Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

‘আমাদের সেভাবে সম্মান দেওয়া হয়নি’

৫ গোল করে অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকিতে সেরা উদীয়মান তারকা আইরিন রিয়া। ছবি: সৌজন্য

ফাইনালের সম্ভাবনা জাগিয়েও চীনের ডাজুতে অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকিতে ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাংলাদেশ নারী দলকে। আইরিন রিয়ার জন্য টুর্নামেন্টটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে আলাদাভাবে। ৫ গোল করে হয়েছেন আসরের সেরা উদীয়মান তারকা। আজকের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ১৭ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় শোনালেন প্রাপ্য সম্মান না পাওয়ার আক্ষেপ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনোয়ার সোহাগ

প্রশ্ন: প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপে খেলে তৃতীয় হলো বাংলাদেশ নারী দল। টুর্নামেন্টের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় হতে পারে কেমন লাগছে?

আইরিন: অনেক ভালো লাগছে। প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপে খেলে আমরা ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছি। এত বড় আসরে সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় হওয়া আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।

প্রশ্ন: চীনে যাওয়ার আগে কি এমনটা ভেবেছিলেন?

আইরিন: সেখানে যাওয়ার আগে ভাবিনি এমন পারফরম্যান্স করতে পারব। আসলে যখন নাম ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন একটু অবাকই হয়েছিলাম। আমি আশা করিনি, টুর্নামেন্টের এতো খেলোয়াড়ের ভীড়ে আমি হব সেরা উদীয়মান। এটা আমার কাছে অনুপ্রেরণার। ভবিষ্যতে চেষ্টা থাকবে নিজেকে আরও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার।

প্রশ্ন: ৫ গোলের মধ্যে কোন গোলটা আপনার কাছে প্রিয়?

আইরিন: শেষ ম্যাচে হ্যাটট্রিকটা আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিশেষ করে প্রথম গোলটি।

প্রশ্ন: হকিতে কীভাবে উঠে এলেন?

আইরিন: প্রথমে আমি ফুটবল খেলতাম। আমার উচ্চপরে এক ম্যাডাম বললেন, হকি স্টিক ধরে দেখ খেলাটা কেমন। সেখান থেকে যশোরে এক স্যারের কাছে ক্যাম্প করি। ২০২১ সালে বিকেএসপিতে ট্রায়াল দিই। প্রথমে অবশ্য ফুটবলের জন্য ট্রায়াল দিয়েছিলাম। পরে আমার উচ্চতা (৫ ফুট ৫ ইঞ্চি) দেখে স্যাররা আমাকে বলেন হকিতে ট্রায়াল দিতে।

প্রশ্ন: ফুটবল ছেড়ে হকিতে যখন এলেন তখন তো নিশ্চয়ই কথা শুনতে হয়েছিল?

আইরিন: মানুষ বলতো ফুটবল ছেড়ে হকিতে কেন এলে, হকিতে কোনো ভবিষ্যত নেই। ওখানে গিয়ে কী করব। তখন সবার কথা শুনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। বিকেএসপি থেকে চলে গিয়েছিলাম দুই মাসের জন্য। কোচ অনেক বলে কয়ে আমাকে ফিরিয়েছে। ২০২৩ সালে ভালো খেলার পর মনে হয়েছে, ভবিষ্যতে কিছু না হলেও খেলাটাকে ভালোবাসে এগিয়ে যাব।

প্রশ্ন: হকিতে নিজের ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?

আইরিন: ক্যারিয়ার গড়ার মতো এখনো কিছু বলতে পারছি না আসলে কী হবে। ফুটবলে মেয়েদের কিন্তু স্থায়ী ক্যাম্প আছে, আর্থিক ব্যবস্থা আছে। হকিতে আমরা সবাই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে অনেক কষ্ট করে এসেছি। এখনো বাসা থেকে বেতন বা কোনো কিছু দিতে গেলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের সেভাবে আর্থিক কোনো সাপোর্ট দেয়া হয়নি। ফুটবলে মেয়েরা এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করেছে, আর আমরা এশিয়া কাপে তৃতীয় হয়ে এসেছি। তবু আমাদের সেভাবে সম্মান দেওয়া হয়নি। আমার নিজ জেলা ঝিনাইদহ থেকেও কিছু করা হয়নি। ক্রীড়া সংস্থা থেকে কিছু সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে যে সম্মানটা দরকার, সেই সম্মান পাইনি।

আইরিন-২

প্রশ্ন: মেয়েদের হকি লিগ তো নিয়মিত হয় না...

আইরিন: ক্লাবগুলো যদি এগিয়ে আসে, মেয়েদের হকি লিগ হলে ভালো। আমাদের অনেক মেয়েরা খেলা ছেড়ে দিচ্ছে। মাঠ না থাকার কারণে স্কিলে কোনো উন্নতি করতে পারছে না। সেখানেই থেমে যাচ্ছে তারা। মাঠ না থাকলে হকি খেলে কি হবে। মিডিয়ার কাছে বলব যে ফুটবল বা ক্রিকেট যেভাবে তুলে ধরা হয়, আমাদের সেভাবে তুলে ধরা হয় না। বাসা থেকে বলা হয়, তোদের খেলা তো দেখতে পারি না। তোরা এতো ভালো কিছু করে আসলি, কিছুই তো জানি না।

প্রশ্ন: খেলতে গিয়ে গ্রামে কী ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন?

আইরিন: তখন আসলে সবাই কটু কথা বলত। মেয়ে মানুষ কেন খেলে। ভাইয়াও শুরুতে মানতে পারত না। আমার তো বাবা নেই। যখন ধীরে ধীরে খেলা শুরু করেছি, তখন ভাইয়ার মানসিকতা বদলাতে শুরু করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত