বার্সার

ক্রীড়া ডেস্ক    
কাতালানদের জার্সিতে টানা ১৭ বছর খেলেছেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। ছবি: এক্স
কাতালানদের জার্সিতে টানা ১৭ বছর খেলেছেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। ছবি: এক্স

নিজেদের ক্লাবের ইতিহাসের সেরা ফুটবলারদের একজন লিওনেল মেসিকে অমর করে রখতে চায় বার্সেলোনা। এজন্য হোম ভেন্যু ক্যাম্প ন্যুর বাইরে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়কের ভাস্কর্য স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাতালানরা। এমনটাই জানিয়েছেন ক্লাবটির সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা।

২০০৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বার্সার জার্সিতে খেলেছেন মেসি। অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে স্প্যানিশ জায়ান্ট শিবির ছেড়ে পিএসজিতে পাড়ি জমান এই ফুটবলার। ফ্রান্সের রাজধানী পাড়ার ক্লাবটিতে দুই মৌসুমে কাটিয়ে বর্তমানে মেজর লিগ সকারের ক্লাব (এমএলএস) ইন্টার মায়ামির হয়ে খেলছেন মেসি। সম্প্রতি কাউকে না জানিয়ে ক্যাম্প ন্যুতে হাজির হন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই চর্চা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরই মধ্যে এবার মেসির ভাস্কর্য তৈরির ঘোষণা দিলেন লাপোর্তা। এজন্য মেসির পরিবারের অনুমতি দরকার বলেও জানিয়েছেন তিনি। সবকিছু ঠিক থাকলে বার্সার দুই কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফ ও লাসলো কুবালার পাশে মেসির ভাস্কর্য তৈরি করবে বার্সা।

একটি বইয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে লাপোর্তা বলেন, ‘মেসির ভাস্কর্য তৈরি করতে পাররে আমাদের ভালো লাগবে। বার্সার কিংবদন্তি ফুটবলারদের পাশে মেসির ভাস্কর্য দেখতে পেলে ভক্তরা খুশি হবে। বোর্ড মিটিংয়ে আমরা সহকর্মীরা সবসময়ই ভাবি, মেসির জন্য আরও বেশি কিছু করা প্রয়োজন। ক্রুইফ ও কুবালার মতো তাঁর একটা ভাস্কর্য থাকলে ভালো হয়। কারণ এই দুইজনের মতো মেসিও কিংবদন্তি ফুটবলার।’

ইতোমধ্যে মেসির ভাস্কর্য্যের নকশা নিয়ে কাজ শুরু করেছে বার্সা। এখন কেবল মেসির পরিবারের সম্মতির অপেক্ষা। লাপোর্তা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। মেসির পরিবারের সম্মতি থাকতে হবে। আমার ভাস্কর্য নকশা হয়ে গেলে প্রস্তাব দেব। নতুন স্টেডিয়ামে বার্সায় সব কিংবদন্তির মতো মেসির ভাস্কর্য থাকলে দারুণ হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাইলফলকের পর এমবাপ্পেকে নিয়ে দুঃসংবাদ পেল ফ্রান্স

ক্রীড়া ডেস্ক    
মাদ্রিদ পৌঁছে স্ক্যান করাবেন এমবাপ্পে। ছবি: এক্স
মাদ্রিদ পৌঁছে স্ক্যান করাবেন এমবাপ্পে। ছবি: এক্স

বাছাইপর্বে ইউক্রেনকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে ২০২৬ বিশ্বকাপের মুল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে ফ্রান্স। দল জেতানোর পথে জোড়া গোল করেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ছুঁয়েছেন ৪০০ গোলের মাইলফলক। এমন দারুণ একটি ম্যাচ শেষে এই ফরোয়ার্ডকে নিয়ে দুঃসংবাদ পেয়েছে ফ্রান্স।

সাবেক ক্লাব পিএসজির মাঠে ইউক্রেনের বিপক্ষে খেলতে নেমে স্বরূপেই ছিলেন এমবাপ্পে। পুরো সময়ই মাঠে ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের আক্রমণভাগের প্রাণ। ম্যাচের পর অপ্রত্যাশিতভাবে ফ্রান্স জাতীয় দল ছেড়ে স্পেনের ফ্লাইটে উঠেছেন এমবাপ্পে।

আন্তর্জাতিক বিরতির মাঝপথে এমবাপ্পে জাতীয় দল ছেড়ে যাওয়ায় শুরুতে অবাক হয়েছিল সবাই। তবে এর পেছনের কারণ জানতেও বেশ সময় লাগেনি। ফরাসি ফুটবল ফেডারেশন জানায়, গোড়ালিতে চোট পেয়েছেন এমবাপ্পে। চোটাক্রান্ত স্থানে ফোলা ও ব্যথা থাকায় প্রধান কোচ দিদিয়ের দেশম ও মেডিকেল টিমের সিদ্ধান্তে তাঁকে রিয়ালে পাঠানো হয়েছে। মাদ্রিদ পৌঁছে আজই স্ক্যান করানোর কথা রয়েছে এমবাপ্পের।

এমবাপ্পের চোট নিয়ে অবশ্য শঙ্কার কিছু থাকছে না রিয়াল এবং ফ্রান্সের ভক্তদের জন্য। ফরাসি ফুটবল ফেডারেশনের সূত্রের বরাত দিয়ে ইএসপিএন জানিয়েছে, এমবাপ্পের চোট তেমন গুরুতর নয়। অর্থাৎ মাঠে ফিরতে বেশি সময় লাগবে না সময়ের সেরা ফরোয়ার্ডদের একজনের।

বিশ্বকাপে বাছাইপর্বে ‘ডি’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে আগামী ১৬ নভেম্বর আজারবাইজানের মাঠে খেলবে ফ্রান্স। চোট গুরুতর না হলেও সে ম্যাচে যে এমবাপ্পে খেলতে পারবেন না সেটা নিশ্চিত। সেরা তারকা না খেললেও মাথা ব্যথার কারণ নেই ফ্রান্সের। মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়ায় ম্যাচটি কেবলমাত্র নিয়মরক্ষার হয়ে দাঁড়িয়েছে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের জন্য।

৫ ম্যাচে ৪ জয়ের পাশাপাশি একটিতে ড্র করেছে ফ্রান্স। ইউরোপিয়ান জায়ান্টদের সংগ্রহ ১৩ পয়েন্ট। ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের দুইয়ে অবস্থান করছে আইসল্যান্ড।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৪২ বলে ১৪৪ করে রোহিত-পন্তের পাশে সূর্যবংশী

ক্রীড়া ডেস্ক    
৩৩ বলে সেঞ্চুরি করেন এই ব্যাটার। ছবি: এক্স
৩৩ বলে সেঞ্চুরি করেন এই ব্যাটার। ছবি: এক্স

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) সবশেষ আসরে নিজের মারকুটে ব্যাটিং স্বামর্থ্যের প্রমাণ দেন বৈভব সূর্যবংশী। মাত্র ১৪ বছর ৩২ দিন বয়সে গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে ৩৫ বলে ১০১ রান করে আইপিএল ইতিহাসে জায়গা করে নেন এই ব্যাটার। এবার এশিয়া কাপ রাইজিং স্টার টুর্নামেন্টেও ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন সূর্যবংশী। বসেছেন রোহিত শর্মা ও ঋষভ পন্তের পাশে।

টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী দিনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামে ভারত ‘এ’ দল। দোহার ওয়েস্ট অ্যান্ড পার্ক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ২৯৭ রান তোলে তারা। দলকে বিশাল পুঁজি এনে দিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন সূর্যবংশী। মাঠ ছাড়ার সময় তাঁর নামের পাশে জ্বলজ্বল করছিল ১৪৪ রান। এই ব্যাটারের ৩২ বলের ইনিংসটা সাজানো ১৫ ছক্কা ও ১১ চারে।

ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে এটা টি-টোয়েন্টিতে যৌথভাবে দ্বিতীয় দ্রুততম শতক। সমান বলে সেঞ্চুরি হাঁকান রোহিত ও পন্ত। দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটি অভিষেক শর্মা ও উর্ভিল প্যাটেলের দখলে। তাঁরা দুজনেই ২৮ বলে সেঞ্চুরি করেছেন।

রেকর্ডের পরিবর্তে সূর্যবংশীর জন্য দিনটা বাজে যেতে পারতো। শূন্য রানেই জীবন পান তিনি। নতুন জীবন পেয়ে এর সঠিক ব্যবহারই করেছেন। তাঁকে আউট করতে না পারার সুযোগ হাতছাড়া করার চড়া মূল্য দিতে হয়েছে আরব আমিরাতের বোলারদের। সূর্যবংশীকে যেন বল করতেই ভয় পাচ্ছিলেন আরব আমিরাতের বোলাররা।

রেকর্ড সেঞ্চুরি করার পথে মাত্র ১৭ বলে ফিফটি করেন সূর্যবংশী। তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারের ঘরে যেতে খেলেন ৩৩ বল। মুহাম্মাদ আরফানের বলে বাউন্ডারি মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সূর্যবংশী। টি–টোয়েন্টিতে এটাই তাঁর সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। স্ট্রাইকরেট ৩৪২।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হামজার যে গোল নিয়ে শোরগোল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ২১: ৩৪
নেপালের বিপক্ষে হামজার দুটি গোলই ছিল চোখে লেগে থাকার মতো। ছবি: আজকের পত্রিকা
নেপালের বিপক্ষে হামজার দুটি গোলই ছিল চোখে লেগে থাকার মতো। ছবি: আজকের পত্রিকা

হামজা চৌধুরী কি কখনো গোলকিপিং করেছেন? হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন, গতকাল নেপালের বিপক্ষে ম্যাচটি দেখলে হয়তো বুঝতে পারবেন। ঘড়ির কাটায় ৯০ মিনিটের খেলায় খেলেছেন ৮০ মিনিটের মতো। মাঠের এপাশ থেকে ওপাশ—সর্বত্র নিংড়ে দিয়েছেন নিজেকে।

সাম্প্রতিক সময়ে গোল বাংলাদেশের কাছে সোনার হরিণের মতো। কোনো ম্যাচের আগে অবধারিতভাবে ফুটবলারদের কাছে প্রশ্ন থাকে, গোল করা নিয়ে কীভাবে কাজ করছেন। হামজা ফরোয়ার্ড নন, তবু তাঁর দিকে একই প্রশ্ন না করে উপায় ছিল না। নিজের স্বভাবজাত হাসিতে তখন হামজা বলে দেন, ‘চেষ্টা করব’। সেই চেষ্টার ফসল এতটাই যে, ৬ ম্যাচ খেলে নামের পাশে ৪ গোল যোগ করে ফেলেছেন তিনি। আর গতকাল যা করলেন, রীতিমতো অবিশ্বাস্য, অভাবনীয় ও অকল্পনীয় কোনো বিশেষণেই তা ফেলা যায় না।

ওভারহেড কিকে গোল—তা-ও একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের কাছ থেকে। বাংলাদেশ কেন, ফুটবল দুনিয়াতেই তা বিরল। এমনই এক গোল শোরগোল ফেলে দিয়েছে। আবার সেটাও ঠিক তেমন মুহূর্তে, যেমন পরিস্থিতিতে এমন গোল করার জন্য বাংলাদেশের আছেন এক হামজাই! যাঁর খেলায় মিশে আছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের ছোঁয়া।

জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধে পিছিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরাতে হামজার দিকেই তাকিয়ে ছিলেন সবাই। বিরতির পর প্রথম মিনিটেই কাটা দিয়ে উঠল গায়ের লোম। জামালের বাড়ানো ভলি পেয়ে কোনো বিকল্প চিন্তা না করে হাওয়ায় ভেসে গেলেন হামজা। দুই পা ছড়িয়ে অসাধারণ এক সামঞ্জস্যে কোনাকুনিভাবে বল ফেললেন জালে।

গ্যালারি থেকে কেউ গর্জে উঠলেন, কেউবা হতবাক হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। ঠিক এর চার মিনিট পর আবারও হামজা জাদুতে মুগ্ধ হতে হয়। পেনাল্টিতে এমন একটি শট নিলেন, যা আপনি ইউরোপিয়ান বা লাতিন ফুটবলে দেখে অভ্যস্ত। পানেনকা শটে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে বোকা বনে যেতে দেখাও এক অন্য রকম প্রশান্তির। হামজা সেটাই করেছেন।

বাংলাদেশের জার্সিতে তাঁর প্রথম গোলটি এসেছিল হেড থেকে। এরপর হংকংয়ের বিপক্ষে ফ্রি কিক থেকে গোল। ওভারহেড–পানেনকা সবকিছুতেই যেন পটু। রক্ষণের কথা নিশ্চয় আলাদা করে না বললে নয়। আক্রমণ প্রতিহত করা থেকে শুরু করে ওপরে ওঠার কাজটা এই মুহূর্তে তাঁর চেয়ে ভালো আর কেইবা পারে। বাংলাদেশ দলে শুধু গোলকিপিং করাটাই বাকি রেখেছেন তিনি। করতে দিলে হয়তো হতাশ করবেন না। ঠিক যেমন নেপাল কোচ হরি খড়কা বলছিলেন, ‘এটা তো কোচের কৌশল (হামজাকে তুলে নেওয়া)। তবে আমি মনে করি, যদি হামজা খেলত, তাহলে আমাদের দ্বিতীয় গোল পাওয়াটা কঠিন হতো।’

নিজের একক নৈপুণ্য দেখানোর পরও ২–২ গোলের ড্রয়ে হামজা আড়াল করতে পারলেন না হতাশা, ‘আবারও হতাশাময় এক সমাপ্তি, যে ম্যাচটিতে আমাদের জেতা উচিত ছিল। আপনাদের ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য সব সময়ের মতোই ধন্যবাদ। একতাবদ্ধ থাকতে হবে আমাদের। সবাইকে মিলে তৈরি হতে হবে বড় ম্যাচের জন্য।’

সেই বড় ম্যাচটা ১৮ নভেম্বর জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে। কোচ হাভিয়ের কাবেরাকে কৌশল সাজাতে হবে হামজাকে কেন্দ্র করেই। কিন্তু নিজের কাজটা ঠিকঠাকমতো কি করতে পারছেন তিনি? নেপালের বিপক্ষে প্রথমার্ধে রাকিব হোসেনকে বাঁয়ে ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে ডানে খেলান তিনি। দুজন কোনোভাবেই একে অপরের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছিলেন না। দ্বিতীয়ার্ধে তাঁদের সহজাত পজিশনে ফেরানোর পরই বদলে যেতে শুরু করে বাংলাদেশের আক্রমণভাগের চিত্র।

সাংবাদিকদের জন্য বরাবরই অনুশীলন দরজা বন্ধ রাখেন কাবরেরা। অথচ শেষ মুহূর্তে নেপালকে সমতায় ফেরানো গোল করা অনন্ত তামাং খেলেন বাংলাদেশি ক্লাব ফর্টিস এফসির হয়ে। সেই ফর্টিসের বিপক্ষেই কিছুদিন আগে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। দিনশেষে কাবরেরা কী পেলেন, তা আর বলে দেওয়ার কিছু নেই। আগামীকাল আসা ভারতীয় দলের বিপক্ষে কী কৌশল সাজাবেন, সেটাই দেখার অপেক্ষা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত