Ajker Patrika

২০১৪ ও ২০২২: দুই আর্জেন্টিনার পার্থক্য কোথায়

নাজিম আল শমষের, ঢাকা
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২২, ২৩: ২৭
২০১৪ ও ২০২২: দুই আর্জেন্টিনার পার্থক্য কোথায়

হাত ছোঁয়ার দূরত্বে বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটার কাছ থেকে ফিরে আসা; আট বছর আগে ব্রাজিল বিশ্বকাপে লিওনেল মেসির সেই ছবিটা ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম আইকনিক ছবিগুলোর একটি। দৃশ্যটা পাল্টাবে, নাকি নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষী হবে ফুটবল বিশ্ব, সেটা জানতে আর তিন দিনের অপেক্ষা। 

২০১৪ বিশ্বকাপে কেন স্বপ্নের ট্রফিটা ছুঁতে পারেননি মেসি, তা নিয়ে অসংখ্য বিশ্লেষণ আছে। বহুল প্রচলিত মতবাদের একটি হলো ফাইনালে দারুণ ছন্দে থাকা আনহেল দি মারিয়ার না থাকা আর গঞ্জালো হিগুয়েনের ‘বুরুচাগা’ হতে না পারা। ১৯৮৬ বিশ্বকাপকে বলা হয় ডিয়েগো ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ। কিন্তু সেবার ম্যারাডোনা পাশে পেয়েছিলেন হোর্হে ভালদানো, হোর্হে বুরুচাগার মতো পরীক্ষিত ফুটবলারদের। গ্রুপ পর্ব থেকে আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয় পর্ব পর্যন্ত টেনেছিলেন ভালদানো। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত ম্যারাডোনার ক্যারিশমা।

২০১৪ ও ২০২২-এর দুই আর্জেন্টিনার মধ্যে পার্থক্য দেখা যাচ্ছে।

ফাইনালে আবার ভালদানো-বুরুচাগায় চড়ে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনার। জার্মানির বিপক্ষে ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে যদি ফাঁকা পোস্ট পেয়েও বল জালে জড়াতে ব্যর্থ না হতেন হিগুয়েন, মেসির বুরুচাগা হতে পারতেন তিনি। মেসি হতে পারতেন ম্যারাডোনা। প্রায় একাই দলকে ফাইনালে তুলে স্বপ্নসাধ পূরণ করতে না পারায় রটে গেল, ‘মেসি একা কী করবেন!’

আট বছরের মধ্যে আর্জেন্টিনা যদি কোথাও পাল্টে যায়, কিছু যদি পরিবর্তন হয়, সেটা হলো এই কথায়। স্প্যানিশ ভাষায় ‘মেসি কে আসের সোলো!’ বাক্যটা হয়তো লিওনেল স্কালোনির কোথাও না কোথাও অবশ্যই শুনেছেন। সহকারী কোচ থেকে তাই যখন পাকাপাকিভাবে আর্জেন্টিনা দলে দায়িত্ব পেলেন, সবার আগে পরিবর্তন আনলেন দলের মানসিকতায়। সহকারী কোচ থেকে ভারপ্রাপ্ত কোচ থাকাকালীন শুরুতে কিছুদিন মেসিকে পাননি স্কালোনি। সেই সময়টা কাজে লাগালেন, তৈরি করলেন মেসিকে ছাড়াই চালিয়ে নেওয়ার মতো মোটামুটি একটা দল। ২০১৯ কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে হারার পরও তাই তরুণ সেই দলকে নিয়ে বড় কিছুর স্বপ্ন দেখেছিলেন মেসি। সেই স্বপ্নপূরণের পথে এক ধাপ দূরে পুরো আর্জেন্টিনা।

আর্জেন্টিনা ফুটবল সম্পর্কিত খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন

আট বছর আগে আলেহান্দ্রো সাবেয়ার সেই দলটার সঙ্গে কী পার্থক্য স্কালোনির এই দলটার, তা নিয়ে আলোচনা হবেই। তবে এই দলটা নিঃসন্দেহে ভয়ংকর, সেটা না লিখলেও চলছে। সাবেয়া বলতে গেলে একটা তৈরি দলই পেয়েছিলেন, যেখানে তাঁকে কাজ করতে হয়েছে শুধু রক্ষণ নিয়ে। স্কালোনির হাত ধরে হুলিয়ান আলভারেজ, এনজো ফার্নান্দেজের উত্থান, যাঁরা ভবিষ্যতে আর্জেন্টিনার কান্ডারি। তবে আর্জেন্টিনা কোচ সবচেয়ে সফল তাঁর কৌশলে। কাতার বিশ্বকাপে সবচেয়ে তরুণ কোচ হওয়ায় আধুনিক ফুটবলের দর্শনটা তাঁর ভালোই জানা। আর্জেন্টিনার লাতিন দর্শনের সঙ্গে স্কালোনি যোগ করেছেন ‘হাই কাউন্টার প্রেসিং’ ফুটবল। ছোট ছোট পাসে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জায়গা বের করা—এত দিন যে আর্জেন্টিনাকে দেখেছে ফুটবল বিশ্ব, সেই বিশ্বই দেখল স্কালোনির দল কাউন্টার অ্যাটাকেও ভয়ংকর। পেপ গার্দিওলা, ইয়ুর্গেন ক্লপরা এত দিন যে প্রেসিং ফুটবলকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, স্কালোনি সেই প্রেসিংকে দিলেন পূর্ণতা। বলের জন্য তাই এখন মেসিকে খুব বেশি নিচে আসতে হয় না। ২০ সেকেন্ডের মধ্যে প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে মাঝমাঠ থেকে ফরোয়ার্ড লাইনে আক্রমণের সেতু গড়ে দেওয়ার কাজটা ফার্নান্দেজ, রদ্রিগো, দি পলরা এখন ভালোই পারেন।

আরেকটা কাজে এখনো পর্যন্ত বেশ সফল স্কালোনি—প্রতি ম্যাচে ফরমেশন নিয়ে প্রতিপক্ষকে ধাঁধায় রাখা। রিয়াল মাদ্রিদে কোচ থাকার সময় একেক ম্যাচে একেক একাদশে দলকে খেলাতেন তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ বিজয়ী কোচ জিনেদিন জিদান। শুধু এক ম্যাচ বাদে সেমিফাইনাল পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচে ভিন্ন পাঁচ একাদশকে খেলিয়েছেন স্কালোনি। প্রতি ম্যাচেই পাল্টেছেন ফরমেশন। নেদারল্যান্ডসের উইং নির্ভর আক্রমণকে ঠেকালেন পাঁচ ডিফেন্ডারকে খেলিয়ে। ক্রোয়েশিয়ার শক্তিশালী মাঝমাঠ তাল হারাল স্কালোনির ৪-৪-২ ফরমেশনে। ফাইনালে খেলে স্কালোনি ছুঁয়েছেন সাবেয়াকে। বিশ্বকাপজয়ী কোচ সেজারে লুইস মেনোত্তি ও কার্লোস বিলার্দো হতে স্কালোনির অপেক্ষা মাত্র এক ম্যাচের।

বিশ্বকাপ ফুটবল সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত