Ajker Patrika

টেলিগ্রামে ছড়ানো হচ্ছে নারীদের গোপন ছবি-ভিডিও, ফুঁসছে চীনারা

অনলাইন ডেস্ক
অনুমতি ছাড়া যৌন কনটেন্ট শেয়ার করা টেলিগ্রামের পরিষেবার শর্ত অনুযায়ী নিষিদ্ধ। ছবি: বার্নার
অনুমতি ছাড়া যৌন কনটেন্ট শেয়ার করা টেলিগ্রামের পরিষেবার শর্ত অনুযায়ী নিষিদ্ধ। ছবি: বার্নার

টেলিগ্রামের একাধিক এনক্রিপটেড চ্যাট গ্রুপে চীনা নারীদের গোপনে তোলা যৌন নিপীড়নমূলক ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই খবর চীনের গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

চীনা ভাষার একটি টেলিগ্রাম গ্রুপের নাম ‘মাস্কপার্ক ট্রি হোল ফোরাম’। দক্ষিণ চীনের প্রভাবশালী রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সাউদার্ন ডেইলি জানিয়েছে, এই গ্রুপে এক লাখের বেশি অজ্ঞাতনামা সদস্য রয়েছেন, যাঁরা চীনসহ অন্যান্য দেশে অবস্থান করেন। পাবলিক টয়লেটসহ বিভিন্ন জায়গায় গোপন ক্যামেরা বসিয়ে নারীদের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ওই গ্রুপে শেয়ার করা হতো।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক ব্যবহারকারী তাঁদের বর্তমান বা প্রাক্তন প্রেমিকা ও নারী আত্মীয়দের ব্যক্তিগত ছবি পোস্ট করেছেন। এমনকি পিনহোল (অত্যন্ত ছোট আকারের ক্যামেরা) ক্যামেরায় গোপনে ধারণ করা ভিডিও ক্লিপ বিক্রিও করা হয়েছে।

এ ঘটনায় চীনের মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম ওয়েইবোতে তৈরি হওয়া হ্যাশট্যাগগুলো আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৭ কোটির বেশি বার দেখা হয়েছে। এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘প্রতিদিনের জীবনে গোপন ক্যামেরা এভাবে ঢুকে পড়া সত্যিই ভীতিকর।’

চীনে অশ্লীলতা আইন খুব কঠোর এবং সরকার ইন্টারনেট থেকে এমন কনটেন্ট নিয়মিত মুছে ফেলে। ফলে টেলিগ্রামে এত বড় পরিসরে এসব ছবি শেয়ার হওয়ার ঘটনা অনেককে বিস্মিত করেছে। টেলিগ্রাম চীনে নিষিদ্ধ, ফলে এটি ব্যবহারের জন্য ভিপিএন প্রয়োজন।

সাউদার্ন ডেইলির আরও তথ্যে জানা গেছে, চীনা ভাষাভাষী ব্যবহারকারীদের টার্গেট করে গঠিত এমন আরও একটি গ্রুপে সদস্যসংখ্যা প্রায় ৯ লাখ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমার প্রাক্তন প্রেমিক গোপনে আমাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি তোলে এবং আমার অনুমতি ছাড়া তা গ্রুপে পোস্ট করে। সে আমার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টও প্রকাশ করে।’ তিনি জানান, এসব গ্রুপে পোস্ট করা বার্তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যায় এবং টেলিগ্রামের সেটিংস অনুযায়ী ছবি সংরক্ষণ বা স্ক্রিনশট নেওয়া যায় না।

প্রকাশিত চ্যাট রেকর্ড অনুযায়ী, গ্রুপের ব্যবহারকারীরা পিনহোল ক্যামেরাযুক্ত ধূপদানির মতো সাধারণ বস্তু বিক্রি করত। এসব বস্তু দিয়ে নারীদের ছবি বা ভিডিও গোপনে ধারণ করা হতো।

চীনের যৌন নির্যাতনবিষয়ক আইনজীবী হুয়াং সিমিন বলেন, এই ঘটনায় বহু নারীর উদ্বেগ বেড়েছে, কারণ, এ ধরনের ঘটনাগুলো এখন প্রায় সর্বত্র ঘটছে। নারীরা আইনি সুরক্ষার বিষয়ে একধরনের অসহায়ত্ব অনুভব করেন, কারণ, তাঁদের মনে হয়, এই ধরনের ঘটনার প্রতিকার পাওয়ার কোনো কার্যকর উপায় নেই।

মূল মাস্কপার্ক ফোরামটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে কয়েকটি ছোট সাব-ফোরাম এখনো সক্রিয় রয়েছে বলে জানিয়েছে সাউদার্ন ডেইলি।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে টেলিগ্রামের মুখপাত্র বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া যৌন কনটেন্ট শেয়ার করা টেলিগ্রামের পরিষেবার শর্ত অনুযায়ী নিষিদ্ধ এবং তা শনাক্ত হলেই মুছে ফেলা হয়। আমাদের মডারেটরেরা প্ল্যাটফর্মের পাবলিক অংশগুলো নিয়মিত মনিটর করেন এবং প্রতিদিন লাখ লাখ ক্ষতিকর কনটেন্ট মুছে ফেলেন, যার মধ্যে অননুমোদিত যৌন কনটেন্টও রয়েছে।’

এ ঘটনা অনেককে ২০২০ সালের দক্ষিণ কোরিয়ার বহুল আলোচিত ‘এনটিএইচ রুম’ কেলেঙ্কারির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। সে সময় টেলিগ্রামে পেইড চ্যাটরুমের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেল করে অন্তত ৭৪ নারীর যৌন কনটেন্ট সংগ্রহ করা হয়। দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং মূল অপরাধীকে ৪০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আইনজীবী হুয়াং বলেন, যাঁরা এসব ছবি পোস্ট করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে চীনের আইনে ‘অশ্লীল কনটেন্ট তৈরি, বিক্রি ও ছড়িয়ে দেওয়া’ এবং ‘অননুমোদিতভাবে বিশেষ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে আড়ি পাতার’ অভিযোগ আনা যেতে পারে। তবে এসব অপরাধের শাস্তি তুলনামূলক কম। অশ্লীল না হলে গোপনে ভিডিও ধারণের সর্বোচ্চ শাস্তি ৫০০ ইউয়ান (প্রায় ৭০ ডলার) জরিমানা এবং ১০ দিনের প্রশাসনিক আটক।

এক চীনা আইনি গবেষক বলেন, টেলিগ্রাম এনক্রিপটেড ও এসব গ্রুপ বিদেশে হোস্ট করায় এসব অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও বিচার করা কঠিন। ফৌজদারি মামলায় উচ্চমানের প্রমাণ প্রয়োজন। ফলে গোপন ছবি ছড়িয়ে দেওয়া প্রমাণের অভাবে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া যায় না।

তিনি জানান, প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের গোপন ছবি ছড়ানোর বিরুদ্ধে স্পষ্ট কোনো আইন নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত