Ajker Patrika

মাকে বাঁচানোর লড়াই সাকিব আল হাসানের

নাজিম আল শমষের, ঢাকা
মাকে বাঁচানোর লড়াই সাকিব আল হাসানের

পিএসসি পরীক্ষার আগপর্যন্ত নামটা তাঁর সাকিব হোসেন ছিল। ২০১৩ সালে পরীক্ষার নিবন্ধন ফরম পূরণের সময় নাম পরিবর্তন হয়ে গেল। তাঁর নতুন নাম ‘সাকিব আল হাসান’। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান তখন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বাংলাদেশের ক্রিকেটপাগল মানুষের কাছে সাকিব অনেক আগে থেকেই পরিচিত এক নাম। 

সাকিব হোসেন থেকে সাকিব আল হাসান হওয়াটা সাকিবের নিজের কারণে নয়। নওগাঁর পদ্মপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নিজ উদ্যোগে রেজিস্ট্রেশন ফরমে নামটা করে দিয়েছিলেন। জন্মনিবন্ধনে নাম সাকিব হোসেন আর রেজিস্ট্রেশন ফরমে লেখা সাকিব আল হাসান—নাম বিভ্রাটে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) সাকিবকে ভর্তি হতে লেগে গেছে দুই বছর। 

সাকিব আল হাসান হয়ে সাকিব কোনো ক্রিকেটার হননি; হয়েছেন ফুটবলার। খেলেন মোহামেডানের গোলরক্ষক পজিশনে। সাকিব সবার নজরে এসেছেন গত সপ্তাহে বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। মোহামেডানের নিয়মিত গোলরক্ষক সুজন হোসেন মাথায় চোট নিয়ে ৮৮ মিনিটে মাঠ ছাড়ার পর বদলি গোলরক্ষক হিসেবে নেমেছিলেন সাকিব। নিজেদের মাঠে ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকা বসুন্ধরা তখন মরিয়া হয়ে একের পর এক আক্রমণ করেই যাচ্ছে। অতিরিক্ত ১৮ মিনিটে তিনটি দারুণ সেভ করে কিংস অ্যারেনায় মোহামেডানকে ঐতিহাসিক এক জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন মোহামেডানের সাকিব। 

মোহামেডানের হয়ে সাকিব বদলি গোলরক্ষক হিসেবে খেলছেন তিন মৌসুম ধরে। ক্রিকেটার সাকিবকে গড়েছে যে প্রতিষ্ঠান, সেই বিকেএসপি থেকেই তাঁকে আবিষ্কার করেন মোহামেডানের সাবেক ইংলিশ কোচ শন লেন। ২০২০ সালে বিকেএসপিতে ক্যাম্প করেছিল মোহামেডান। বিকেএসপির সঙ্গে খেলেছিল কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচ। ৬ ফুট উচ্চতার সাকিবকে তখনই মোহামেডানের জন্য পছন্দ করেছিলেন শন লেন। তাঁকে তিনি নিয়ে আসেন সাদা-কালোদের ক্যাম্পে। যদিও মূল একাদশে নিয়মিত নন, খেলেছেন হাতে গোনা ম্যাচ।

বিকেএসপির বড় ভাই সাকিব যেভাবে বিশ্বের কাছে দেশকে পরিচিত করেছেন, ফুটবলার সাকিবও হতে চান দেশের গর্ব। গত সপ্তাহে মোহামেডানের ক্যাম্পে বসে আজকের পত্রিকাকে ১৯ বছর বয়সী বলছিলেন, ‘যেহেতু আমি ফুটবলের সাকিব আল হাসান, আমি চাই সাকিব ভাইয়ের মতো সবার নজর কাড়তে। ফুটবলের সাকিব হয়ে চাই কাঁপাতে!’ 

যে স্বপ্ন নিয়ে এগোচ্ছেন, সেটি পূরণে জমেছে সংশয়ের কালো মেঘও। হয়তো একদিন সফল ফুটবলার হবেন। কিন্তু নিজের সাফল্য দেখাতে হলে আগে প্রিয় মাকে তো বাঁচাতে হবে সাকিবকে। কিছুদিন আগে শরীরের দুটি ভাল্ভ নষ্ট হয়ে গেছে সাকিবের মা লেবু আরার। মাকে বাঁচাতে হলে ৩-৪ মাসের মধ্যে ভাল্ভ দ্রুত প্রতিস্থাপন করানো প্রয়োজন, লাগবে ৪-৫ লাখ টাকা। ক্লাব থেকে এরই মধ্যে কিছু টাকা পেয়েছেন। মায়ের চিকিৎসার বাকি খরচটা আসতে পারে নিজেদের সঞ্চয় থেকে। মাকে নিয়ে বলতে গিয়ে গলাটা ধরে এল সাকিবের। বললেন, ‘আমাদের পারিবারিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তবু আশাবাদী, আমরা পারব। মা-বাবা অনেক কষ্ট করেছেন। মাকে আমার সাফল্য দেখাতে চাই। তিনি যেন আমার খেলা দেখতে পারেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত