Ajker Patrika

পড়তে পড়তেই সফল তিনি

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
Thumbnail image

সংসারে নিত্যযাপনের কষ্ট ছিল। ছিল একটু ঝড়-বাদলে সপ্তাহখানেকের জন্য বিদ্যুৎ না থাকা। আইপিএসের ব্যাকআপের চিন্তাও করা যেত না। ইন্টারনেট বারবার বলত, লোডিং লোডিং...। লাইন পেতে উঠতে হতো টিনের চালে। মানুষ হাসত। বলত, এই ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে। এই নষ্ট হয়ে যাওয়া ছেলেটির নাম শামীম আহমেদ। মুলাদী টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে ডিপ্লোমা পড়তে পড়তেই তিনি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। মাসে আয় করছেন ৫০ হাজার টাকার বেশি। শামীমের বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার তুলাতলী গ্রামে।

গোসাইরহাট থেকে মিনিট বিশেক গেলে শামীমের গ্রামের বাড়ি। রাস্তা পাকা হলেও গ্রামটি প্রত্যন্ত। একটু বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ থাকে না। ঝড়-বাদল হলে সাত দিনের আগে বিদ্যুতের দেখা পাওয়া যায় না। কয়েকজন মিলে ২০ হাজার টাকা ব্যয় করে লাইন এনেছেন বটে; তার গতি খুব ধীর। ঘরে ডেটা ব্যবহার করা যায় না, রাস্তায় যেতে হয়। টিনের চালে উঠলে সবচেয়ে ভালো। এমনই এক গ্রামে বসে নিজের ভাগ্যবদলের চেষ্টা করে গেছেন শামীম।

যেভাবে শুরু
মোবাইল ফোন কিংবা কম্পিউটারের মতো ডিভাইসের প্রতি একধরনের আকর্ষণ ছিল শামীমের। বলা চলে, আসক্তিই ছিল। ২০১৫ সালের দিকে ফেসবুকে ছবি আপলোড করতে করতেই জানতে পারেন, ফটোশপ ব্যবহার করে ছবি সম্পাদনা করা যায়। ২০১৭ সাল পর্যন্ত শেখেন ফটোশপের কাজ। ওই বছরের মাঝামাঝিতে শুরু হয় তাঁর ফ্রিল্যান্সিং জীবন। লিংকডইনের মাধ্যমে পাওয়া প্রথম সেই কাজের পারিশ্রমিক ছিল ২৫ ডলার। সেটাও ছিল ছবি সম্পাদনার কাজ, এক আমেরিকান বায়ারের। নিজের অ্যাকাউন্ট না থাকায় মামার অ্যাকাউন্টে নিয়েছিলেন সেই টাকা। শামীম মনে করলেন, এটিই হবে তাঁর ধ্যানজ্ঞান। সে সময় তিনি মাধ্যমিক স্কুলে পড়তেন।

শামীমের সেবা
পোস্টপ্রোডাকশন সেক্টরে শামীমের কাজকারবার। এর মধ্যে আছে ক্লিপিং পাথ, ফটো রিটাচ, মাস্কিং, কালার কারেকশন, হেডশর্ট রিটাচ, প্রোডাক্ট রিটাচসহ ২০টির বেশি কাজ। মূলত কাজ করতে করতেই শিখেছেন শামীম। প্রয়োজনে সহায়তা নিয়েছেন গুগল কিংবা ইউটিউবের।

কম্পিউটারের প্রতি ভালোবাসা আর বাড়ি ছাড়তে হবে না—এ দুটি কারণ ছিল শামীমের ফ্রিল্যান্সিং বেছে নেওয়ার নেপথ্যে। এখন বাড়িতে বসেই প্রায় ৪০টি দেশে নিজের সেবা বিক্রি করছেন তিনি। দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কানাডা, ফ্রান্স, দুবাই, নিউজিল্যান্ড। মার্কেটপ্লেসের বাইরে শামীমের কাজ। এই কাজের মাধ্যম হলো ই-মেইল, লিংকডইন, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপ। অবশ্য তাঁর একটি ওয়েবসাইটও রয়েছে।

কটাক্ষে মন খারাপ
মাঝখানে কিছুদিন কাজ ছিল না শামীমের। পরিবার ও এলাকার মানুষ সেই সময় তাঁকে মুদিদোকান দিতে বলত। মন খারাপ হলেও শামীম নিজের সম্ভাবনার কথা ভেবেছেন সব সময়। পাত্তা দেননি অন্যের কথায়। আনন্দের ব্যাপার হলো, ধীরে ধীরে সবার নেতিবাচক ধারণা বদলে দিতে পেরেছেন তিনি। এলাকার মানুষ এখন তাঁকে উদ্যোক্তা হিসেবে চেনে। বড় বিষয়, এলাকার মানুষ বুঝতে পেরেছে ফ্রিল্যান্সিং একটি পেশা। আর এ পেশায় ঘরে বসে কাজ করে টাকা আয় করা যায়। নিজের টাকায় শামীম কম্পিউটারসহ প্রয়োজনীয় সব জিনিস তো কিনেছেনই, এখন পুরো পরিবার চলে তাঁর সহায়তায়।

যা ভাবছেন
নিজ এলাকায় ফ্রিল্যান্সিং শেখানোর একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করবেন বলে ভাবছেন শামীম। এতে এলাকার তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে; পাশাপাশি নিজের আয় নিয়ে যেতে চান হাজার ডলারের ওপর।

ফ্রিল্যান্সিং শিক্ষার্থীদের আয়ের মাধ্যম হতে পারে। তাতে পড়ালেখার সমস্যা হওয়ার তেমন কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন শামীম। এ জন্য পরিবারের সহায়তা দরকার। আর দরকার সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা। শামীম বলেন, ‘আমি পড়ার সময় পড়ি, অন্য সময় ফ্রিল্যান্সিং করি। তবে পরীক্ষার সময় একটু চাপ বাড়ে।’

প্রথম দিকে মানুষের কথায় শামীমের বাবা তাঁকে বেশ বকাঝকা করতেন। তবে এখন তিনি ছেলের সাফল্যে খুশি। অবশ্য শামীম জানান, এ বিষয়ে মায়ের সহায়তা ছিল আগাগোড়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত