Ajker Patrika

অবৈধ অভিবাসী বিষয়ে কঠোর মালয়েশিয়া, ফেরত পাঠাচ্ছে বিমানবন্দর থেকেই

  • কুয়ালালামপুর থেকে ফেরত ১৩১ জনের ৯৬ জনই বাংলাদেশি।
  • বিমানবন্দরে কাগজপত্র যাচাই, সন্দেহ হলেই দেশে ফেরত।
  • বিমানবন্দরের পাশাপাশি দেশজুড়ে অভিযান।
মনজুরুল ইসলাম ঢাকা
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৫, ১০: ৫৮
কুয়ালালামপুরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৯৬ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে মালয়েশিয়া। ছবি: সংগৃহীত
কুয়ালালামপুরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৯৬ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে মালয়েশিয়া। ছবি: সংগৃহীত

মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে আরও কঠোর হয়েছে। ভিজিট ভিসায় যাওয়া সন্দেহভাজনদের কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কেএলআইএ) থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। গত সোমবার ওই বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো বিভিন্ন দেশের ১৩১ ব্যক্তির ৯৬ জনই বাংলাদেশি।

মালয়েশিয়ার বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রটেকশন এজেন্সি (বিসিপিএ) বলেছে, সঙ্গে পর্যাপ্ত অর্থ না আনা, নির্ভরযোগ্য আবাসনের প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হওয়া এবং ইমিগ্রেশন চেকপয়েন্টে সঠিকভাবে রিপোর্ট না করার কারণে ওই ১৩১ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাঁদের কেউ কেউ এক মাস থাকার কথা জানালেও সঙ্গে ছিল মাত্র ৫০০ রিঙ্গিত।

জানা গেছে, ১১ জুলাই বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১-এর গেট সি-১ থেকে সি-৩৭ পর্যন্ত বিসিপিএর নেতৃত্বে স্ক্রিনিং অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানে ৩০০ জনের বেশি যাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও কাগজপত্র যাচাই করা হয়। যাচাই শেষে ৯৬ বাংলাদেশি, ৩০ পাকিস্তানি ও ৫ ইন্দোনেশীয় নাগরিককে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ এক বিবৃতিতে বলেছে, ভুয়া নথি, অস্পষ্ট আর্থিক সক্ষমতা বা সন্দেহজনক উদ্দেশ্যে কেউ মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে চাইলে, তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ার বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রটেকশন এজেন্সি মোট ২ হাজার ৬৫৪ বিদেশি যাত্রীর কাগজপত্র যাচাই করে। তাঁদের ৯০০ জনের প্রবেশ বাতিল করা হয়, যাঁদের বড় অংশ ছিলেন বাংলাদেশি নাগরিক। তাঁরা ভিজিট ভিসায় এলেও প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল কাজ করা।

বিভিন্ন সময় ভুয়া আমন্ত্রণপত্র দেখিয়েও মালয়েশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করা হয়েছে। গত ২৪ জানুয়ারি ‘মালয়েশিয়ান ফিশারিজ অ্যাকাডেমি’-এর ভুয়া আমন্ত্রণপত্র দেখিয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে ধরা পড়েন ১২ বাংলাদেশি। প্রতিষ্ঠানটি পরে নিশ্চিত করেছে, তারা কাউকে আমন্ত্রণ জানায়নি। ১৯ ফেব্রুয়ারি ৪৫ বাংলাদেশিকে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়। তাঁরা ইমিগ্রেশন কাউন্টারে না গিয়ে বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্থানে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। পরে তাঁদের ‘নোটিশ টু লিভ’ (এনটিএল) দিয়ে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

সূত্র বলেছে, বিমানবন্দরে সন্দেহভাজন যাত্রীদের নির্দিষ্ট কাউন্টারে নিয়ে দেশটিতে প্রবেশে সহায়তা করা ‘কাউন্টার সেটিং’ চক্রে জড়িত ৫০ ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা ও চক্রের ১০ সদস্যকে ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়।

শুধু কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরেই নয়, মালয়েশিয়াজুড়ে চলছে অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযান। সম্প্রতি পাহাং রাজ্যে অভিযানে ৪৮ বাংলাদেশিসহ ১৩১ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়। এঁদের বিরুদ্ধে বৈধ পাস না থাকা, অতিরিক্ত সময় অবস্থানের অভিযোগ আনা হয়। গত ৩ জুন পেনাং রাজ্যের বায়ান লেপাস শিল্প এলাকায় নির্মাণাধীন একটি গাড়ি পার্কিং স্থানে অভিযানে ২৯৭ বাংলাদেশি শ্রমিককে আটক করা হয়। সেদিন মোট ৫২০ জনের কাগজপত্র যাচাই করে ৩১৪ জনকে আটক করা হয়। তাঁদের মধ্যে আরও ছিলেন পাকিস্তানের ১৩, মিয়ানমারের দুই, ভারতের এক এবং ইন্দোনেশিয়ার এক নাগরিক।

মালয়েশিয়ায় নির্মাণ, কৃষি ও পরিষেবা খাতে অনেক অভিবাসী শ্রমিক কাজ করেন। বাংলাদেশের অনেক শ্রমিক বৈধ ভিসা পেলেও নামসর্বস্ব কোম্পানির কারণে কাজ পান না এবং বাধ্য হয়ে অবৈধভাবে অন্যত্র কাজ নেন। ফলে তাঁরা আইনি সুরক্ষা, চিকিৎসা ও বিমার সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হন।

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, তথাকথিত ফ্রি ভিসার নামে যাঁদের পাঠানো হচ্ছে, তাঁরা মূলত বৈধ কাগজ নিয়েও অবৈধ পরিস্থিতিতে পড়ছেন। বিএমইটির ছাড়পত্র নেওয়ার পর দেখা যায়, যে কোম্পানিতে পাঠানো হয়েছে সেখানে কোনো কাজ নেই। ৫-৬ লাখ টাকা খরচ করে যাওয়া শ্রমিক বাধ্য হন অন্যত্র কাজ নিতে, যা পুরোপুরি অবৈধ।

বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, সৌদি আরবের পর মালয়েশিয়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার। কয়েক বছর পর ২০২২ সালে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুললে ওই বছর ৫০ হাজার ৯০ জন সেখানে যান। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জনে। ২০২৪ সালে ৯৩ হাজার ৬৩২ জন এবং ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত গেছেন মাত্র ৩ হাজার ৪৮৬ জন।

কর্মী পাঠানো নিয়ে নানা অনিয়মের কারণে এই শ্রমবাজার বারবার বন্ধ হয়েছে। এই অনিয়মের সঙ্গে চক্র জড়িত। জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) কয়েক সদস্য বলেন, সরকার নির্ধারিত ৮০ হাজার টাকার স্থলে কর্মীপ্রতি ৫-৬ লাখ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ৫০ জনের জায়গায় ৫০০ জন পাঠানো হচ্ছে। এতে একদিকে শ্রমিকেরা বিদেশে মানবেতর জীবনযাপন করছেন, অন্যদিকে শ্রমবাজার নষ্ট হচ্ছে।

গত বছর প্রকাশিত সিপিডির ‘একটি উন্নয়ন বয়ানের ব্যবচ্ছেদ’ শ্বেতপত্র অনুযায়ী, মাত্র দেড় বছরে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠিয়ে ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সির চক্র প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত কর্মী পাঠানোর অভিযোগও রয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত হিসেবে চার সাবেক সংসদ সদস্যের নাম এসেছে। তাঁরা হলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল, নিজাম উদ্দিন হাজারী, বেনজীর আহমেদ ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দরপত্র ছাড়াই জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের কাজ পেল দুই প্রতিষ্ঠান, এরা কারা

ট্রাকে করে ৪৩ হাজার পৃষ্ঠার নথি ইসিতে জমা দিয়েও নিবন্ধন পেল না এনসিপি

বিধি লঙ্ঘন করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেন এনসিপি নেতা

চাঁদা না দেওয়ায় মারধরের অভিযোগ বিএনপি কর্মীর বিরুদ্ধে

এনবিআর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কুৎসা, বরখাস্ত নিরাপত্তাপ্রহরী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত