Ajker Patrika

সেই ‘নিষিদ্ধ’ সাগরিকাই সেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২২ জুলাই ২০২৫, ১২: ৪৭
নারী অনূর্ধ্ব-২০ সাফে বাংলাদেশ-নেপাল অলিখিত ফাইনালে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেলেন মোসাম্মৎ সাগরিকা (১০ নম্বর জার্সি)। ছবি: বাফুফে
নারী অনূর্ধ্ব-২০ সাফে বাংলাদেশ-নেপাল অলিখিত ফাইনালে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেলেন মোসাম্মৎ সাগরিকা (১০ নম্বর জার্সি)। ছবি: বাফুফে

শিরোপা জিততেই হবে, এমন দর্শন লালন করেন না বাংলাদেশ নারী ফুটবলের কোচ পিটার বাটলার। ঢাকায় অনুষ্ঠিত মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁর মুখে ছিল একই কথা—খেলোয়াড়দের পর্যাপ্ত ‘গেম টাইম’ দিতে চাই। বাটলার তাঁর কথা রেখেছেন। প্রতি ম্যাচেই খেলিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন একাদশ। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কী পেলেন বাংলাদেশ কোচ?

মোসাম্মৎ সাগরিকা যেন দিচ্ছেন জাতীয় দলে ফেরার বার্তা। প্রথম ম্যাচে হ্যাটট্রিকের পর নেপালের বিপক্ষে একটি গোল করেন তিনি। সেই ম্যাচে লাল কার্ড দেখে অবশ্য ৩ ম্যাচ নিষিদ্ধ থাকতে হয় তাঁকে। কিন্তু সেটা গোলের ক্ষুধা দমিয়ে রাখতে পারেনি। বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় নেপালের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে সেই সাগরিকা বাংলাদেশকে ভাসালেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে। টুর্নামেন্ট মোট গোল করেছেন ৮টি।

মিয়ানমারে এশিয়ান কাপ বাছাই খেলা জাতীয় দলের ৯ ফুটবলারকে রাখা হয় অনূর্ধ্ব-২০ দলে। তাঁরা যে খুব একটা নিয়মিত খেলবেন না, তা অনুমিত ছিল। তবে স্বপ্না রানীর ওপর বেশি নির্ভর করেছেন বাটলার। বিশেষ করে মিডফিল্ডের নিয়ন্ত্রণ যেন তাঁকে ছাড়া চলছিলই না। প্রথম দুই ম্যাচ ও শেষ ম্যাচ বাদে আফঈদা খন্দকারকে রাখা হয়নি শুরুর একাদশে। তাঁর পরে অভিজ্ঞ হিসেবে রক্ষণের গুরুদায়িত্ব ছিল নবিরন খাতুন ও জয়নব বিবি রিতার ওপর। নবিরনের ফুটবলের শুরুটা ফরোয়ার্ড হলেও তাঁকে সেন্টার ব্যাক পজিশনে থিতু করছেন বাটলার। জয়নবের দূরপাল্লার জোরালো শট নেওয়ার ক্ষমতা চমৎকার। পূজা দাসও ছিলেন দুর্দান্ত। রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি গোলেও রেখেছেন অবদান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় দেখায় জোড়া গোল আসে তাঁর পা থেকে।

রুপা আক্তার, রুমা আক্তার, কানন রানী বাহাদুরেরাও সুবিচার করেছেন নামের প্রতি। মিডফিল্ডে ঐশী খাতুন অনেকটা আড়ালেই থেকেছেন। রাইট উইং দিয়ে সিনহা জাহান শিখা প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ছিলেন দুর্দান্ত। কিন্তু এরপর খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায়নি তাঁকে। আক্রমণভাগে শান্তি মার্দি ও তৃষ্ণা রানী সরকার দুজনেই বাটলারের ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছেন। নেপালের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে জয়সূচক গোল করে আলো কেড়ে নেন তৃষ্ণা। সাগরিকা না থাকায় তাঁর ওপরই চাপ ছিল বেশি। পরে ভুটানের বিপক্ষে জোড়া গোল ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি গোল করেন তিনি। শান্তি বাটলারের চোখে ভবিষ্যতের সুপারস্টার। টুর্নামেন্টের শুরুতে উমেহলা মারমাকে অন্যতম সেরা প্রতিভা বলেছিলেন বাংলাদেশ কোচ। গতি দিয়ে নিজের জাত চেনালেও ফিনিশিংয়ে বরাবরই দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছেন উমেহলা, যা নজর এড়ায়নি বাটলারের।

বাটলারের হাইলাইন ডিফেন্সের কৌশলে তিন গোলরক্ষক মিলি আক্তার, স্বর্ণা রানী ও ফেরদৌসী আক্তার খুব একটা খারাপ করেননি। সব মিলিয়ে ফুটবলারেরা পা যেন মাটিতে রাখে, সেটাই প্রত্যাশা বাটলারের, ‘আমার কিছু খেলোয়াড় হঠাৎ বিশ্রামে গেলে আশপাশের লোকজনের কথা শুনে নিজেদের সুপারস্টার ভাবতে শুরু করে। তখন তারা ৪৫ গজ দূর থেকে গোল দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে ওরা শিখবে; কেউ সহজভাবে শিখবে, কেউ কঠিনভাবে। দিন শেষে এটা ব্যক্তিগত কিছু নয়, এটা একটা সম্মিলিত দলীয় প্রচেষ্টা—এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

বাটলারের কাছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ বর্তমান হলেও ভবিষ্যতের ভাবনায় রেখেছেন অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপ বাছাই। ৬-১০ আগস্ট লাওসে সেই টুর্নামেন্ট খেলবে বাংলাদেশ। স্বাগতিক লাওস ছাড়াও প্রতিপক্ষ হিসেবে আছে দক্ষিণ কোরিয়া ও পূর্ব তিমুর। এক মাসের ব্যবধানে আরও একটি ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন দেখতেই পারে বাংলাদেশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত