Ajker Patrika

মেসি কেন মিয়ামিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন

ভানু গোপাল রায়, ঢাকা
আপডেট : ০৮ জুন ২০২৩, ১৭: ২৪
Thumbnail image

মৌসুমের শেষে পিএসজি ছাড়বেন লিওনেল মেসি। এটা সবারই জানা ছিল। তবে জল্পনা-কল্পনা চলছিল কোথায় হবে আর্জেন্টাইন তারকার পরবর্তী ঠিকানা। সব সময় নিজের ‘ঘর’ মনে করা বার্সেলোনার সঙ্গে আল-হিলালের নামই শোনা গিয়েছিল বেশি। এই দুই ক্লাবের পাশে মিটিমিটি জ্বলছিল ইন্টার মিয়ামিরও আশার বাতি। 

শেষ পর্যন্ত সেই মিটিমিটি জ্বলা বাতিই সবচেয়ে উজ্জ্বল হলো—সেখানেই যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মেসি। অথচ ধারণা করা হয়েছিল, সাতবারের ব্যালন ডি অরজয়ী বার্সায় না গেলে যোগ দেবেন সৌদি প্রো লিগে। ইউরোপের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তো জানিয়েও দিয়েছিল, তাঁর চুক্তি নাকি হয়ে গেছে আল-হিলালের সঙ্গে। ক্যারিয়ারের গোধূলি লগ্নে নাকি ৪ হাজার ৬১৭ কোটি টাকার লোভনীয় প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছেন তিনি। 

এমন সংবাদে মেসিকে তখন ‘অর্থলোভী’ও বলেছেন অনেকে। ইন্টার মিয়ামিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সেটা মিথ্যা প্রমাণ করলেন মেসি। আর্জেন্টিনা অধিনায়ক বলেছেন, ‘যদি অর্থের বিষয় হতো তাহলে সৌদি আরব বা অন্য কোথাও যেতাম। আমার কাছে অনেক অর্থ মনে হয়েছিল। কিন্তু সত্য হচ্ছে আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছিল অন্য কোথাও যাওয়া এবং তা অবশ্যই অর্থের জন্য নয়।’ 

টাকাই যখন সব নয়, এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে মিয়ামিতেই কেন? বার্সেলোনায় যেতে পারতেন মেসি। হ্যাঁ, এটা পারতেন এবং কাতালান ক্লাবে যাওয়ার যে ইচ্ছা ছিল সেটা স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম স্পোর্ত ও মুন্দো দেপোর্তিভোকে জানিয়েছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। কিন্তু বাদ সাধে অতীতের কিছু অভিজ্ঞতা। 

মেসি বলেছেন, ‘বার্সায় ফিরতে পারার বিষয়ে সত্যি বেশ রোমাঞ্চিত ছিলাম। কিন্তু বার্সা ছাড়ার সময় যা অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা ভেবে একই পরিস্থিতিতে পড়তে চাইনি। ভয় পেয়েছিলাম যে আবারও একই ঘটনা ঘটতে পারে।’ 

মেসির এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার সঙ্গে বেতন কাঠামোর বিষয়টিও ছিল। ৩৫ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন তারকা বলেছেন, ‘গণমাধ্যমে শুনেছি বেতন সীমা নিয়ে বার্সার দেওয়া প্রস্তাব গ্রহণ করেছে লা লিগা, আমাকে ফেরানোর বিষয়ে সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু সত্যটা হচ্ছে, অনেক কিছুই ঠিকঠাক ছিল না। শুনেছিলাম আমাকে ফেরাতে ক্লাবকে খেলোয়াড় বিক্রি করতে বা পারিশ্রমিক কমাতে হবে। সত্যি বলতে এসবের মধ্য দিয়ে যেতে চাইনি, কিংবা এসব কিছুর দায় নিতে চাইনি।’ 

বিশ্বকাপ জেতাটাই শুধু বাকি ছিল মেসির, সেটিও হয়ে গেল গত বছর। ছবি: এএফপি বার্সেলোনা ছাড়া ইউরোপের অন্য ক্লাবে খেলবেন না বলেও জানিয়েছেন মেসি। ইউরোপ ছাড়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক বলেছেন, ‘ইউরোপ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা সত্য যে ইউরোপিয়ান অনেক ক্লাব থেকে প্রস্তাব পেয়েছি, কিন্তু তাতে আমি সাড়া দিইনি। কারণ, আমার পরিকল্পনায় ছিল ইউরোপে বার্সেলোনা ছাড়া অন্য ক্লাবে খেলব না।’ 

সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করেই হয়তো ইন্টার মিয়ামিকে বেছে নিয়েছেন মেসি। এখানেও যে মোটা অঙ্কের অর্থ পাবেন না, তা কিন্তু নয়। তবে অর্থের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অন্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়ও রয়েছে। যা তাঁকে ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় স্বস্তি বাড়াবে। পরিবারের সন্তুষ্টির বিষয়টিও থাকছে। গত বিশ্বকাপে নিজের আজন্ম স্বপ্ন বিশ্বকাপ জয়ের পর হয়তো চিন্তা করেছেন ক্যারিয়ারের শেষটা সুন্দর জায়গায় শান্তিতে কাটিয়ে দিতে। যেখানে পরিবারের ভালো লাগাটা প্রাধান্য পাবে। মেসির পরিবারের কাছে মিয়ামি ঠিক তেমনি এক জায়গা। যেখানে সুযোগ পেলেই ঘুরতে যান তাঁরা। 


মিয়ামির সঙ্গে চুক্তি করার কিছু কারণ—

  • মেসি বার্সেলোনায় থাকার সময়ই আর্জেন্টাইন সুপারস্টারকে ইন্টার মিয়ামিতে নেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন ডেভিড বেকহাম। সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকা বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন, প্রয়োজনে মেসিকে ক্লাবের স্টেক হোল্ডার (অংশীদার) দিতে রাজিও তিনি। সেই শর্তটি চুক্তিতে থাকতে পারে। যেটা বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে মিয়ামিতে যোগ দিতে আগ্রহী করেছে। অন্যদিকে ইংলিশ কিংবদন্তির আশা পূরণ হচ্ছে। 
  • যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য অ্যাথলেটিক’ জানিয়েছে, অ্যাপল ও অ্যাডিডাস থেকেও আয় করতে পারবেন মেসি। মেজর লিগ সকারের সঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানই চুক্তিবদ্ধ। ফলে এখান থেকে যে আয় হবে তার কিছু অংশ মেসিকে দেওয়ার আলোচনা নাকি করেছে প্রতিষ্ঠান দুটি। এটাকে কাজে লাগিয়ে দেশটিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ নিতে পারেন ‘এলএম টেন’। গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে একটি হোল্ডিং কোম্পানি চালু করেছেন মেসি।
  • কাতার বিশ্বকাপে নিজের স্বপ্নপূরণ করেছেন মেসি। তাঁর কোনো কিছুতেই আর অপূর্ণতা থাকার কথা নয়। আগামী বিশ্বকাপ যেহেতু উত্তর আমেরিকার তিন দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে হবে, ক্যারিয়ারের শেষ দিকে আরেকটি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগটা তিনি নিতেই পারেন। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর পরের বিশ্বকাপে খেলার আগ্রহও প্রকাশ করেছেন তিনি। আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনিসহ তাঁর সতীর্থরাও পরের বিশ্বকাপে তাঁকে মাঠে দেখতে চান। সেই হিসেবে আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশের সঙ্গে মাঠ চেনার কাজটা করতে পারেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত