Ajker Patrika

মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে এশিয়ায় সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ

আপডেট : ১৮ মে ২০২৪, ২১: ২২
মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে এশিয়ায় সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ

নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে (এলএমআইসি) আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন আরও বেশিসংখ্যক নারী মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। বর্তমানে ১৫০ কোটি নারী মোবাইল ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত। যা এ অঞ্চলের মোট নারীর ৬৬ শতাংশ। যেখানে ২০২৩ সালে নতুন করে ১২ কোটি নারী মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছেন। 

এশিয়ার দেশগুলোতে (ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া) লিঙ্গ-নির্বিশেষে মোবাইলের মালিকানার অনুপাত কাছাকাছি। তবে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের লিঙ্গ ব্যবধানও সবচেয়ে বেশি—৪০ শতাংশ। বাংলাদেশে পুরুষদের মধ্যে মোবাইল মালিকানার অনুপাত ৮৫ শতাংশ হলেও ইন্টারনেট ব্যবহার করেন মাত্র ৪০ শতাংশ। আর নারীদের মধ্যে ফোনের মালিকানা ৬৮ শতাংশ, কিন্তু মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেন মাত্র ২৪ শতাংশ। কিন্তু অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে লিঙ্গ ব্যবধান ভারতে ৩০ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ৮ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ৩৮ শতাংশ। 

জিএসএমএয়ের বার্ষিক ‘মোবাইল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। ১৫ মে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। 

প্রতিবেদনের এই সপ্তম সংস্করণে ১২টি এলএমআইসি দেশজুড়ে নারীদের মোবাইল ব্যবহার এবং ইন্টারনেট ডেটা ব্যবহার বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণায় নারীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের পথে বাধাগুলো খুঁজে দেখা হয়েছে এবং সেগুলো পুরুষদের সঙ্গে তুলনা করে দেখা হয়েছে। 

ইউকে ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস এবং জিএসএমএ মোবাইল ফর ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রতিবেদনটি তৈরি সহায়তা করেছে সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সি (সিডা)। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনও এতে আংশিক অর্থায়ন করেছে। 

এলএমআইসি দেশগুলোর মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য এখনো মূলত মোবাইল ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল। দেখা গেছে, ২০২৩ সালে মোট ব্রডব্যান্ড সংযোগের ৮৪ শতাংশই মোবাইল ইন্টারনেট। 

তবে, উদ্বেগের বিষয় হলো, এখনো ৭৮ কোটি ৫০ লাখ নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। এর প্রায় ৬০ শতাংশই বসবাস করেন দক্ষিণ এশিয়া এবং সাব-সাহারা আফ্রিকা অঞ্চলে। 

প্রতিবেদনে মোবাইল মালিকানা এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে লিঙ্গ ব্যবধান কমাতে, সর্বত্র নারীদের জন্য আর্থ-সামাজিক সুবিধাগুলো নাগালে আনতে অংশীজনদের উদ্দেশে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। 

২০২৪ সালের প্রতিবেদনে লিঙ্গ ব্যবধানে একটি পরিবর্তনের চিত্র উঠে এসেছে। দেখা গেছে, এলএমআইসি জুড়ে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে লিঙ্গ ব্যবধান কমে এসেছে। 

২০২৩ সালে পুরুষদের তুলনায় নারীদের মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার না করার অনুপাত ছিল ১৫ শতাংশ কম। যা ২০২২ সালে ছিল ১৯ শতাংশ। এই ব্যবধানটি কোভিড মহামারি পূর্ব স্তরে ফিরে এসেছে। ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলো এ বছরের চিত্র পাল্টে দিয়েছে। এখন নারীদের মোবাইল ইন্টারনেটে যুক্ত হওয়ার হার পুরুষদের ছাড়িয়ে গেছে। সাব-সাহারা আফ্রিকায় পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো লিঙ্গ ব্যবধান কিছুটা সংকুচিত হয়েছে। 

সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এখন ১৪০ কোটি নারী অন্তত একটি স্মার্টফোনের মালিক। অর্থাৎ ৬০ শতাংশ নারী এখন একটি স্মার্টফোন ডিভাইসের মালিক। ২০২৩ সালে স্মার্টফোনের মালিকানায় লিঙ্গ ব্যবধান ১৫ শতাংশ থেকে কিছুটা কমে ১৩ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি অবশ্য প্রাথমিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় অগ্রগতিরই প্রভাব। যা-ই হোক, এই অঞ্চলের ৪০ শতাংশ নারী এখনো স্মার্টফোনের মালিক নন। যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এ অনুপাত ৩১ শতাংশ। 

একবার কেউ একটি স্মার্টফোনের মালিক হয়ে গেলে, তাঁর সাধারণ মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়া এবং নিয়মিত ব্যবহার করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এতে বহু আর্থ-সামাজিক সুবিধাগুলো তাঁর নাগালে চলে আসতে পারে। তবে প্রায়ই মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে একই পরিসরে পুরুষদের তুলনায় নারীরা অনেক বেশি বাধার সম্মুখীন হন। 

সমীক্ষার আওতাধীন দেশগুলোতে দেখা গেছে, মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিক বাধাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ক্রয়ক্ষমতা। এটি পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। হ্যান্ডসেটের ক্রয়ক্ষমতাই এখানে মুখ্য। অন্যান্য বাধার মধ্যে রয়েছে—সাক্ষরতা এবং ডিজিটাল দক্ষতা। 

এ ছাড়া বেতন বা মজুরির ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য, কম কর্মসংস্থানের হার এবং শিক্ষার সুযোগের মতো কারণগুলো নারীদের জন্য এসব বাধা অতিক্রমে বিশেষভাবে চ্যালেঞ্জিং হয়ে রয়েছে। এই বাধাগুলোর বাইরে নিরাপত্তা উদ্বেগও নারীদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। 

স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সম্পর্কিত জাতিসংঘের ১৭টি এসডিজি লক্ষ্য অর্জনের জন্য মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগও গুরুত্বপূর্ণ। জিএসএমএর অনুমান, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে মোবাইল মালিকানা এবং ব্যবহারে লিঙ্গ ব্যবধান মিটিয়ে আনতে পারলে আট বছরের মধ্যে মোবাইল শিল্পে অতিরিক্ত ২৩০ বিলিয়ন রাজস্ব যোগ হবে। 

এ ব্যাপারে জিএসএমএর ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির প্রধান ক্লেয়ার সিবথর্প বলেন, মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে লিঙ্গ ব্যবধান হ্রাস আশাব্যঞ্জক। কিন্তু গতি বজায় রাখার পরিস্থিতি ভঙ্গুর। আমাদের কানেক্টেড উইমেন কমিটমেন্ট ইনিশিয়েটিভ দেখায় যে সুস্পষ্ট লক্ষ্য স্থির করা এবং তথ্য নেওয়া, সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ—এ ক্ষেত্রে একটি পরিবর্তন আনতে পারে। ২০১৬ সাল থেকে অপারেটররা সম্মিলিতভাবে ৭ কোটির বেশি নারীর কাছে মোবাইল ইন্টারনেট এবং মোবাইল মানি সার্ভিস হাতের নাগালে পৌঁছে দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত