Ajker Patrika

স্মরণীয় এক বিশ্বকাপই এবার খেলেছে আফগানরা

ক্রীড়া ডেস্ক
স্মরণীয় এক বিশ্বকাপই এবার খেলেছে আফগানরা

হার দিয়ে শুরু, হার দিয়ে শেষ-আফগানিস্তানের ২০২৩ বিশ্বকাপ যাত্রার সারমর্ম এটাই। সেমিফাইনাল তারা খেলতে পারেনি ঠিকই। তবে মনে রাখার মতো এক বিশ্বকাপ ক্রিকেট বিশ্বকে উপহার দিয়েছে আফগানরা। নিজেদের তৃতীয় বিশ্বকাপে খেলতে এসেতিন বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে হাশমাতুল্লাহ শাহিদীর আফগানিস্তান। 

২০২৩ বিশ্বকাপ খেলতে আসার আগে আফগানিস্তানের বিশ্বকাপ রেকর্ড ছিল তুলনামূলক বিবর্ণ। ২০১৫ ও ২০১৯-নিজেদের প্রথম দুই বিশ্বকাপ মিলে আফগানরা ১৫ ম্যাচ খেলে জিতেছিল ১ ম্যাচ। এবারের বিশ্বকাপের শুরুটাও হয়েছিল বাজেভাবে। ধর্মশালায় নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে ৬ উইকেটে হেরেছিল আফগানরা। সেই ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং পাওয়া আফগানিস্তানের স্কোর ছিল ২ উইকেটে ১১২ রান। সেখান থেকে মারাত্মক ধসে ১৫৬ রানে অলআউট হয়ে যায় শাহিদীর দল। ১৫৭ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশ হেসেখেলে ৯২ বল আগেই তাড়া করে ফেলে। 

প্রথম ম্যাচের ব্যাটিং বিপর্যয় আফগানরা কাটিয়ে ফেলে দ্রুতই। দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে আফগানরা করেছে ২৭২ রান। তবে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মার ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে তা ম্লান হয়ে যায়। টানা দুই ম্যাচ বড় ব্যবধানে হারা আফগানরা চমক দেখায় পরের ম্যাচেই। দিল্লিতে ইংল্যান্ডকে ৬৯ রানে হারিয়ে এবারের বিশ্বকাপের প্রথম অঘটন ঘটায় আফগানরা। ব্যাটিং-বোলিংয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করে আফগানিস্তান। যেখানে মার্ক উডকে বোল্ড করে আট বছর পর বিশ্বকাপে আফগানদের অধরা জয় এনে দেন রশিদ খান। 

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৯ রানে জিতে এবারের বিশ্বকাপে প্রথম অঘটন ঘটিয়েছে আফগানিস্তান। ছবি: এএফপি ইংল্যান্ডকে হারানোর পর অবশ্য নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিং বিপর্যয় হয়েছে আফগানিস্তানের। চেন্নাইতে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামা নিউজিল্যান্ড ২৮৮ করলে আফগানরা গুটিয়ে যায় ১৩৯ রান। ১৪৯ রানে হারা আফগানদের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু এরপর থেকেই। প্রথম দুই বিশ্বকাপে জয় যেখানে আফগানদের কাছে ছিল ‘সোনার হরিণ’, তারাই করে ফেলে জয়ের হ্যাটট্রিক। চেন্নাইতে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে হ্যাটট্রিকের শুরু। এরপর পুনে, লক্ষ্ণৌতে শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হেসেখেলে জয় পায় আফগানরা। তাতে রানরেট মাইনাসে থাকলেও আস্তে আস্তে উন্নতি করে সেমির দৌড়ে টক্কর দিতে থাকে আফগানরা। 

এবারের বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের ব্যাটিংয়ে উন্নতি চোখে পড়ার মতো। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাকের তালিকায় ১০ ও ১৫ নম্বরে আছেন ইব্রাহিম জাদরান ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই। জাদরান ৯ ম্যাচে ৪৭ গড়ে ৩৭৬ রান করেছেন ইব্রাহিম। আফগানদের বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম সেঞ্চুরিও এসেছে ইব্রাহিমের ব্যাট থেকে। মিডল অর্ডার ব্যাটার ওমরজাই ৯ ম্যাচে ৭০.৬০ গড় ও ৯৭.৭৬ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৩৫৩ রান। উদ্বোধনী জুটির হিসেব করলে এখানে সবচেয়ে বেশি রান করেছে আফগানরা। ৯ ম্যাচে ৫০.৬৬ গড়ে ৪৫৬ রান যোগ করেছেন দুই আফগান ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। দুইবার সেঞ্চুরি পেরিয়েছে আফগানদের উদ্বোধনী জুটি। যেখানে পাকিস্তানের দেওয়া ২৮৩ রানের লক্ষ্যে উদ্বোধনী জুটিতেই আফগানরা করে ফেলে ১৩০ রান। এটাই আফগানদের জয়ের ভিত্তি তৈরি করে দেয়। যে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে আগের সাত বারের দেখায় কোনো জয় পায়নি আফগানরা, সেখানে বিশ্বকাপেই আফগানরা পায় প্রথম জয়ের দেখা। আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচেও উদ্বোধনী জুটিতে গুরবাজ, জাদরান যোগ করেন ১১৪ রান। 

২০২ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটি গড়ে আফগানিস্তানের থেকে ম্যাচ কেড়ে নিয়েছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও প্যাট কামিন্স। ছবি: এএফপি উদ্বোধনী জুটির পাশাপাশি মিডল অর্ডারও দারুণ খেলেছে আফগানিস্তান। চতুর্থ উইকেট জুটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১৪ রান করেছে আফগানরা। ৪ ম্যাচে ১৫৭ গড়ে ওমরজাই ও শাহিদী যোগ করেছেন ৩১৪ রান। ভারত ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুইবার তাঁদের (ওমরজাই ও শাহিদী) জুটি সেঞ্চুরি পেরিয়েছে। যার মধ্যে লঙ্কানদের বিপক্ষে ওমরজাই ও শাহিদী ১১১ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটি গড়ে আফগানদের ৭ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন। তাঁদের ৫২ রানের জুটিতে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও আফগানিস্তান পেয়েছে ৭ উইকেটের জয়। এবার আফগানরা জিতেছে ১১১ বল হাতে রেখে। 

ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি আফগানিস্তানের স্পিন ত্রয়ী মুজিব উর রহমান, রশিদ, মোহাম্মদ নবী দারুণ বোলিং করেছেন। আফগানদের মধ্যে এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১১ উইকেট নিয়েছেন রশিদ। নবী ও মুজিব নিয়েছেন ৮টি করে উইকেট। পেসার নাভিন উল হকও নিয়েছেন ৮ উইকেট। শেষ দুই ম্যাচে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শেষ হলেও আফগানিস্তান একেবারে বাজে পারফরম্যান্স করেনি। বিশেষ করে ৯১ রানে ৭ উইকেট ফেলে দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে দারুণভাবে চেপে ধরেছিল আফগানরা। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল জোড়া জীবন না পেলে ম্যাচের ফল অন্যরকম হতেও পারত। ২৯১ রান করার পর বড় ব্যবধানে জিতলে আফগানিস্তানের নেট রানরেটেও বাড়ানোর সুযোগ ছিল। গতকাল আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে অবাস্তব এক সমীকরণ ছিল সেমিফাইনালে ওঠার। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪৩৮ রানে হারাতে হতো সেমিতে উঠতে হলে। অবাস্তব সমীকরণ মেলানো দূরে থাক, আফগানরা হেরেছে ৫ উইকেটে। তবু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৪৪ রান করেছে আফগানরা। যেখানে ৯৭ রানে অপরাজিত থেকে ইনিংস শেষ করায় আক্ষেপটা রয়েই গেছে ওমরজাইয়ের। কে বলতে পারে, হয়তো এবারের বিশ্বকাপই সামনে আইসিসি ইভেন্টে দারুণ কিছু করতে আফগানদের অনুপ্রাণিত করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

কারাগারে কয়েদিদের সঙ্গে আ.লীগ নেতাদের হাতাহাতির অভিযোগ

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত